• জাতীয়

    স্পাইডারম্যানদের’ ভয়ে রাজধানীবাসী

      ঢাকা অফিসঃ ২৬ জানুয়ারি ২০২৩ , ৩:১৫:৫৫ প্রিন্ট সংস্করণ

    প্রতীকী ছবি

     

    ‘স্পাইডারম্যান’ (মাকড়সা-মানব) হিসেবে মাকড়সার মতো দেয়াল ও ভবনের পাইপ পেয়ে উঠে যেতে পারেন বলে তাঁর এই পরিচিতি।

    অবশ্য পুলিশের চোখে ইসমাইল একজন পেশাদার চোর। ঢাকায় যেসব চোর গ্রিল কেটে চুরিতে সিদ্ধহস্ত, তাঁদের একজন ইসমাইল। তাঁর দলে ২০ জন সদস্য রয়েছেন। এঁদের বেশির ভাগ তথ্যদাতা হিসেবে কাজ করেন। তথ্যের ভিত্তিতে ইসমাইল নিজের শাগরেদদের নিয়ে চুরি করেন।

    ঢাকায় ইসমাইলের মতো কয়েকজন গ্রিলকাটা চোরকে গ্রেপ্তার ও তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানিয়েছে, চোররা বেশি সক্রিয় থাকে বড় ছুটির সময়। এই সময় সাধারণত মানুষ বাসা খালি রেখে বেড়াতে যায়। কোন বাসা খালি, তা চোরেরা আন্দাজ করে বাতি দেখে। কোনো বাসায় যদি সন্ধ্যার সময় বাতি না জ্বলে, তাহলে চোররা ধরে নেয় বাসাটি খালি।

     

     

    রাজধানীবাসীর জন্য গ্রিলকাটা চোরেরা এখন বড় আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, এ ধরনের চুরি বাড়ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) হিসাবে, ২০২২ সালে ঢাকায় বাসাবাড়িতে ৭১৩টি সিঁধেল চুরির মামলা হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ২৩ শতাংশ বেশি। উল্লেখ্য, গ্রিল কেটে চুরির ঘটনাগুলোকেই সিঁধেল চুরি হিসেবে তালিকাভুক্ত করে পুলিশ।

    এদিকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মামলার চেয়ে প্রকৃত চুরির ঘটনা অনেক বেশি। কারণ, অনেক ক্ষেত্রেই চুরির ঘটনায় ভুক্তভোগীরা মামলার ঝামেলায় যেতে চান না। মামলা করলে মালামাল উদ্ধার হবে, সেই আশাও অনেকের নেই। কারও কারও অভিযোগ, পুলিশ চুরির মামলায় তদন্তে আগ্রহ দেখায় না। চোরদের শাস্তি নিশ্চিত করতে লেগে থাকে না। অনেক ক্ষেত্রে তদন্ত না করে মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। ফলে একই চোরেরা বছরের পর বছর চুরি করে যায়।

    ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, চুরির ঘটনা পুলিশ তদন্ত করতে চায় না, এটা ঠিক নয়। মামলা হলে তদন্ত হবে। দীর্ঘদিন ধরে মামলা তদন্ত করেও প্রমাণ করা না গেলেই শুধু চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়।

    পুলিশ জানিয়েছে, ‘স্পাইডারম্যন’ ইসমাইল জামিনে বেরিয়ে গেছেন। দুই শাগরেদসহ ইসমাইলকে গত সেপ্টেম্বরে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। কারণ ছিল, ইসমাইল গত বছরের এপ্রিলে ঢাকার ইস্কাটনে ১০ তলা ভবনের নবম তলায় উঠে গ্রিল কেটে সাড়ে ১২ লাখ টাকার মালামাল চুরি করেছিলেন। বাসাটির রান্নাঘরের গ্রিল কেটে ভেতরে ঢোকেন।

    জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিএমপির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ইসমাইল অত্যন্ত চতুর। চুরির সময় তিনি মুঠোফোন বন্ধ রাখেন, যাতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে তাঁকে শনাক্ত করা না যায়। তিনি থাকতেন কেরানীগঞ্জে। সেখান থেকে ঢাকায় এসে চুরি করতেন। জামিনে বেরিয়ে এখন ইসমাইল কোথায় আছেন তা জানাতে পারেননি পুলিশ কর্মকর্তারা।

    গ্রিল কেটে চুরি করতে গিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও ঘটছে। ৯ জানুয়ারি ঢাকার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়ায় একটি কারখানায় গ্রিল কেটে চুরি করতে গিয়েছিলেন হানিফ নামের এক ব্যক্তি। পুলিশ বলছে, চুরিতে বাধা দেওয়ায় তিনি নিরাপত্তাকর্মী হাশিমকে খুন করে পালান। এ ঘটনায় পুলিশ হানিফকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি দিনে ফেরিওয়ালা সেজে চুড়ি, ফিতা ও প্রসাধনী বিক্রি করার আড়ালে ঘুরে ঘুরে কোন ভবনে চুরি করা যায়, তা ঠিক করতেন। রাতে বাসা, অফিস ও কারখানায় গ্রিল কেটে অথবা ভেঙে চুরি করতেন।

    আরও খবর

    Sponsered content