রাজনীতি

থামছে না জাতীয় পার্টির নাটক

  প্রতিনিধি ২০ নভেম্বর ২০২৩ , ৭:১৯:৩৭ প্রিন্ট সংস্করণ

নীলাকাশ টুডে

নির্বাচন মানেই জাতীয় পার্টির নাটকীয়তা। জাতীয় সংসদ নির্বাচন এলেই বড় বড় রাজনৈতিক দলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে দলটি। কখনো আওয়ামী লীগের সঙ্গে, কখনো বিএনপির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা নিয়ে জাপার অভ্যন্তরে রশি টানাটানি নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর শেষ পর্যন্ত যেদিকে বেশি সুবিধা পাওয়া যায়, সেদিকে ঝুঁকে পড়ার রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরেও ধারাবাহিক নাটকীয়তা চলছে দলটিতে। প্রথমত, রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের নেতৃত্বে দলীয় বিভক্তি এখনো মেটেনি। এর মধ্যে রওশনপন্থিরা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিলেও আরেক পক্ষের অবস্থান এখনো অস্পষ্ট। যদিও দলের অধিকাংশ এমপি ও শীর্ষ নেতা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পক্ষে।

’৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এরশাদের পতন হলেও ১৯৯১ সালের নির্বাচন থেকেই জাপা সংসদে প্রতিনিধিত্ব করে আসছে। রাজনীতিতে তারা কখনো বিএনপি, কখনো আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট গড়েছে।

দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জীবিত থাকা অবস্থায় জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে বলা হতো, ক্ষণে ক্ষণে মত পাল্টানো এরশাদ কখন কী করবেন, তা বোঝা মুশকিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দেয় জাতীয় পার্টি। তবে মহাজোটের আনুষ্ঠানিক সমাবেশে এরশাদের যোগদানের আগ পর্যন্ত বিএনপির দাবি ছিল, জাতীয় পার্টি তাদের সঙ্গে আছে। শেষ মুহূর্তে আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে সরাসরি সমাবেশের মঞ্চে এসে শেখ হাসিনার হাত ধরে মহাজোটের ঘোষণা দেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির বাতিল হওয়া নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ, ১৪ দল, বিকল্প ধারা, এলডিপি ও জাতীয় পার্টিকে নিয়ে গঠিত হয় মহাজোট। দেশে জরুরি অবস্থা জারি ও সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে সেই নির্বাচন বাতিল করে দেয়। দুই বছর পর ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের আগে এলডিপি বাদে বাকিরা মহাজোটের আওতায় নির্বাচনে অংশ নেয়।

এরপর ২০১৪ সালে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে। তবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে সেই নির্বাচনে অংশ নেয় জাতীয় পার্টি। তার আগে অবশ্য নানা নাটকীতার জন্ম দেয় দলটি। দলীয় প্রার্থীরা শুরুতে মনোনয়নপত্র জমা দিলও পরে মহাজোট ভেঙে দিয়ে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন জাপার তৎকালীন চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। পাশাপাশি দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারেরও নির্দেশ দেন। রওশন এরশাদের নেতৃত্বে দলের নেতারা ভোটে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এর মধ্যে এরশাদ ‘অসুস্থ’ হয়ে র্যাবের তত্ত্বাবধানে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হন। তার তিনটি আসনের মধ্যে ঢাকা-১৭-এর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার হলেও লালমনিরহাট-১ ও রংপুর-৩ আসনে বহাল থাকে। এর মধ্যে রংপুর-৩ আসনে তিনি জিতে যান।

সেই সময় এরশাদ সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিতে অস্বীকার করলেও তার আগেই বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হন রওশন এরশাদ। পরে নির্ধারিত সময়ের শেষ দিনে শপথ নেন এরশাদ। তাকে মন্ত্রী মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত করে সরকার।

২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ভোটে এলে জাতীয় পার্টি আবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটভুক্ত হয়ে ভোটে যায়।

নির্বাচনের পর মহাজোট আবার ভেঙে দেওয়া হয়। সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসে জাতীয় পার্টি। টানা দ্বিতীয়বার বিরোধীদলীয় নেতা হন রওশন।

এবার ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি।

আরও খবর: রাজনীতি