স্বাস্থ্য

ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে গেছে

  বিবিসি বাংলা ৭ জুলাই ২০২৩ , ২:১১:৪৮ প্রিন্ট সংস্করণ

সংগৃহীত ছবি

 

 

ঈদের দিন সকালে জ্বর উঠে জেসমিন আক্তারের সন্তানের। এর তিন দিনের মধ্যে তিনি নিজেও জ্বরে আক্রান্ত হন। সমস্যা বাড়তে থাকায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে টেস্ট করে মা-ছেলে দুজনেরই ডেঙ্গু ধরা পড়ে।

মুগদা হাসপাতালের তৃতীয় তলায় মহিলা ওয়ার্ডে কথা হয় জেসমিন আক্তারের সাথে। সন্তানকে নিয়ে তিনি হাসপাতলে আছেন গত কয়েকদিন ধরে।

জেসমিন আক্তারের ৭ বছর বয়সী সন্তান আশরাফুল একই ভবনের উপরের তলায় শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি। আর তাদের দুজনের দেখাশোনা করছেন তার ১৪ বছর বয়সী অন্য সন্তান আশিক। আজ তার একজন ভাতিজা ভোলা থেকে আসার কথা তাদেরকে সাহায্য করার জন্য।

জেসমিন আক্তারের মতো আরো শত শত ডেঙ্গু রোগীর ভিড় মুগদা হাসপাতালে। শুধু মুগদা হাসপাতাল নয়, ঢাকার অন্যান্য হাসপাতালগুলোতেও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে।

তবে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক রোগী ভর্তি হয়েছে মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে।

 

গৃহবধূ জেসমিন আক্তারের স্বামী পেশায় গাড়িচালক। জেসমিন আক্তার বলছিলেন গত তিনদিন ধরে তিনি খেতে পারছেন না, পেট ব্যথা, আর নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে।

“সারা রাইত ঘুমাইতে পারি না, বাচ্চাদের দিয়ে চিন্তা হয়,” বলেন জেসমিন আক্তার। মাঝে মধ্যেই তিনি ছুটে যাচ্ছেন তারা অসুস্থ ছেলের কাছে।

উপরে অষ্টম তলার শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে বোঝা গেল রোগীর চাপ কতটা। মাটিতে পাতা বিছানার সারি আর রোগী ও স্বজনদের ভিড়।

সেখানে কথা হয় প্রবাসী শ্রমিক কমল উদ্দিনের সাথে যার দুই সন্তান ডেঙ্গু আক্রান্ত। ছেলে মোরসালিনের বয়স ১০ আর মেয়ে জান্নাতের বয়স চার বছর।

তিনি জানালেন, আজ তার গ্রীসে ফেরত যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু সন্তানদের অসুস্থতার কারণে সেটা পিছিয়েছেন।

মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে আজ সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ১১১ জন

এমন রোগী ক্রমাগত বেড়েই চলেছে মুগদা হাসপাতালে। চিকিৎসক বা নার্সও রোগীর ভিড়ে খুব একটা দেখা গেল না।

তবে সে সমস্যা আছে মেনে নিয়ে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোঃ নিয়াতুজ্জামান জানান রোগীর সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে সেটা ভালভাবে সামাল দেয়ার মত যথেষ্ট জনবল বা সুযোগ সুবিধা নেই।

তিনি বলেন “আমাদের ছোট্ট একটি হাসপাতাল ৫০০ শয্যার, এখানে রোগী ভর্তি রয়েছে ১ হাজারের বেশি, অধিদপ্তর থেকে চিকিৎসক পেয়েছি কিন্তু তিনটি ডেডিকেটেড ওয়ার্ড ম্যানেজ করার জন্য যে বাড়তি চিকিৎসক, নার্স কাজ করতে হচ্ছে যেটা র‍্যাশনিং করে করতে হচ্ছে। যে কারণে আমরা সেবা দিয়ে যাচ্ছি কিন্তু আমরা হিমশিম খাচ্ছি।”

গত বছর শিশু ওয়ার্ডের বাইরে একটি ওয়ার্ডেই সব রোগীর সংকুলান হয়েছিল, এবার আরেকটি ওয়ার্ড বাড়ানো হয়েছে।

 

মুগদা হাসপাতালে জুলাই মাসের ১ তারিখ থেকে ৬ তারিখ সকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৫৮৮ জন। মি. নিয়াতুজ্জামানের মতে এই সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে এবং সেটা ‘বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে গেছে’ এবং সেটা গত বছরের তুলনায়ও বেশ বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী জানা যাচ্ছে গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার সকাল ৮ টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা) সারাদেশে হাসপাতালে ডেঙ্গুর নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ৬৬১ জন যার মাঝে ৪৩৩ জন ঢাকায়, আর ২২৮ জন ঢাকার বাইরে।

বিশ্লেষকদের অনেকে আশংকা করছেন আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে আরও অবনতি ঘটতে পারে ডেঙ্গু পরিস্থিতির।

তবে মিঃ নিয়াতুজ্জামানের মতে এবারের শঙ্কার জায়গা হচ্ছে অনেকেই দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারের মত আক্রান্ত হওয়া এবং তাদের অনেকের এমন উপসর্গ দেখা দেয় যেটা ডেঙ্গুর সাধারণ উপসর্গের সাথে মিলে না।

যেমন দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া (যেমন ৩-৫ দিনেও কমে না), ওষুধ চলার পরও বমি, পেটে পানি জমে যাওয়া, বুকে পানি জমে যাওয়া, পেতে প্রচণ্ড ব্যথা, মস্তিষ্কের প্রদাহ, খিঁচুনি হওয়া, শরীরে পানি জমে যাওয়া, হাত পা ফুলে যাওয়া।

একজন প্রসূতি নারীর কথা বলছিলেন যার কোনও জ্বর ছিল না কিন্তু বমি হচ্ছিলো। গাইনি ডাক্তারের কাছে বমির প্রতিকার নিতে গেলে সেই চিকিৎসক টেস্ট করাতে বলেন এবং পরবর্তীতে দেখা যায় তিনি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত। বর্তমানে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন তিনি।

আরও খবর: স্বাস্থ্য