জাতীয়

জনগণ ভোট দিতে পারলে এই সরকারের পাত্তা থাকবে না

  প্রতিনিধি ৩০ ডিসেম্বর ২০২২ , ৩:২১:৪২ প্রিন্ট সংস্করণ

নীলাকাশ টুডেঃ

মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পাত্তা থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, এর নমুনা রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল। দেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে, জনগণ যদি নিজের হাতে নিজে ভোট দিতে পারেন, এই সরকারের কোনো পাত্তা থাকবে না।

আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টন থেকে মগবাজার অভিমুখে গণমিছিল-পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে খন্দকার মোশাররফ হোসেন এসব কথা বলেন।

রংপুর সিটি নির্বাচনে সরকারদলীয় মেয়র প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘এই সরকার অনেক বড় বড় কথা বলে। একটা নির্বাচন (রংপুর) দেখেছেন, জামানত বাতিল হয়ে যায় নৌকার। এগুলো কিন্তু সরকারকে আসলে সিগন্যাল দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে এখন এটাই অবস্থা। আসলে এই সরকারের সময় শেষ।’

সরকারদলীয় নেতা ও মন্ত্রীদের বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘অনেকে বলে জনগণ নাকি আমাদের (বিএনপি) সঙ্গে নেই। জনগণ আছে কি নেই, আমি সরকারকে, তাদের যারা গোয়েন্দা সংস্থা, তাদের বলব, আজকের গণমিছিলটা দেখে যান। আগামী দিনে এই জনগণই গণ-অভ্যুত্থান সৃষ্টি করে আপনাদের বিদায় করবে—তার নমুনা এই গণমিছিল।’

ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘আপনারা তো বলেছেন, পাড়ায় পাড়ায় আপনারা পাহারা দেবেন। পাহারা দিয়েছেন, কিন্তু জনগণকে আপনারা ঘরে রাখতে পারেননি।’

১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে এই গণমিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করার বিষয়টি উল্লেখ করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘এই গণমিছিল ১০ দফা আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি। প্রায় ৩৩টি দল এবং গণতান্ত্রিক, দেশপ্রেমিক ব্যক্তি-গোষ্ঠী এর সমর্থনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, ঢাকায় গণমিছিল করছে। এই ১০ দফার একটিই কথা, এই ব্যর্থ, দুর্নীতিবাজ লুটেরা সরকারকে বিদায় করতে হবে।’

খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘বিএনপির ২৪ হাজার নেতা-কর্মী জেলে। কিন্তু আমাদের দমাতে পারেনি। তারা মনে করেছিল, ১০ ডিসেম্বর আগে মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেপ্তার করলে বিএনপির গণসমাবেশ পণ্ড হয়ে যাবে, হয়নি। যত গ্রেপ্তার, যত নির্যাতন হোক, রাস্তায় শুধু আমাদের নেতা-কর্মীরাই নন, জনগণও নেমে গেছে। আর তাদের দাবানো যাবে না।’

সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-লুটপাটের অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, তারা এ দেশের অর্থনীতিকে লুটপাট করে, মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি করে ও দেশ থেকে টাকা বিদেশে পাচার করে অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। অনেক ব্যাংকের তারল্য নেই, ডলারের মজুত কমে গেছে, আমদানিকারকেরা এলসি খুলতে পারছেন না। গত ১৪ বছরে এ সরকার যে ঋণ করেছে, এখন তারা ঋণের কিস্তি দিতে পারছে না। অর্থনীতি ধ্বংসের সীমানায় চলে গেছে।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘আজকে জনগণ বুঝতে পেরেছে যারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে, তারা গণতন্ত্র ফেরত দেবে না। যারা অর্থনীতিকে লুটপাট করেছে, তারা অর্থনীতিকে মেরামত করতে পারবে না, যারা বিচারব্যবস্থাকে দলীয়করণ করেছে, তারা বিচার বিভাগকে স্বাধীন করতে পারবে না। তারা সমাজে ভারসাম্য আনতে পারবে না, দেশে একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠন করতে পারবে না।’

এসবের জন্য এই সরকারের বিদায় প্রয়োজন মন্তব্য করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, সহজে কোনো স্বৈরাচার সরকার ক্ষমতা ছাড়ে না। তাদের বিদায় করতে হয়। কোনো স্বৈরাচার বেশি দিন টিকে থাকতে পারেনি। আইয়ুব খান, এরশাদ পারেনি। শ্রীলঙ্কার রাজাপক্ষেরা ১৮ বছর ক্ষমতায় ছিল। জনগণ যখন রাস্তায় নেমেছে, তারাও টিকে থাকতে পারেনি।

আগামী ১১ জানুয়ারি ঢাকাসহ সব বিভাগীয় শহরে ‘গণ–অবস্থান’ কর্মসূচি ঘোষণা করে খন্দকার মোশাররফ হোসেন যুগপৎ আন্দোলনে শরিক সব দল, জোট, ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে তাতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘এই গণ–অবস্থান কর্মসূচিকে সফল করে আপনারা সরকারের বিদায়ের দ্বিতীয় সতর্কবার্তা উচ্চারণ করবেন।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মুক্তিসহ কয়েকটি দাবিতে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে গণমিছিলে অংশ নেন দলের নেতা-কর্মীরাছবি: তানভীর আহাম্মেদ

এর আগে গণমিছিল কর্মসূচির সমন্বয়ক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন এবং দলের ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বক্তব্য দেন। সমাবেশের পর বেলা সাড়ে তিনটায় নয়াপল্টন থেকে গণমিছিল শুরু হয়।

গণমিছিলটি কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ হয়ে বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে মগবাজার মোড়ে গিয়ে পৌঁছায়। সেখানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সমাপনী বক্তব্য দেন। জুমার নামাজের আগেই হাজার হাজার নেতা-কর্মী নয়াপল্টনের ভিআইপি সড়কে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে তা কাকরাইল থেকে ফকিরাপুল বাজার পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। কর্মসূচি মগবাজার মোড়ে এসে শেষ হলেও নেতা-কর্মীরা ফিরতি মিছিল নিয়ে আবার একই পথে নয়াপল্টনে যান।