অন্যান্য

শবেবরাত কি? করণীয় ও বর্জনীয় কি?

  প্রতিনিধি ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ৫:৩২:২৭ প্রিন্ট সংস্করণ

 

লুৎফর সিকদার-গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

 

শবে বরাত বা মধ্য-শাবান (আরবি: نصف شعبان, প্রতিবর্ণীকৃত: নিসফে শাবান) বা লাইলাতুল বরাত হচ্ছে হিজরি শাবান মাসের ১৪ ও ১৫ তারিখের মধ্যবর্তী রাতে পালিত মুসলিম উম্মাহর গুরুত্বপূর্ণ রাত।

উপমহাদেশে এই রাতকে শবে বরাত বলা হয়। এটি একটি ফারসি শব্দ। যেমন ‘শব’ শব্দের অর্থ রাত, আর ‘বরাত’ শব্দের অর্থ নাজাত বা মুক্তি। এই ২টি শব্দ মিলিয়ে গঠিত ‘শবে বরাত’ এর অর্থ ‘ভাগ্য রজনী’ বা ‘ভাগ্যের রাত’ বা ‘ভাগ্য নির্ধারণের রাত’।

সঠিকভাবে ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। ঠিক তেমনি আমরা যদি ভুল পথে এবাদত বন্দেগী করে থাকি তাহলে গুনাহেরও কিন্তু শেষ নেই।

ইসলাম ধর্ম মতে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা তার বান্দার জন্য আরবি শাবান মাসের মাঝামাঝি সময়ে (শাবানের ১৪ ও ১৫ তারিখের মধ্যবর্তী রাত) পরবর্তী ১ বছরের জন্য রিজিক নির্ধারন করার রাত্রিই হলো শবে বরাত নামে পরিচিত।

তবে এই শবে বরাত নামটি শুধু উপমহাদেশে প্রযোজ্য। কেননা পবিত্র কোরআনুল কারিমে সরাসরি এই রাত নিয়ে কিছু বলা না থাকলেও হাদিসে একে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বা ‘মধ্য শাবানের রজনী’ বলা হয়েছে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে ও তাদের গুনাহ মাপের উদ্দেশ্যে এ রাতে মুসলিম উম্মাহ এবাদত বন্দেগী করে থাকে। তবে বর্তমানে সমাজে শবে বরাত নিয়ে কিছু সামাজিক কুসংস্কার রয়েছে। যে কাজগুলো করা একদমই উচিত নয়। তাই পবিত্র শবে বরাত পালনের নিয়ম সম্পর্কে সব মুমিন মুসলমানদেরকে জানতে হবে।

শবে বরাত পালনের নিয়ম

শবে বরাত পালনের নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। যেমন শাবান মাসে প্রিয়নবী বেশি বেশি নফল নামাজ ও রোজা রাখার তাগিদ দিয়েছেন। এজন্য ধর্মপ্রাণ মুসল্লীগণ সাবান মাসের মাঝামাঝি সময়ে সারারাত ইবাদত বন্দুকের মাধ্যমে কাটিয়ে থাকেন। পরের দিন অনেকেই নফল রোজা রাখে।

মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে এবং আপনার গুনাহ মাফের উদ্দেশ্যে আপনি সারারাত ইবাদত বন্দেগী করতে পারেন। তবে আপনার ইবাদত যাতে এরকম না হয় সারারাত নামাজ পড়লেন; কিন্তু ফজরের ফরজ নামাজ আদায় করলেন না। শবে বরাত পালনের নিয়ম সম্পর্কে জানতে হলে নিচের দেখানো নিয়মগুলো দেখতে পারেন।

শবে বরাতে করণীয় আমল

শবে বরাত বছরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও শ্রেষ্ঠ একটি রাত। এই রাতের তাৎপর্য ও ফজিলত অনেক বেশি। তবে শবে বরাতের নির্দিষ্ট কোনো ইবাদত ও আমল নেই। এই রাতের জন্য কোনো ইবাদত নির্দিষ্ট করাও জায়েজ নেই। এটা ইসলামে নিন্দনীয় ও পরিত্যাজ্য। বরং মানুষ যদ্দুর সম্ভব আল্লাহর ইবাদতে সময় কাটাবে।

ব্যক্তিগত সাধ্যানুযায়ী চাইলে অনেক আমল করা যায়। তবে আপনি চাইলে এই আমলগুলো করতে পারেন— এশা ও ফজর নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা। যথাসম্ভব নফল ও তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা, সম্ভব হলে উমরি কাজা নামাজ ও সালাতুত তাসবিহ আদায় করা। বেশি বেশি কোরআন মজিদ তেলাওয়াত করা, অধিকহারে আল্লাহর জিকির করা, দীর্ঘক্ষণ দোয়া-মুনাজাত করা, মাঝেমধ্যে শবে বরাতে কবর জিয়ারত করা ও পরের দিন রোজা রাখা।

সারারাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি করতে পারলে ভালো। না হয়, রাতের বেশির ভাগ সময় ইবাদতে কাটানোর চেষ্টা করতে হবে। তা-ও সম্ভব না হলে শেষ রাতের সময়টুকুতে কিছুতেই অবহেলা করা উচিত নয়। পাশাপাশি এ বিষয়টি খুব খেয়াল রাখতে হবে যে, রাতের নফল ইবাদতের কারণে যেন ফজরের ফরজ নামাজ কোনোভাবেই ছুটে না যায়।

শবে বরাতে যেসব কাজ কবেরা যা না

শবেবরাতকে ঘিরে অনেক মুসল্লিগণ যেমন এবাদত বন্দেগি করে থাকেন তেমনি আমাদের সমাজে এক শ্রেণির লোক আছে যারা এই রাতে বিভিন্ন মন্দ আচরণ করে থাকে। পবিত্র শবে বরাতের যেরকম নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হয় ঠিক তেমনি কিছু কাজ থেকে আমাদেরকে দূরে থাকতে হবে। আতশবাজি, পটকা ফোটানো, ইবাদত-বন্দেগি বাদ দিয়ে খামাখা ঘোরাঘুরি করা, অযাচিত আনন্দ-উল্লাস করা, বেহুদা কথাবার্তা ও বেপরোয়া আচরণ করা, অন্য কারো ইবাদতের বা ঘুমের বিঘ্ন ঘটানো, হালুয়া-রুটি বা খাবারদাবারের পেছনে বেশি সময় নষ্ট করা, ইবাদতে উদাসীনতা সমীচীন নয়।
সুতরাং শবে বরাতের বর্জনীয় কাজ থেকে দূরে থেকে মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আমাদেরকে এবাদত বন্দেগী করতে হবে।

শবে বরাতে নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হওয়া। এই ধরনের কোনো আমলের প্রমাণ হাদিস শরিফে নেই। আর সাহাবায়ে কেরামের যুগেও এর রেওয়াজ ছিল না। তবে কোনো প্রকার ঘোষণা বা আহ্বান ছাড়া মানুষজন যদি মসজিদে একত্র হয়ে যায়, তাহলে তারা একাকী ইবাদত করতে পারে। এতে কোনো সমস্য নেই।

লক্ষণীয় যে, এক শ্রেণির যুবক আছে- তারা এ রাতে বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে রাস্তায় সময় কাটায়, উচ্চ স্বরে জিকির করে; অথচ ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এগুলো সম্পূর্ণ বর্জনীয়। কারণ এতে কোনো রোগাক্রান্ত ব্যক্তির কষ্ট হতে পারে। আর অন্যকে কষ্ট দিয়ে নফল ইবাদত করার কোনো বিধান শরিয়তে নেই।

পটকা বাজানো, খিচুড়ি পাকিয়ে বণ্টন করা; মিষ্টি, হালুয়া ও শিরনি বিতরণ; মসজিদে একত্র হয়ে ইবাদত, জিকির, আতশবাজি, চেরাগপ্রথা ও কবরস্থানে মেলার মতো গমনাগমন ইত্যাদি সুস্পষ্ট বিদআত ও কুসংস্কার।

উল্লেখ্য, সঠিকভাবে ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। ঠিক তেমনি আমরা যদি ভুল পথে এবাদত বন্দেগী করে থাকি তাহলে গুনাহেরও কিন্তু শেষ নেই।

আরও খবর: অন্যান্য