অর্থনীতি

ডলার সংকট কাটাতে সব চেয়ে বড় ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক

  প্রতিনিধি ২৭ মে ২০২২ , ১২:৪৫:১৮ প্রিন্ট সংস্করণ

নীলাকাশ টুডেঃ ডলার সংকট কাটাতে সব চেয়ে বড় ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে কালো টাকা বা পাচারের অর্থ সহজেই দেশে ফেরত আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থ পাচার বড় ধরনের নিন্দনীয় কাজ। তবে এ মুহূর্তে পাচার করা টাকার কিছু অংশও ফেরত আসলে তা দেশের উপকারে লাগবে। সে বিবেচনায় এই ছাড় কিছুটা ইতিবাচক।

জানা গেছে, এখন থেকে রেমিট্যান্স হিসাবে পাঠানো পাঁচ লাখ টাকার বেশি অর্থের উৎস দেশে-বিদেশে কোথাও জানতে চাওয়া হবে না। ডলার সংকট এবং রিজার্ভ কমে যাওয়ার পর এমন উদারনীতি গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ফলে প্রবাসী আয় বাবদ দেশে যত অঙ্কের ডলার পাঠানো হোক না কেন, তার উৎস নিয়ে কোনো প্রশ্ন করবে না বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো। আবার এর বিপরীতে আড়াই শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনাও দেওয়া হবে।

এর আগে পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার বা পাঁচ লাখ টাকার বেশি রেমিট্যান্স পাঠাতে আয়ের নথিপত্র জমা দিতে হতো। যে কারণে এর চেয়ে বেশি অর্থ একবারে পাঠাতে পারতেন না বিদেশে থাকা বাংলাদেশিরা। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে বিদেশ থেকে তাদের টাকা আনতে আর কোনো বাধা থাকবে না।

এ নিয়ে দেশে-বিদেশে কোথাও প্রশ্ন করা হবে না। সরকারের সিদ্ধান্তে ২৩ মে এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পাঁচ হাজার ডলার অথবা পাঁচ লাখ টাকার বেশি প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে প্রণোদনা প্রদানে রেমিটারের কাগজপত্র বিদেশের এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে প্রেরণের বাধ্যবাধকতা আছে। তবে এখন থেকে বৈধ উপায়ে দেশে রেমিট্যান্স প্রেরণের বিপরীতে রেমিট্যান্স প্রণোদনা প্রদানে রেমিটারের কাগজপত্র ছাড়াই আড়াই শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা প্রযোজ্য হবে। প্রজ্ঞাপন জারির সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশনাটি কার্যকর হয়েছে।

১২ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিট্যান্স অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, ‘দেশ থেকে যেসব টাকা দেশের বাইরে চলে গেছে (পাচার হয়েছে), তা আবার ফেরত আসবে। বিদেশে টাকা রাখলে লাভের বদলে ব্যাংকগুলোকে সার্ভিস চার্জ বাবদ টাকা দিতে হয়। এতে লাভের চেয়ে লোকসান বেশি হয়।’ এরপরই সরকারি সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, এর মাধ্যমে অর্থ পাচাকারীরা কিছুটা উৎসাহী হতে পারেন। এটা গভীর পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। কারণ অর্থ পাচারকারীরা খুবই সাবধানী। এরা চট করে বেশি অঙ্কের টাকা নাও পাঠাতে পারেন। অল্প অল্প করে পাঠাবেন। সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পাচারকারীরা একদিকে টাকা আনবে, অন্যদিকে নিয়ে যাবে। মাঝখানে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা উপভোগ করবে।

এ প্রসঙ্গে বিআইবিএমের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, এতে রেমিট্যান্স কিছুটা বাড়বে। কিন্তু আসল সুবিধাভোগী দুর্নীতিবাজ আমলা, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদরা। তারা অবৈধভাবে বিদেশে টাকা পাঠিয়ে বৈধভাবে তা দেশে নিয়ে আসবেন। এতে তাদের কালোটাকা সাদা হয়ে যাবে। তবে ডলার সংকট কাটাতে এটারও প্রয়োজন আছে।

জানা গেছে, রপ্তানি ও প্রবাসী আয় দিয়ে আমদানির খরচ মেটানো যাচ্ছে না। কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্য, জ্বালানি, মূলধনি যন্ত্র ও কাঁচামালের দাম বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে জাহাজ ভাড়াও। এতে ডলারে টান পড়েছে। বেড়ে গেছে ডলারের দামও। যার প্রভাব পড়েছে খাদ্যপণ্যের দামে। হু হু করে বাড়ছে ভোগ্যপণ্যের দাম। চাপে রয়েছে মধ্যবিত্ত ও নিু মধ্যবিত্ত শ্রেণি।

সংকট কাটাতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশ সফর বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। আর ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি গাড়ি ও ইলেকট্রনিকস ব্যবহার্য পণ্য আমদানিতে ৭০ শতাংশ টাকা জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি বিলাসপণ্য আমদানি বন্ধের চিন্তাভাবনা চলছে সরকারি পর্যায়ে।

এদিকে চলতি ১-১৯ মে পর্যন্ত ১৩১ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছে। এপ্রিলে এসেছিল ২০০ কোটি ডলার। আর গত জুলাই-এপ্রিলে যে প্রবাসী আয় এসেছে, তা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ শতাংশ কম। এই নতুন সিদ্ধান্তের ফলে প্রবাসী আয় বেড়ে যাবে বলে আশা করছেন ব্যাংকাররা। পাশাপাশি ঈদুল আজহার কারণে আয় এমনিতেই বাড়বে বলে জানিয়েছেন তারা। তখন সংকট অনেকটা কেটে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এই সিদ্ধান্ত জানানোর পাশাপাশি ২৩ মে ডলারের দাম ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা নির্ধারণ করে দিয়েছে। তবে ব্যাংকগুলোতে ডলারের দাম এখনো ৯৫ টাকার বেশি। এই দামে প্রবাসী আয় আনছে ও রপ্তানি বিল নগদায়ন করছে। আর এর চেয়ে বেশি দামে আমদানিকারকদের থেকে দায় মেটাতে বিল আদায় করছে।

এর আগে ১৬ মে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমানো হয় ৮০ পয়সা। তখন ডলারের দর নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। আবার গত ৯ মে ডলারের বিনিময় মূল্য ২৫ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। এরও আগে জানুয়ারির শুরুতে ডলারের বিনিময় মূল্য ২০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা, ২৩ মার্চ ২০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সা করা হয়েছিল।

আর গত ২৭ এপ্রিল ২৫ পয়সা বাড়িয়ে করা হয় ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা। ডলারের মান বাড়ানোর অর্থই হচ্ছে এতে রপ্তানিকারকরা লাভবান হন। প্রবাসীরাও রেমিট্যান্স পাঠিয়ে বেশি অর্থ পান। তবে এতে আমদানি পণ্যের খরচ বেড়ে যায়। বিপদে পড়েন ভোক্তারা।

আরও খবর: অর্থনীতি