রাজনীতি

আবারও রসিকের নগরপিতা মোস্তফা, যা ভোট পেল অনন্যরা

  প্রতিনিধি ২৭ ডিসেম্বর ২০২২ , ৭:৩৩:৪৪ প্রিন্ট সংস্করণ

রংপুর প্রতিনিধিঃ রংপুর সিটি করপোরেশনে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তিনি সরকারদলীয় প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়ার চেয়ে ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৫৯ ভোট বেশি পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আমিরুজ্জামান পিয়াল হাতপাখা প্রতীকে পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৮৯২ ভোট।

মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ইভিএমে ভোটগ্রহণ শেষে রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে রাত ১২টায় রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন।

 

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সচিব জাহাঙ্গীর আলম, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জি এম সাহতাব উদ্দিন প্রমুখ।

এছাড়া বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির প্রার্থী আবু রায়হান ডাব প্রতীকে ১০ হাজার ৫৪৯ ভোট, জাকের পার্টির খোরশেদ আলম খোকন গোলাপ ফুল প্রতীকে ৫ হাজার ৮০৯, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) শফিয়ার রহমান মশাল প্রতীকে পেয়েছেন ৫ হাজার ১৫৬ ভোট। খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মন্ডল রাজু দেওয়াল ঘড়ি প্রতীকে ২ হাজার ৮৬৪ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মেহেদী হাসান বনি হরিণ প্রতীকে ২ হাজার ৬৭৯ ভোট পেয়েছেন।

নির্বাচনকে ঘিরে ছিল ছয় স্তুরের নিরাপত্তা বেষ্টনি। কেন্দ্রে কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। প্রতি সাধারণ কেন্দ্রে ১৫ জনের এবং ঝুঁকিপূর্ণ ৮৬টি কেন্দ্রে ১৬ জনের ফোর্স মোতায়েন রাখা হয়।

 

এছাড়া নির্বাচনী আচরণ বিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়োগ করা হয় ৩৩ জন নির্বাহী হাকিম। তারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন অপরাধের সংক্ষিপ্ত বিচার কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ১৬ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়। র‍্যাব-বিজিবির একাধিক টিম মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নির্বাচনী এলাকায় নিয়োজিত ছিল। তারা ভোটের আগে ও পরে মোট পাঁচদিনের জন্য নিয়োজিত থাকবেন।

এই নির্বাচনে ২২৯ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এবং ১ হাজার ৩৪৯ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া পোলিং অফিসার ছিলেন দুই হাজার ৬৯৮ জন। মোট ৪ লাখ ২৬ হাজার ৪৭০ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ২ লাখ ৭৯ হাজার ৯৬৩ জন। সর্বোপরি নির্বাচনে এবার ৬৫.৮৮ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ইসি সংশ্লিষ্টরা।

এবার রংপুর সিটিতে প্রথমবারের মতো ২২৯টি কেন্দ্রের সবগুলোতে ইভিএমে ভোট দেন ভোটাররা। শীতের কনকনে সকাল উপেক্ষা করেই ভোটাররা সকাল থেকে কেন্দ্রে উপস্থিত হন। তবে শীতের তীব্রতা কাটিয়ে বেলা বাড়ার সাথে কেন্দ্রগুলোতে বাড়তে থাকে ভোটার উপস্থিতি। কিন্তু ইভিএম স্লো হবার কারণে ভোটগ্রহণে ধীরগতি পরিস্থিতি তৈরি হয়। বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটাররা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন। বিকেল সাড়ে চারটায় ভোটগ্রহণ শেষ হলেও কিছু কেন্দ্রে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আসা ভোটাররা শেষ পযন্ত ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরেন। তবে অনেকেই ইভিএম বিড়ম্বনার শিকার হয়ে ভোট দিতে পারেননি বলেও অভিযোগ রয়েছে।

ইভিএম ত্রুটি বা স্লো ভোটগ্রহণ নিয়ে খোদ প্রার্থীরাও বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। ক্ষমতাসীন দলের মেয়র প্রার্থী কোনো আপত্তি না জানালেও একাধিকারবার ইভিএম নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। ভোটারদের অভিযোগ তুলে ধরেও তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ভোটগ্রহণে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে অভিযোগ জানান। সাংবাদিকদের কাছে একই অভিযোগ করেন ইসলামী আন্দোলনের আমিরুজ্জামান পিয়াল।

এবার রংপুর সিটিতে প্রথমবারের মতো ২২৯টি ভোট কেন্দ্রের ১ হাজার ৩৪৯টি ভোটকক্ষে ইভিএমে ভোট হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্র ও কক্ষ মিলে ১ হাজার ৮০৭ সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছিল। রংপুর সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। এরমধ্যে এবার তালিকায় ছিল ভোটার চার লাখ ২৬ হাজার ৪৭০ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার দুই লাখ ১৪ হাজার ১৬৬ জন, পুরুষ ২ লাখ ১২ হাজার ৩০৩ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার একজন।

সকাল সাড়ে নয়টা নগরীর আলমনগর কলেজ রোড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। এর আগে সোয়া নয়টার দিকে ভোটকক্ষে ঢুকে তিনি ইভিএম ত্রুটির কারণে ভোট দিতে পারেননি বলে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে জানান। এর পনেরো মিনিট পর তিনি ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া সকাল সাড়ে ৯টায় নগরীর লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেন। আর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আমিরুজ্জামান পিয়াল বেলা দেড়টার দিকে লালকুঠি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় কেন্দ্রে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।

আরও খবর: রাজনীতি