শিক্ষা

ন’র গ্যাঁড়াকলে নাজেহাল বর্মন

  প্রতিনিধি ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ২:৪১:১৩ প্রিন্ট সংস্করণ

 

 

 

বর্মন নাকি বর্মণ কোনটা সঠিক? এই একটা বর্ণ নিয়ে বিস্তর ঝামেলার মুখে রয়েছেন বর্মন জাতিগোষ্ঠীর একঝাঁক শিক্ষার্থী। যাদের নামে বর্মণ আছে তারা সাংবিধানিক অধিকার পাচ্ছেন। আর যাদের নামে বর্মন লেখা তারা হচ্ছেন বঞ্চিত। নিজেদের বর্মন প্রমাণের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ঠাকুরগাঁও জেলার ৯৫ শিক্ষার্থী। এটি নিয়ে ৩বার তদন্ত হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। আবার শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সরকারি নিয়মে বাংলা কিংবা ইংরেজিতে আবেদন করার নিয়ম থাকলেও ইংরেজিতে আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে না।

 

প্রায় ১৮ মাস আগে থেকে সনদের জন্য ঘুরছেন শিক্ষার্থীরা। নির্দেশ দেয়া হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের। নিয়ম অনুযায়ী ১৫ থেকে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে সনদ পাবার কথা থাকলেও দীর্ঘসূত্রীতায় পড়েছেন তারা। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছেন ঠাকুরগাঁও জেলার কোচ ও বর্মন সম্প্রদায়ের আদিবাসী শিক্ষার্থীদের সাংবিধানিক অধিকার বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। জাতিগত স্বীকৃতি ভাষা, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভাস, সংস্কৃতি, ধর্মীয় উৎসব ও চেহারায় চেনার কাজ হলেও ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসন বানানের মাধ্যমে জাতিগত পরিচয় নির্ধারণ করছে।

বর্মণ বানান থাকলে আদিবাসী আর বর্মন বানান থাকলে আদিবাসী না। এই বলে আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে।

দাবি আদায়ে একাধিকবার আন্দোলন করেন বাংলাদেশ কোচ-রাজবংশি-বর্মন সংগঠনের ৪০ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ প্রায় ১০০ জন শিক্ষার্থী। তারা লিখিত আকারে জেলা প্রশাসক বরাবার দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হলো- অনতিবিলম্বে ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন উপজেলা হতে আবেদন করা প্রত্যেকজন বর্মন সম্প্রদায়ভুক্ত আদিবাসী শিক্ষার্থীদের প্রত্যয়ন প্রদান করতে হবে।

 

এই জনগোষ্ঠীর সদস্যরা গত বছরের ২৯শে নভেম্বর ‘শান্তিপূর্ণ অনশন ও অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করেন। তারা অভিযোগ করেন এদিন জেলা প্রশাসক বরাবর তাদের কথা উল্লেখ করা হলে তাদের সঙ্গে দুর্বব্যহার করা হয়। এই সনদ দিয়ে তারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা, সরকারি চাকরি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রজেক্টে বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকেন।

বিষয়টি সুরাহা করার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ও জাতিগোষ্ঠীর লোকেরা আন্দোলন করে যাচ্ছেন শুরু থেকেই। তারা বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরছেন। দাবির প্রেক্ষিতে গত বছরের ২রা নভেম্বর চিঠি পাঠায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। তারা আদিবাসী কিনা এই মর্মে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি প্রেরণ করেছিল। এই চিঠির জবাবে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়- বর্মণরা আদিবাসী। চিঠির অগ্রগতি জানতে চেয়ে ২৬শে নভেম্বর লিখিত আবেদন করেন তারা। বাংলাদেশ কোচ-রাজবংশি-বর্মন সংগঠন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সুকান্ত বর্মন চিঠি দিলেও কোনো উত্তর মেলেনি। তিনি বলেন, এটি নিয়ে পরপর ৩বার তদন্ত রিপোর্টে তারা বর্মন-কোচ সম্প্রদায় আদিবাসী শিক্ষার্থী উল্লেখ করা হয়। কিন্তু নতুন ইউএনও আসার পর জেলা প্রশাসন আবারো তদন্ত করে। যার ফলে অধিকার বঞ্চিত হচ্ছি আমরা। সরকারিভাবে বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষাতেও আবেদন করার নিয়ম থাকলেও ইংরেজিতে আবেদন নেয়া হয় না। আমাদের আবেদনপত্র ইউএনও অফিস থেকে হারিয়েও গিয়েছিল। যার জন্য আবার নতুন করে আবেদন করতে বলা হয়। পূর্বে ৯৫ জন আবেদন করলেও এরপর নতুন করে আবেদন করেন ৮১ জন। যেখানে ১৫ থেকে ৩০ কর্মদিবসে তাদের সনদপত্র পাওয়ার থাকলেও তদন্ত হচ্ছে দেড় মাস ধরে।

তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন করি। এ সময় আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারসহ হুমকিও দেয়া হয়। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত বইয়ে কোচ-বর্মনদের লিখিত ডকুমেন্টও আমরা প্রদান করেছি। এরপরও আমরা অধিকার বঞ্চিত।

শিক্ষার্থীদের আবেদনগুলো তদন্ত করছেন ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার ইউএনও বেলায়েত হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের এখানে ৫০টার মতো জমা আছে। এটাতো একজনের পক্ষে তদন্ত করা সম্ভব নয়। তাই তিনজন কর্মকর্তার মধ্যে ভাগ করে দিয়েছি। এরমধ্যে একজন কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদন এসে পৌঁছায়নি। আশা করি এই সপ্তাহের মধ্যে এই তদন্ত প্রতিবেদন শেষ করে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে জমা দিতে পারবো।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। আমরা তদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছি। প্রতিবেদন হাতে পেলেই আশা করি সমাধান হয়ে যাবে।

আরও খবর: শিক্ষা