অর্থনীতি

দেশীয়-বৈশ্বিক সংকটে স্থবির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড

  প্রতিনিধি ৪ আগস্ট ২০২২ , ১:৩২:০৪ প্রিন্ট সংস্করণ

 

নীলাকাশ টুডেঃ দেশের অর্থনীতিতে টাকার প্রবাহ বাড়ানোর হার কমে গেছে। গত চার অর্থবছরের মধ্যে গত অর্থবছরেই টাকার প্রবাহ সবচেয়ে বেশি কমেছে।

টাকার প্রবাহ কমায় বিশেষ করে ক্ষুদ্র পুঁজির উদ্যোক্তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। করোনার পর আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বাড়ায় পণ্যের দাম এক দফা বেড়েছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আরও এক দফা বেড়েছে। এতে বেড়ে গেছে আমদানি ব্যয়। বাড়তি আমদানি ব্যয়ের কারণে ডলারের দাম বাড়ছে হুহু করে।

চড়া দামেও এখন ডলার মিলছে না। ফলে অনেক পণ্যের আমদানির এলসি খোলা যাচ্ছে না। ডলার সাশ্রয়ে লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদনে কমে যাচ্ছে।

এতে শিল্পের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি চলতি অর্থবছরজুড়ে বিরাজ করবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এদিকে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার চলতি বছরেও কমবে বলে আইএমএফ আভাস দিয়েছে। এসব কারণে উদ্যোক্তারাও অনেকে হাত গুটিয়ে বসে আছেন। শুধু আগের প্রতিষ্ঠানগুলোকেই সচল রাখছেন। এসব দেশীয় ও বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে।

সূত্র জানায়, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়াতে হলে টাকার প্রবাহ বাড়াতে হয়। এতে উদ্যোক্তাদের হাতে টাকা গেলে তারা শিল্প স্থাপন করে। মানুষের কর্মসংস্থান বাড়ে। বৃদ্ধি পায় উৎপাদন। এসব পণ্যের স্থানান্তরের কাজে আরও মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ে। যা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বাড়িয়ে দেয়। একই সঙ্গে মানুষের হাতে টাকা গেলে তাদের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ে। কিন্তু করোনার সময় থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে টাকার প্রবাহ বাড়ানোর নীতি গ্রহণ করে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। গত অর্থবছরেও টাকার প্রবাহ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বাড়েনি। উলটো গত চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বেড়েছে। গত অর্থবছরে টাকার প্রবাহ বেড়েছে ৯ দশমকি ৪৩ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ শতাংশ বাড়ানোর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ কম বেড়েছে। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে টাকার প্রবাহ বেড়েছিল ১৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেড়েছিল ১২ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বেড়েছিল ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বেড়েছিল ৯ দশমকি ২৪ শতাংশ। করোনার পর আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম আরও এক দফা বেড়ে যায়। এতে দেশে আমদানির নামে মূল্যস্ফীতি আসছে। ফলে দেশের ভেতরেও পণ্যের দাম বেড়ে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যায়। এ হার নিয়ন্ত্রণ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি অর্থবছরের জন্য সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি ঘোষণা করে। ফলে চলতি অর্থবছরে টাকার প্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ শতাংশ। যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৩ শতাংশ কম। টাকার প্রবাহ কমানোর নীতির কারণে চলতি বছরেও ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আগের চেয়ে কিছুটা সংকুচিত হবে।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা শুরুর আগেই দেশের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়। গত বছরের আগস্ট থেকেই ডলার সংকট শুরু হয়। ওই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ওই সময়ে পদক্ষেপ নিলে পরিস্থিতির এত অবনতি হতো না। নভেম্বর থেকে রেমিট্যান্স কমতে শুরু করে। হুন্ডির বিরুদ্ধে ওই সময়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এখনো খুব কম পদক্ষেপ নিচ্ছে। একদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা, অন্যদিকে দেশীয় বাজারে অস্থিরতা। এই দুইয়ে মিলে উদ্যোক্তারা এখন হাত গুটিয়ে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ ডলার পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে সেটি এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না। রেমিট্যান্স বাড়লেও সামনে রপ্তানি আয় কমার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। রপ্তানি আয় কমলে ডলার পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। এতে আমদানি করতে না পারলে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ আমদানিনির্ভর। আমদানিকে কেন্দ্র করে অর্থনীতির বড় একটি চক্র আবর্তিত হয়। আমদানি করা না গেলে ওইসব কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হবে। যদিও ডলার সাশ্রয় করতে এখন আমদানি নিয়ন্ত্রণ জরুরি। এটি সাময়িক হতে হবে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি হলে অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হবে।

আরও খবর: অর্থনীতি