অর্থনীতি

এমটিএফইয়ের আগেও লাপাত্তা হয়েছে যেসব এমএলএম কোম্পানি

  ঢাকা অফিস ২০ আগস্ট ২০২৩ , ৫:৪৪:০২ প্রিন্ট সংস্করণ

 

 

আবারও আলোচনায় এসেছে এমএলএম ব্যাবসা। গত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে ঘুরেফিরে আলোচনা যেন পিছু ছাড়ছে না বহু স্তর বিপণন (এমএলএম) ব্যবসার। অনিয়ন্ত্রিত এই প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতারণা বন্ধে প্রশাসনের নেই কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা। এই পদ্ধতির ব্যবসায় ডেসটিনি, যুবক ও ইউনিপেটুইউ এবং সর্বশেষ এমটিএফইসহ নামসর্বস্ব বহু এমএলএম কোম্পানি সাধারণ মানুষকে লাখোপতি ও কোটিপতি হওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

সম্প্রতি বন্ধ হয়েছে এমএলএম ব্যবসার ফাঁদ অবৈধ অনলাইন গ্যাম্বলিং ক্রিপ্টো ট্রেডিং করা দুবাইভিত্তিক কোম্পানি “এমটিএফই”। প্রতারণায় জড়িয়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন দেশের লক্ষাধিক যুবক। ধারণা করা হচ্ছে, এই কোম্পানির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ক্রিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমে অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে।

শুক্রবার (১৮ আগস্ট) রাতে এই কোম্পানিতে বিনিয়োগকারী একাধিক ব্যক্তি জানান, হঠাৎ করে কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে গেছে। সাইবার বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত ও বাংলাদেশ থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিনিয়োগকারী ছিল। তবে অধিকাংশই ছিল বাংলাদেশি।

এর আগে অতি মুনাফার ফাঁদে ফেলে গ্রাহকদের টাকা লুটের সবচেয়ে বড় দুটি উদাহরণ ডেসটিনি ও যুবক। এ দুটি প্রতিষ্ঠান সাধারণ গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে প্রায় ৭ হাজার ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ৪ হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে বিচার চলছে ডেসটিনি গ্রুপের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিচালকসহ ২২ জনের।

এমটিএফইয়ের আগেও লাপাত্তা হয়েছে যেসব এমএলএম কোম্পানি
১ বিলিয়ন ডলার নিয়ে বন্ধ এমএলএম এমটিএফই
অতি মুনাফার লোভ দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে যুব কর্মসংস্থান সোসাইটি বা যুবক। ১৯৯৬ সালে যুবকের নিবন্ধন দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধকের কার্যালয় (রেজসকো)।

কথিত মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানি (এমএলএম) ইউনিপেটুইউতে ১০ মাসে দ্বিগুণ লাভের আশায় ৬ লাখ বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ করা ৬ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় চেয়ারম্যান শহীদুজ্জামান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনতাসির হোসেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০১১ সালের ইউনিপেটুইউর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে মামলা করে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিষ্ঠানটির ওপর তদন্ত করেও এসব তথ্যের প্রমাণ পায়।

গত বছরের জানুয়ারিতে রাজধানীর কলাবাগান এলাকা থেকে ই-কমার্সের নামে যাত্রা শুরু করে এমএলএম কোম্পানি এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আল আমিন প্রধানের নেতৃত্বে অন্য সহযোগীরা গত বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মাত্র ১১ মাসে ২৬৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।

অতিরিক্ত মুনাফার লোভ দেখিয়ে ২০১৩ সালে প্রায় পাঁচ লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় আইসিএল গ্রুপ। পরবর্তীকালে নামসর্বস্ব ১৩টি প্রতিষ্ঠান ফেলে উধাও হয়ে যান গ্রুপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও মূল উদ্যোক্তা শফিকুর রহমানসহ পরিচালকরা। যদিও পরে গ্রুপটির মূল উদ্যোক্তা শফিকুর রহমান ও তার স্ত্রী আইসিএল গ্রুপ এর পরিচালক কাজী সামসুন নাহার মিনা র‌্যাবের হাতে আটক হন। তবে এখনো প্রতারিত গ্রাহকরা টাকা ফিরে পাননি।

এর বাহিরেও সাভারে ২০১৬ সালে ‘ব্রাইট ফিউচার বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড’ নামের একটি (এমএলএম) কোম্পানি প্রায় চারশ’ জন চাকরিপ্রত্যাশী যুবকের এক কোটি ২০ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে।

২০২২ সালে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে এসবিএসএল নামে একটি মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি প্রায় ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। কোম্পানিটির প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে প্রায় ৩০০ পরিবার।

২০১৩ সালে ফরিদগঞ্জে গ্রাহকদের প্রায় ৬ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায় বিডি লিংক সিস্টেম লিমিটেড নামের একটি এমএলএম কোম্পানি।

চার বছরে দ্বিগুণ, পাঁচ বছরে আড়াইগুণ হারে এফডিআর। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রকল্প এবং প্রতি লাখে মাসে দুই হাজার টাকা করে লাভ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় ১৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় ‘মিতালী ভিশন’ নামে এক এলএমএল কোম্পানি।

১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ‘এহসান গ্রুপ পিরোজপুর-বাংলাদেশ’ নামের এক কোম্পানির চেয়ারম্যান রাগীব আহসান এবং তার এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এহসান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, এহসান রিয়েল

এর আগে ২০২১ সালে এক মাসে অন্তত ১০টি অনলাইন এমএলএম কোম্পানি বিপুলসংখ্যক গ্রাহকের কয়েকশ’ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়। এর মধ্যে রয়েছে ইনসাফ সেভেন, টু-লাইক, গোল্ডরাশ, গোল্ড লাইন, বিন্দাসওয়ার্ক ডটকম, বিডি লাইক, ইফোর্ডবিডি, জিওনেস, লাইক এইচএমপি ওয়ার্ল্ড, টু-লাইক ওয়েব, বিডি ক্যাশ রিওয়ার্ডস, স্টারস ফেয়ার২৫.কম, ওয়ালমার্ট গ্রুপ, জিএসসিবিডি, ইউকে লাইকসহ অনেক কোম্পানি। এ ছাড়া ২০০৮ সাল থেকে ওই বছর পর্যন্ত ২৬৬টি সমবায় সমিতি প্রায় ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। যার অধিকাংশই পাচার হয়ে গেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

আরও খবর: অর্থনীতি