সারাদেশ

উজাড়ের শঙ্কায় সুন্দরবনের গোলবন

  প্রতিনিধি ২২ অক্টোবর ২০২৩ , ৭:৪৭:৪৪ প্রিন্ট সংস্করণ

নীলাকাশ টুডেঃ সুন্দরবনে পাতামরা রোগে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গোলপাতা। এতে অভয়ারণ্যসহ বিভিন্ন এলাকায় হাজারো মণ পাতা পচে যাচ্ছে। এতে গোল গাছের নতুন অঙ্কুরোদগম ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে বনসংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন।

সুন্দরবন ঘুরে দেখা গেছে, যেসব স্থানে গোলপাতার কূপ রয়েছে সেসব স্থানে গোল গাছের পাতা মরে যাচ্ছে। এক জায়গায় অধিক ঘন বন হওয়ার কারণে এসব গাছের পাতার এমন অবস্থা। কোনো কোনো গাছে মাইজ পাতা (মাঝখানের শিশু পাতা) বাদে সব পাতাই নষ্ট হয়ে গেছে। এর কারণ হিসেবে বন বিভাগের লোকজন ও বাওয়ালিরা বলছেন, পাতা না কাটার কারণেই নষ্ট হচ্ছে। এতে গাছের ফল প্রদানের পরিমাণও কমে যাচ্ছে। এক সময় এসব কূপ নষ্ট হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা করছেন তারা।

বাওয়ালি আব্দুল মাজেদ বলেন, ‘আগে সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল বনজীবীরা সারা বছর কিছু না কিছু আয় করতেন। কিন্তু এখন বাওয়ালিদের মাথায় হাত উঠেছে। সিডরের পর থেকে গরান গাছ কাটা বন্ধ। গোলপাতা কাটাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আগে সুন্দরবনের যেসব জায়গায় গোলপাতা বাগান ছিল এখন সেসব জায়গায় তেমন গাছ দেখা যায় না।’

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একজন শীর্ষ বন কর্মকর্তা জানান, গোলপাতার বন বাড়তে পারেনি যেমন বাড়া উচিত ছিল। গোলপাতা তাল, নারকেল জাতীয় গাছ। ইংরেজরা এর নাম দিয়েছে নিপা পাম। তাল-নারকেল বছর বছর ঝুড়তে হয়। মানে এ গাছগুলোর পরিণত ডালগুলো কেটে দিতে হয়, গাছের মাথা পরিষ্কার করে দিলে নতুন ডাল ডানা মেলে। ফুল মুকুলিত হয়ে ফল ধরে। কয়েক বছর নারকেলগাছ পরিষ্কার না করে দিলে ফল ধরা বন্ধ হয়ে যায়। গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। এসব গাছ পরিষ্কার করার আবার একটা নির্দিষ্ট সময় আছে। বর্ষার পর আশ্বিন মাসে নারকেলগাছ পরিষ্কার করতে হয়। কোনোমতেই কার্তিক পার করা ঠিক নয়। আবার তালগাছ পরিষ্কার করার সময় মাঘ-ফাল্গুন। বাওয়ালিদের প্রবেশ সংরক্ষিত হওয়ার কারণে গোল পাতার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

গোলপাতা পরিষ্কারের সময়ও এটা মাঘ-ফাল্গুন-চৈত্রে। অর্থাৎ মার্চের পর আর কাটা ঠিক নয়। এই পঞ্জিকা মেনেই এ যাবৎ বন বিভাগ বাওয়ালিদের অনুমতি দিত।

চাঁদপাই ও শরণখোলা দুই রেঞ্জ নিয়ে পূর্ব সুন্দরবন আর খুলনা সাতক্ষীরা রেঞ্জ নিয়ে পশ্চিম সুন্দরবন। পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের বনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে আরো জানা গেছে, এক সময় সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের খুলনা রেঞ্জেই শুধু তিনটি কূপ থেকে গোলপাতা আহরণ করা হতো। বর্তমানে একটি কূপ থেকে গোলপাতা কাটা হয়। বাকি কূপগুলোতে গোলপাতার বংশ বিস্তার কমেছে। পাতা মরে যাচ্ছে। গাছ পরিষ্কার না করার কারণে ফল দেওয়ার পরিমাণও কমেছে। ফলে একসময় এসব গাছ মরে যাবে। তখন গাছের অঙ্কুরোদগমও হবে না।

এদিকে উপকূলের মানুষের মধ্যে গোলপাতার ব্যবহার কমছে। মানুষ টিনের ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে। এতেও গোল পাতা আগের চাহিদা হারাচ্ছে।

সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগীয় অফিস সূত্র জানিয়েছে, এ বিভাগের আওতায় এখন মাত্র দুটি কূপ থেকে চলে গোলপাতা আহরণ। আগে এ বিভাগ থেকে আড় শিবসা, শিবসা ও ভদ্রা এবং সাতক্ষীরা রেঞ্জের সাতক্ষীরা কূপ থেকে গোলপাতা আহরণ করা হতো। বর্তমানে তিনটি স্থানই অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে বর্তমানে এসব কূপ থেকে আর গোলপাতা আহরণ করা হয় না। যে কারণে গাছ পরিষ্কার না করায় মরা পাতার পরিমাণ বাড়ছে।

সূত্র কালবেলা

আরও খবর: সারাদেশ