সারাদেশ

আসামিদের ফাঁসাতে ‘গুলিবিদ্ধ হওয়ার নাটক’, চাঞ্চল্যকর রহস্য উদঘাটন পুলিশের

  নীলাকাশ টুডেঃ ১৫ অক্টোবর ২০২২ , ১:৩৫:৫৩ প্রিন্ট সংস্করণ

গুলিবিদ্ধ দাবি করা সজিব মিয়া

 

 

 

নরসিংদীতে হত্যা মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার কারণে সজিব মিয়া (৩০) নামের এক যুবককে গুলি করার অভিযোগকে নাটক বলছে পুলিশ। আজ শনিবার দুপুরে নরসিংদীর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. আল আমিন।

এর আগে গতকাল শুক্রবার দুপুরে নরসিংদী সদর উপজেলার পাঁচদোনার স্যার কে জি গুপ্ত উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে গুলিবিদ্ধ হওয়ার দাবি করেছিলেন সজিব মিয়া। তিনি সদর উপজেলার পাঁচদোনা ইউনিয়নের আসমান্দিরচর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা দুলাল মিয়ার ছেলে। শিবপুরের আলোচিত তৎকালীন পুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আরিফ হোসেন পাঠান হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল দুপুরে পাঁচদোনার ঘটনাটি পুলিশ গণমাধ্যমের খবর থেকে জানতে পারে। এরপরই জেলা পুলিশ চারটি দলে ভাগ হয়ে এ ঘটনার তদন্তে নামে। একটি দল যায় ঘটনাস্থলে, আরেকটি দল যায় সজিব মিয়ার বাড়িতে, অন্য একটি দল যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও বাকি দলটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয় এ–সংক্রান্ত সব সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণের। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজে সজিব মিয়া ও তার সহযোগী মামুন মিয়াকে স্বাভাবিকভাবে হেঁটে যেতে দেখা যায়। সেখানে গুলিবিদ্ধ হওয়ার কোনো ঘটনা দেখা যায়নি। মামুনকে আটক করে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর পুলিশ নিশ্চিত হয়, প্রকাশ্যে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাটি মিথ্যা।

 

মামুন মিয়ার বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সজিব মিয়া ১১ অক্টোবর ওই মামলার শুনানির দিন আদালতের বিচারককে জামিনে থাকা আসামিদের দেওয়া হুমকির বিষয়টি জানান। বিচারকের পরামর্শমতো পরদিন মাধবদী থানায় আসামি টিটু, মাসুদ ও পলাশের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি। হুমকির বিষয়টি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও আসামি তিনজনকে শায়েস্তা করতে মামুনের সহযোগিতায় এই নাটক সাজিয়েছেন সজিব মিয়া। অন্যদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো পুলিশের দলটি জানতে পারে, সেখানে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যেই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকেরা পুলিশকে জানান, তাঁর চামড়ার ঠিক নিচে একটি লোহার টুকরা ছিল, যা দুই হাতে দুই দিকে টেনে ধরার পরই বের হয়ে আসে। কোনো অস্ত্রোপচার করতে হয়নি।

 

পুলিশ আরও জানায়, গতকাল রাতে সজিব মিয়া নিজ বাড়িতে ফেরার পর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এনে সহযোগী মামুনের মুখোমুখি করা হয়। এক পর্যায়ে তাঁরা দুজনে বিষয়টি স্বীকার করেন। তাঁরা পুলিশকে জানান, গতকাল দুপুরে পাঁচদোনার দাসপাড়ার প্রফুল্লের পুকুরপাড়ের এক কোনায় বন্ধু মামুনকে ডেকে নেন সজিব। এ সময় সজিব নিজেই তার বুকের ডান পাশে একটি ছুরি দিয়ে চিরে কালো একটি লোহার টুকরা প্রবেশ করান। এরপর ছুরি দিয়ে শরীরের আরও কয়েকটি স্থানে পোঁচ দেন। পরে মামুনকে বলেন, তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে। পরে তাঁরা ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালে গিয়ে সেখানকার জরুরি বিভাগের চিকিৎসককে গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর বলেন। হাসপাতালটির চিকিৎসক ঝুঁকি না নিয়ে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।

এর আগে গতকাল স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে সজিব মিয়া বলেছিলেন, বাড়ি থেকে বের হয়ে বেলা আড়াইটার দিকে পাঁচদোনার স্যার কেজি গুপ্ত উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছার পর তিনি গুলিবিদ্ধ হন। হত্যা মামলার প্রধান আসামি টিটু, অন্য আসামি মাসুদ ও পলাশের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী দুটি ব্যক্তিগত গাড়িতে করে সেখানে আগে থেকেই ওত পেতে ছিল। বিদ্যালয়টির সামনে পৌঁছামাত্র তাঁর ওপর দেশি অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয়। এ সময় তিনি দৌড়ে পালাতে গেলে একটি গাড়ির ভেতর থেকে কাচ নামিয়ে তাঁকে গুলি করা হয়। পরে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাঁরা পালিয়ে যান।

এক প্রশ্নের উত্তরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. আল আমিন বলেন, ‘মামলার আসামিদের ফাঁসাতে নিজের শরীরে ছুরি দিয়ে আঘাত করে চামড়ার ভেতরে লোহার টুকরা রেখে নিজেকে গুলিবিদ্ধ দাবি করেছিলেন সজিব মিয়া। তাঁর নাটকে বেশ কিছু অসঙ্গতি ছিল। এ থেকে আমাদের সন্দেহ হয়। যেমন তাঁর পরনের শার্ট। গুলিবিদ্ধ হলে পরনের শার্টটিতে ফুটো থাকত, কিন্তু তাতে কোনো ফুটো ছিল না। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে নরসিংদী মডেল থানায় একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।’

সজিব মিয়া ও মামুন মিয়ার বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) অনির্বাণ চৌধুরী বলেন, সজিব কাউকে আঘাত করেননি, অপরাধপ্রবণ মানসিকতার কারণে তিনি নিজেই নিজেকে আঘাত করেছেন। যাঁদের ফাঁসাতে তাঁর এই নাটক, তাঁদের কেউ তাঁর বিরুদ্ধে এখনো কোনো অভিযোগ দেননি। তিনি নিজেও গতকাল থানায় গিয়ে কোনো অভিযোগ করেননি। এ ঘটনায় সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।

আরও খবর: সারাদেশ