সারাদেশ

২৫ বছর পর আপন ঠিকানায় শাহানারা

  পটুয়াখালী প্রতিনিধি ২৫ আগস্ট ২০২৩ , ১০:১০:৫৬ প্রিন্ট সংস্করণ

 

৬ বছর বয়সে কলাপাড়া থেকে হারিয়ে যায় শাহানারা। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ ২৫ বছর। আজ ৩১ বছর বয়সে তিনি খুঁজে বের করেছেন তার পরিবারকে। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধুলাস্বার এলাকায় দীর্ঘ সময় পর নিজের পরিবারকে খুঁজে পান তিনি। এ সময় মা-মেয়ে একে অপরকে চিনতে পেরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তারা। দুই যুগের ও বেশি সময় পর পরিবারের কাছে ফিরে আসায় এলাকাবাসীর মধ্যে খুশির জোয়ার বইছে।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২৫ বছর আগে কলাপাড়া থেকে হারিয়ে যায় শাহানারা। পরে তাকে বিভিন্ন সময় অনেক খোঁজাখুঁজি করেন তার মা শিরিন বেগম ও পরিবারের সদস্যরা কিন্তু কোথাও খুঁজে পাননি। শাহানারা গত একমাস আগে মৎস্য বিভাগের একটি প্রশিক্ষণে কাজ করতে আসেন নিজ গ্রামে কিন্তু তখনও জানতেন না এটাই তার জন্মস্থান। তবে গ্রামটি তার পরিচিত মনে হচ্ছিল। একপর্যায়ে গ্রামের স্থানীয় সুজন নামের এক যুবকের মাধ্যমে পরিবারের খোঁজ পান তিনি।

শাহানারা উপজেলার ধুলাস্বার ইউনিয়নের পশ্চিম ধুলাস্বার গ্রামের মৃত আলী হোসেনের মেয়ে। বর্তমানে তিনি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মানিককাঠি গ্রামের আ. খালেকের স্ত্রী। তার ১৩ বছরের এক কন্যা ও পাঁচ বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।

পরিবারকে ফিরে পেয়ে জীবনের নতুন অধ্যায়ের কথা বলছিলেন ফিরে আসা শাহানারা। তিনি বলেন, প্রায় দুইযুগেরও বেশি সময় আগে কীভাবে আমি বরিশাল যাই সেটা আমার মনে নেই। তবে সেখানকার এক মহিলা আমাকে নিয়ে বরিশালের একটি এতিমখানায় দিয়ে আসেন। পরে আমি সেখানেই বড় হই আর আমার নাম রাখা হয় ইয়াসমিন। ১৬ বছর আগে আ. খালেকের সঙ্গে আমাকে বিয়ে দেন জেলা প্রশাসক। আমি এখন পরিবারের সঙ্গে বরিশাল থাকি। সেখানে পরিবার নিয়ে ভালোই আছি।

তিনি আরও বলেন, গত কয়েক মাস আগে আমি সরকারিভাবে মৎস্য বিভাগের মাধ্যমে ট্রেনিং করতে এই গ্রামে আসি। আসার পর থেকেই কেমন যেন আমার কাছে এই গ্রামটা পূর্ব পরিচিত মনে হয়। পরে আমি এখানের পরিচিত একজনের সহযোগিতা নেই। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ অনেকের সহযোগিতায় আমি আমার পরিবারের খোঁজ পাই। আমি সকলকে ধন্যবাদ জানাই, আমি আমার হারানো পরিবারকে খুঁজে পেয়েছি। আমি সত্যিই অনেক খুশি। আমার আর চাওয়ার কিছু নেই।

শাহানারার (ইয়াসমিন) স্বামী আ. খালেক (৬০) বলেন, গত ১৬ বছর আগে আমার প্রথম স্ত্রী মারা যায় এরপরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এতিমখানা থেকে আমি তাকে বিয়ে করি। আমাদের দুটি সন্তান রয়েছে। এতদিন জানতাম যে তার কোনো পরিবার নেই তবে আজকে থেকে নতুন পরিবার পেলাম। এর থেকে আনন্দের কি হতে পারে। পরবর্তী দিনগুলো আমরা একসঙ্গে কাটাতে চাই। আমার সন্তানরাও তার নানা বাড়ি ফিরে পেয়ে খুব খুশি হয়েছে।

শাহানারার (ইয়াসমিন) মা শিরীন আক্তার বলেন, আমার মেয়ে যখন হারিয়ে যায় তখন তার বয়স ৬ বছর। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করার পরও তাকে খুঁজে পাইনি। আল্লাহ তা’আলা আমার মেয়েকে আমার বুকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমি আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই। আজ ওর বাবা বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতেন বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

স্থানীয় উদ্যোক্তা সুজন হাওলাদার বলেন, আমি ঝিনুক চাষ করি ঝিনুকের ট্রেনিং করতে এসে শাহানারা এই গ্রামকে তার পূর্ব পরিচিত মনে হচ্ছে, এমনটা বলে বিস্তারিত জানান। একপর্যায়ে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেম্বারদের সহযোগিতায় তার পরিবারকে খুঁজে পাই। এই কাজটি করতে পেরে নিজের কাছে খুব ভালো লাগছে।

ধুলাস্বার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফেজ আব্দুর রহিম বলেন, গতকাল আমার কাছে আসার পরে আমি বিভিন্ন স্থানে খোঁজখবর নিয়ে তার পরিবারের সন্ধান পাই। পরে তার হারিয়ে যাওয়ার কথা উভয় পক্ষের কাছে শুনে নিশ্চিত হই যে সেই হারিয়ে যাওয়া মেয়েটি এই শাহানারা। আজকে তিনি তার মায়ের কাছে ফিরেছেন। আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি, তারা যেন সারা জীবন সুখে থাকেন।

আরও খবর: সারাদেশ