জাতীয়

স্বামী-স্ত্রীর প্রকল্পে’ যোগ্য হয়েছে অযোগ্য ঠিকাদার

  প্রতিনিধি ৯ মার্চ ২০২৪ , ১:০৮:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ

নীলাকাশ টুডে

পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পের কেনাকাটায় বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ৯টি দরপত্রে প্রায় শতকোটি টাকার জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম কেনার উদ্যোগ নেয় সরকার। এসব কেনাকাটায় সর্বনিম্ন দরদাতা না হয়েও ৬৪ কোটি টাকার বেশি ৫টি কাজ পেয়েছে বাংলাদেশ সায়েন্স হাউস। বাকি চারটি কাজও এই প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। একাধিক দরদাতা জানান, বাংলাদেশ সায়েন্স হাউস নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দিতে সব অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ও হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলরুবা ইয়াসমিন লিজা। সর্বনিম্ন দরদাতাকে বাদ দিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানকে পাঁচটি দরপত্রের প্রায় ৬৪ কোটি ৩৫ লাখ ৮০ হাজার টাকার কাজ পাইয়ে দিয়েছেন। আরও চারটি দরপত্রের কাজ পাইয়ে দিতে সব আয়োজন শেষ করেছেন। প্রকল্প পরিচালকের (পিডি) স্বামী ও একই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মশিউর রহমান যন্ত্রপাতি ক্রয়ে কারিগরি কমিটি বা মূল্যায়ন কমিটিতে না থেকেও পছন্দের কোম্পানিকে কাজ পাইয়ে দিতে পেছন থেকে কলকাঠি নেড়েছেন। স্বামী-স্ত্রী ছাড়াও এই কাজে আরও জড়িত ছিলেন ন্যাশনাল ইলেকট্রো-মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের সহকারী প্রকৌশলী মাইনুর শুভ, কারিগরি কমিটিতে সদস্য সচিব রেডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সুমন কুমার বালা, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য গাইনি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট মোসা. ফেরদৌসী আক্তার, টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশন কমিটির সভাপতি সিনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি) ডা. মনিরুল ইসলাম।

দরপত্রের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পটুয়াখালী সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পের আওতায় নয়টি দরপত্রে ৯৬ কোটি ৪০ লাখ ১ হাজার টাকার যন্ত্রপাতি কেনার উদ্যোগ নেয় সরকার। সেই লক্ষ্যে গত ২৪ ডিসেম্বর দরপত্র আহ্বান করা হয়। এর মধ্যে ১৭ কোটি ৪০ লাখ টাকায় একটি সিটি স্ক্যান মেশিন, দুইটি ফোর ডি আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন সঙ্গে ভিডিও প্রিন্টার এবং আরও দুটি সাধারণ আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। অন্য লটে ৬ কোটি ১৩ লাখ ৯৮ হাজার টাকায় ফিজিওলজি বিভিাগ, বায়োক্যামিস্ট্রি ও ফার্মাকোলজি বিভাগের আওতায় ৮৫ ধরনের ২ হাজার ২৫২টি যন্ত্রপাতি ও রি-এজেন্ট, ৫ কোটি ৪১ লাখ ২৯ হাজার টাকায় প্যাথলজি ও ইমুনলজি বিভাগে ৬৪ ধরনের ২ হাজার ২০টি যন্ত্রপাতি ও রি-এজেন্ট, ৬ কোটি ৪৪ লাখ ৭৪ হাজার টাকায় মাইক্রো বায়োলজি ও ভাইরোলজি বিভাগে ১২৩ ধরনের ১ হাজার ৭০৭টি যন্ত্রপাতি ও রি-এজেন্ট, ১২ কোটি ৯১ লাখ ২ হাজার টাকায় ব্লাড ব্যাংক ও ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগে ৫০ ধরনের ৬৯০টি যন্ত্রপাতি ও রি-এজেন্ট, ৯ কোটি ১৯ লাখ ৩৮ হাজার টাকায় অপারেশন থিয়েটার ও হেমাটোলজি বিভাগে ২৮ ধরনের ২৫৪টি সরঞ্জাম, ১৯ কোটি টাকায় একটি এমআরআই মেশিন, ৯ কোটি ৮৯ লাখ ৬০ হাজার টাকায় অ্যানেস্থেসিওলজি ও আইসিইউ এবং স্টেলাইজার রুম স্থাপনে ১১ ধরনের ১০৮টি সরঞ্জাম এবং ১০ কোটি টাকা এক্স-রে বিভাগে ৫ ধরনের ৭টি সরঞ্জাম কেনাকাটার উদ্যোগ নেওয়া হয়। গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন ভয়াবহ তথ্য।

গণমাধ্যমের খবরে উল্লেখ করা হয়, ৯টি দরপত্রে বাংলাদেশ সায়েন্স হাউস, বগুড়া ট্রেড সেন্টার, জেনেসিস ট্রেডিং, এইচটিএমএস লিমিটেড, মাইক্রো ট্রেডার্স, আনিফকো হেলথ কেয়ার, নিউ ভিশন মেডিসিস্টেম, ওশান এন্টারপ্রাইজ, ট্রেড ভিশন, আরপি এন্টারপ্রাইজ, ইনোভেশন টেকনোলজিস্ট ও মেডিলিঙ্ক টেকনো হাটসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়।

পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও প্রকল্প পরিচালক ডা. দিলরুবা ইয়াসমিন লিজা বলেন, টেন্ডার কমিটির আহ্বানকৃত দরপত্রের শর্তাবলি অনুযায়ী যারা দরপত্র দাখিল করেছেন, শুধু তাদের দরপত্র গৃহীত হয়েছে। আর যারা দরপত্রের শর্তাবলি এবং কর্তৃপক্ষের চাহিদাকৃত মালামালের বর্ণনা অনুযায়ী দরপত্র দাখিল করতে পারেনি তাদের দরপত্র বাতিল করা হয়েছে। এখানে কোনো অনিয়ম কিংবা পক্ষপাতিত্ব করা হয়নি।

 

আরও খবর: জাতীয়