জাতীয়

স্বতন্ত্রই এমপির প্রশ্নের উত্তরে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী

  প্রতিনিধি ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ , ৬:৩২:৪৩ প্রিন্ট সংস্করণ

নীলাকাশ টুডে 

 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্যদের স্বতন্ত্র হিসেবেই ভূমিকা পালন করতে নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্যরা দলে যোগদানের দাবি জানালেও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আপনারাও আমার, সরকারি দলও আমার। অর্থাৎ ডান হাতও আমার, বাম হাতও আমার। আপনারা রিভার্জ ফোর্স থাকুন। সংসদে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারবেন, আবার উন্নয়নও তুলে ধরতে পারবেন। দুই সুবিধাই আপনারা পাবেন। আর দল থেকেও তো কাউকে বহিষ্কার করা হয়নি।

রোববার গণভবনে ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্যের সঙ্গে বৈঠকে এমন নির্দেশনা দেন তিনি। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সংসদ-সদস্য গণমাধ্যমকে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নির্বাচিত ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্য ১০ জন সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি পান। তবে সভায় সংরক্ষিত নারী আসনে প্রার্থী মনোনীত করার দায়িত্ব আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়েছেন স্বতন্ত্র এমপিরা।

বৈঠকে উপস্থিত অধিকাংশ এমপিই বক্তব্য রেখেছেন বলে জানা গেছে। প্রায় প্রত্যেক এমপিই তাদের এলাকায় আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করতে গিয়ে বাধাগ্রস্ত হওয়ার কথা বলেছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। জবাবে শেখ হাসিনা তাদের দলের হয়ে বিভেদ ভুলে উন্নয়ন অব্যাহত রাখার স্বার্থে মিলেমিশে কাজ করার নির্দেশনা দেন। স্বতন্ত্ররা দলের বাইরের কেউ নন। যেহেতু স্বতন্ত্রভাবে জয়ী হয়েছেন তাই সংসদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে হবে। প্রয়োজনে সমালোচনা করতেও দ্বিধাবোধ না করতে বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। জাতীয় সংসদকে প্রাণবন্ত রাখার জন্য স্বতন্ত্রদের একটা বড় সুযোগ আছে কথা বলার।

বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্যের মধ্যে ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র এমপি মজিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, সামনে সংরক্ষিত নারী আসনের মনোনয়ন রয়েছে। আমরা (স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্য) যতগুলো সংরক্ষিত নারী আসন পাই। আমরা এসব আসন নেব না। আপনাকে দায়িত্ব দিচ্ছি। আপনিই ঠিক করে দেবেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দলের অনেক ত্যাগী ও পরীক্ষিত নারী রয়েছেন, তাদের পর্যায়ক্রমে মূল্যায়ন করা হবে।

কুমিল্লা-২ আসনের নির্বাচিত স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্য অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ বলেন, নেত্রী আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। আমি স্বতন্ত্র নির্বাচিত হলেও নৌকার সঙ্গে থাকতে চাই। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আপনাকে কি আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে? আপনি তো আওয়ামী লীগেই আছেন। দলের সব সুযোগ-সুবিধাই পাবেন। আপনারা আমার রিজার্ভ ফোর্স হিসাবে থাকুন। ডান হাতও আমার, বাম হাতও আমার। আপনারা সরকারের সমালোচনাও করবেন, উন্নয়নও তুলে ধরবেন।

গাজীপুর-৫ আসনে স্বতন্ত্র এমপি আখতারুজ্জামান বলেন, আপনি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই সংগ্রাম করেছেন। আপনার বহু ছবি আমি দেখেছি। কিন্তু সবচেয়ে গর্বের ছবি, আমার কাছে বিশ্বব্যাংকের প্রধানের হাতে আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর ছবি। এ সময় পদ্মা সেতু নিয়ে শেখ হাসিনা দীর্ঘক্ষণ বক্তৃতা করেন।
বরিশাল-৪ আসনের স্বতন্ত্র নির্বাচিত সংসদ-সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ বলেন, আমার এখানে তো নৌকা ছিল না। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছি। আমাকে নৌকায় নিয়ে নেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যেভাবে আছো, সেভাবেই থাকো।

একজন স্বতন্ত্র এমপি বলেন, তারা নৌকার বিপরীতে নামতে গিয়ে কখনো কখনো নৌকার জন্যই ভোট চেয়ে ফেলেছেন। কারণ এই নৌকা তাদের আবেগ ও গৌরবের আরেক নাম।

কুমিল্লা-৪ আসন থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্য উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিএনপি-জামায়াত দেশকে নিয়ে অনেক বড় চক্রান্ত করেছিল। আপনার বুদ্ধিমত্তার কাছে তারা পরাজিত হয়েছে। এ সময় তিনি কুমিল্লা নামে বিভাগ দাবি করেন।

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বৈঠক শুরু হয়। প্রথমে প্রায় ৪০ মিনিট সূচনা বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন। এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে স্বতন্ত্র ৬২ জন সংসদ-সদস্য অংশ নেন। রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত এ বৈঠক চলে।

বৈঠক শেষে গণভবনের গেটে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্যরা স্বতন্ত্রই থাকবেন। তারা সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারবে। এই একটা বিষয় আমাদের সংসদ নেতা, দলের সভাপতি পরিষ্কারভাবে বলেছেন। স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্যরা তাদের অনুকূলে সংরক্ষিত আসনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অর্পণ করেছেন। ওই আসনে প্রধানমন্ত্রী যাদের মনোনয়ন দেবেন স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্যরা তাতে সমর্থন জানাবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, দ্বাদশ নির্বাচন উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিভিন্ন মার্কার কিছু সংঘাত, সহিংসতা, অন্তর্কলহ, এসব বিষয় রয়েছে। কোথাও কোথাও বিচ্ছিন্নভাবে অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটছে। এটা আর হতে দেওয়া যাবে না।

গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে স্বতন্ত্র এমপিদের বৈঠক শেষে জাতীয় সংসদের হুইপ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেছেন, স্বতন্ত্র এমপিরা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে আছেন। তারা রাজনীতি আওয়ামী লীগের সঙ্গেই করবেন। তবে সংসদে তারা স্বতন্ত্র হিসাবে তাদের কার্যবিধি অনুযায়ী ভূমিকা পালন করবেন।

স্বতন্ত্র ৬২ জনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক কেমন হবে-জানতে চাইলে হুইপ স্বপন বলেন, পার্লামেন্টারি পার্টি ও দল দুটি আসলে এক এবং অভিন্ন নয়। পার্লামেন্টারি পার্টি হিসাবে আওয়ামী লীগ যেহেতু মনোনীত হয়েছে, তারা সেভাবেই ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে বিজয় হয়েছেন, তারা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে আছেন। সুতরাং তারা রাজনীতি আওয়ামী লীগের সঙ্গেই করবেন। তবে সংসদে তারা স্বতন্ত্র হিসাবে তাদের কার্যবিধি অনুযায়ী ভূমিকা পালন করবেন।

বৈঠক শেষে গণভবনের গেটে স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্য এ কে আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা যেহেতু নৌকা পাইনি, আমরা দলের বিভিন্ন পদে আছি, দায়িত্বে আছি। আবার আমরা স্বতন্ত্র সংসদ-সদস্য। আমরা বলেছি, এলাকাতে কাজ করতে নানা অসুবিধা হচ্ছে। সুতরাং দলের মধ্যে যেহেতু আছি সেহেতু আমাদের একত্রিত করা হোক।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের বলেছেন, স্বতন্ত্র হিসাবেই তোমরা কাজ করো। এখানে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ এটা আমার ডান হাত, ওটা আমার বাম হাত। যারা দলীয় মনোনয়ন পায়নি, তারা সংসদে বেশি আলোচনা ও সমালোচনার সুযোগ পাবে।

ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ-সদস্য খসরু চৌধুরী বলেন, যারা উপস্থিত ছিলেন প্রায় সবাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, আমাদের গায়ে যদি এখনো স্বতন্ত্রের সিল থাকে, তাহলে দলের পদে থেকে কাজ করতে আমাদের অসুবিধা হবে এবং এখনো হচ্ছে, বিভিন্ন কথা বলছে। সেক্ষেত্রে আপনার (প্রধানমন্ত্রী) মতামত কী হবে? প্রধানমন্ত্রী আপনাদের কী বার্তা দিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবাইকে একই বার্তা দিয়েছেন। বলেছেন, দলীয় সংসদ-সদস্যরা যতটুকু কথা বলতে পারবেন, তার চেয়ে আমরা বেশি কথা বলার সুযোগ পাব।

আরও খবর: জাতীয়