জাতীয়

সংঘর্ষ ভাঙচুর আগুন, গুলিতে নিহত তিন, গ্রেফতার ৮০০, তিন পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে অস্ত্র ছিনতাই

  প্রতিনিধি ১ নভেম্বর ২০২৩ , ২:০৪:২৭ প্রিন্ট সংস্করণ

নীলাকাশ টুডে

বিএনপি-জামায়াতের ডাকা তিন দিনের রেল, সড়ক ও নৌপথ অবরোধের প্রথমদিন মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ, গুলি, যানবাহন ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় তিনজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে বিএনপির দুজন নিহত হন। এছাড়া সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জিলু আহমদ দিলু নিহত হন। যদিও নিহতের স্বজন ও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এটি একটি দুর্ঘটনা। অন্যদিকে স্থানীয় বিএনপি বলেছে, পুলিশের গাড়িচাপায় তার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় সিলেটে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে যুবদল।

অবরোধ চলাকালে ভৈরবে বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর হয়েছে। এ সময় পুলিশ ও সাংবাদিকসহ ৬০ জন আহত হন। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে তিন পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। তাদের অস্ত্রও ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে বিভিন্ন স্থানে শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে টায়ারে আগুন ধরিয়ে দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করেন। বিভিন্ন স্থানে বিএনপি কর্মীরা বাস ভাঙচুর করেন। এ সময় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের ধাওয়া-পালটাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। কোথাও কোথাও বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পালটাধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে মসজিদের মাইক থেকে পুলিশকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা।

এদিকে জেলায় জেলায় দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলেও ছোটখাটো যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করে। বিভিন্ন স্থানে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস নৈরাজ্যের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ শান্তি মিছিল করে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন স্থানে বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টহল দেয়। বিভিন্ন স্থানে গাড়ি ভাঙচুর ও নাশকতার অভিযোগে বিএনপি-জামায়াতের ৮০০ নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে কুষ্টিয়ায় বিএনপি দলীয় সাবেক তিন সংসদ সদস্য রয়েছেন। এছাড়া অনেক জেলা-উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে গ্রেফতার আতঙ্কে বাড়ি ছেড়ে বেশিরভাগ নেতাকর্মী আত্মগোপনে চলে গেছেন।

দূরপাল্লার বাস বন্ধ ট্রেন ও লঞ্চে যাত্রী কম : বিএনপি-জামায়াতের তিন দিনের অবরোধের প্রথম দিন মঙ্গলবার রাজধানী থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ ছিল। তবে ঢাকার ভেতরের সড়কে অল্পসংখ্যক বাস চলাচল করেছে। ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও ছিল কম। গণপরিবহণের অভাবে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে যাত্রীদের। তবে ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল করলেও সেগুলোতে যাত্রী উপস্থিতি খুবই কম ছিল। এদিন রাত ৮টা পর্যন্ত ঢাকা নদী বন্দর (সদরঘাট) থেকে ২৮টি লঞ্চ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে ছেড়ে গেছে। স্বাভাবিক দিনে এ সময় অন্তত ৫০টি লঞ্চ ছেড়ে যায়। অপর দিকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শিডিউল অনুযায়ী সব ট্রেন ছেড়ে গেছে।

সরেজমিন গাবতলী বাস টার্মিনালে দেখা গেছে, দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন অনেক যাত্রী। তবে বিকাল থেকে কয়েকটি বাস দূরপাল্লার রুটে ছেড়ে যেতে দেখা গেছে।

গাবতলী টার্মিনাল ও আশপাশের এলাকায় অবরোধ আহ্বানকারী বিএনপি-জামায়াতের কর্মী সমর্থকদের দেখা যায়নি। তবে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দিতে দেখা গেছে।

প্রায় একই ধরনের চিত্র ছিল মহাখালী বাস টার্মিনালে। এ টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, সারি সারি বাস পার্কিং করে রাখা হয়েছে। অলস সময় কাটাচ্ছেন বাসের কর্মচারীরা। তবে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে চলাচলকারী এনা পরিবহণের কাউন্টারের চিত্র ছিল ভিন্ন। দুপুর ১২টার দিকে টার্মিনালে এনা বাসে যাত্রী তুলতে দেখা গেছে।

ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক : কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার বলেন, সকাল থেকেই সময় মেনে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ২-৩টি ট্রেন ১০-১৫ মিনিট বিলম্বে চলাচল করেছে। পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল থেকেও সময় মেনে ঢাকায় আসে সব কয়টি ট্রেন। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

লঞ্চে যাত্রী কম : এদিন রাত ৮টা পর্যন্ত সদরঘাট থেকে ২৮টি লঞ্চ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এদিন ৪৬টি লঞ্চ ঢাকায় এসেছে। বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তারা জানান, বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে সোমবার রাতে ছেড়ে আসা লঞ্চ মঙ্গলবার ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। বেশির ভাগ লঞ্চে যাত্রী কম ছিল। ঢাকার বাইরে বিস্ফোরণ, বাসে আগুন ও ভাঙচুর এবং গ্রেফতার সম্পর্কে ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

কিশোরগঞ্জ ও ভৈরব : সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কের কুলিয়ারচরের ছয়সূতি এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভৈরব দুর্জয় চৌরাস্তা মোড়ে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। ছয়সূতি এলাকায় অবরোধকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েকজন অবরোধকারী গুলিবিদ্ধ হন। তাদের মধ্যে সংকটাপন্ন অবস্থায় ছাত্রদল নেতা রেফায়েত উল্লাহকে (২৩) পাশের বাজিতপুর উপজেলার জহিরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া ইউনিয়ন কৃষক দল সভাপতি বিল্লাল মিয়া (৩২) নিহত হয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে দাবি করা হয়েছে। বাজিতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম জানান, ছাত্রদল নেতা রেফায়েত নিহত হয়েছেন। কুলিয়ারচর থানার ওসি গোলাম মোস্তফা সংঘর্ষকালে তিনিসহ ১৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

ছয়সূতি ইউনিয়নের চকবাজারের বাসিন্দা রেফায়েতের বাবা কাউছার মিয়া বলেন, আমার ছেলে ছাত্রদল করলেও অটোরিকশা চালাত। বিল্লালের মা ছেলের মৃত্যুর খবরে হতবাক হয়েছেন। বিল্লালের স্ত্রী আন্না বেগম বিলাপ করে বলেন, সকালে নাশতা খেয়ে বাসা থেকে বের হয় বিল্লাল। এক ঘণ্টা পর খবর পেলাম পুলিশের গুলিতে সে মারা গেছে। তিনটি সন্তান নিয়ে কীভাবে বেঁচে থাকব।

এদিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভৈরব শহরের বাসস্ট্যান্ড দুর্জয় মোড়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের পালটাপালটি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। শহর বিএনপির সভাপতি শাহিনের নেতৃত্বে মিছিল বের করে নেতাকর্মীরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাধা দেন। এ সময় উভয় পক্ষের সংঘর্ষে ১০ জন আহত হন। পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক আহমেদ সৌরভ ও ছাত্রলীগের রনি গুরুতর আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার গ্যাস ছোড়ে। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। বিএনপির নেতাকর্মীরা পালিয়ে গেলে আওয়ামী লীগের কর্মীরা উপজেলা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর করে। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ভাঙচুরের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ জানান, কুলিয়ারচরের ছয়সূতিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে দুই অবরোধকারী নিহত হয়েছেন। এ সময় ১৫ পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন।

চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের পাল্টাপা্ল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ১০টি বাসে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, রেললাইনে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপসহ বিভিন্ন ঘটনা ঘটে। পুলিশের হাতে আটক বিএনপি কর্মীদের দেখানো স্থান থেকে সাতটি ককটেল উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের আকবর শাহ থানার পাকা রাস্তার মাথা এলাকায় অবরোধের সমর্থনে ঝটিকা মিছিল বের করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। মিছিল থেকে পণ্যবোঝাই ট্রাক ভাঙচুরের সময় পুলিশ ধাওয়া দেয়। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করেও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে পিকেটাররা। সিটি গেট এলাকায় বাস ও প্রাইভেট কারে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় পিকেটাররা। ধাওয়া দিয়ে পুলিশ ১৩ জনকে আটক করে।

ভোর ৬টার দিকে নগরীর ইপিজেড থানার সী-ম্যান্স হোস্টেল এলাকায় দুর্বৃত্তরা একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, যাত্রীবেশে একজন যুবক ওই বাসে উঠে আগুন দিয়ে নেমে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ৯ ও ১০ নম্বর লাইনের মাঝখানে দুর্বৃত্তরা পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে। চট্টগ্রাম শহরের প্রধান প্রবেশপথ সিটি গেট দিয়ে দূরপাল্লার বাস বা পণ্যবোঝাই ট্রাক চলাচল তেমন একটা দেখা যায়নি। তবে ব্যক্তিগত গাড়ি বা কম দূরত্বের কিছু হিউম্যান হলার চলাচল করে। চট্টগ্রাম শাহ আমানত সেতু দিয়েও দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়নি।

রাজশাহী : অবরোধে আন্তঃজেলা বা দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ ছিল। তবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। মহানগরীতে অটোরিকশা, মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য হালকা যান চলাচল করেছে। মহানগরীর উপকণ্ঠ কাপাসিয়া এলাকায় জেলা বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে ১৫-২০ জন নেতাকর্মী বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় রাজশাহী-ঢাকা মাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করা হয়। মহানগরীর কাদিরগঞ্জে মহানগর ছাত্রদলের ব্যানারে ১০-১২ জন নেতাকর্মী আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। পরে পুলিশ সেখানে গেলে নেতাকর্মীরা সরে যান।

খুলনা : খুলনায় পরিত্যক্ত বাসে অগ্নিকাণ্ড, ককটেল বিস্ফোরণ এবং মিছিল করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। দূরপাল্লার কোনো বাস খুলনা থেকে ছেড়ে না গেলেও আন্তঃজেলার বাস চলাচল স্বাভাবিক ছিল। সোমবার রাতে রূপসা উপজেলার বাগমারা এলাকায় একটি পরিত্যক্ত বাসে দুর্বৃত্তরা অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া দাকোপের কৈলাসগঞ্জ ইউনিয়নে ককটেল বিস্ফোরণ ও টায়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহে বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তবে পুলিশের ধাওয়ায় তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। ওই সময় বিআরটিসি বাসসহ যানবাহনের গ্লাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার একপর্যায়ে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজারে বিএনপিকর্মীরা অবরোধকালে তিন পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে আহত করে। পুলিশ সদস্যদের অস্ত্রও ছিনিয়ে নেওয়া হয়। আড়াইহাজারের পাঁচরুখী এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করলে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পালটাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের তিন সদস্যকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। আহতরা হলেন-আড়াইহাজার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ুন, এএসআই আবদুল মতিন ও কনস্টেবল নজরুল। তাদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বিএনপির দাবি-বিনা উসকানিতে পুলিশ গুলি চালিয়ে একাধিক নেতাকর্মীকে আহত করেছে।

আড়াইহাজার থানার ওসি আহসান বলেন, বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করলে পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে দেয়। দলটির নেতাকর্মীরা তিন পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে আহত করেছে।

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাকর্মীরা রূপগঞ্জের ৩০০ ফুট সড়ক অবরোধ করে। বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। তারা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় সড়কের উভয় দিকে যানবাহন বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ধাওয়া দিলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়।

বন্দর (নারায়ণগঞ্জ) : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়কের বন্দরের দেওয়ান গেট সংলগ্ন এলাকায় যানবাহন ভাঙচুর ও দুটি পিকআপ ভ্যানে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা।

বগুড়া : হেলমেট পরে লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বনানী, মাটিডালি ও নওদাপাড়ায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। মাটিডালি ও এরুলিয়া এলাকায় শাহ ফতেহ আলী পরিবহণের তিনটি বাস ভাঙচুর করা হয়। এ সময় পাঁচ যাত্রী আহত হন। অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া কোনো যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না।

কুমিল্লা : কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার ঝাগরজুলি এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবরোধকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পালটাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ, ককটেল বিস্ফোরণ ও ফাঁকা গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অবরোধের সমর্থনে বিএনপিকর্মীদের সঙ্গে জামায়াতকর্মীরা যুক্ত হয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। ইটপাটকেলে পুলিশের একটি গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। পুলিশের কয়েকজন সদস্যের গায়েও ইট লাগে।

সিলেট : নগরীর দক্ষিণ সুরমার বাইপাসের গালিমপুর রাস্তার মুখে বিএনপিকর্মীরা বাসে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেন। যাত্রী ও পরিবহণ শ্রমিকরা প্রতিরোধ করলে অবরোধকারীরা পালিয়ে যান। এ সময় পুলিশ ধাওয়া করে মিজানুর রহমান ও সাবুল মিয়া নামের দুই বিএনপিকর্মীকে আটক করে।
এদিকে, দক্ষিণ সুরমায় কনস্টেবলের মিস ফায়ারে ওসি শামসুদ্দোহা আহত হয়েছেন। সহকারী পুলিশ কমিশনারের ব্যক্তিগত সহকারীর শটগান থেকে অসাবধানতাবশত গুলি বের হলে তিনি আহত হন। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জ-ধুলিয়াখাল বাইপাস সড়কে টায়ারে আগুন ধরিয়ে অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ ধাওয়া দেয়। বাহুবল উপজেলার মিরপুর বাজারে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে পুলিশসহ ২০ জন আহত হয়েছেন।

হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর) : হাজীগঞ্জ উপজেলার সেন্দ্রা বাজারে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে তিনজন আহত হয়েছেন। বিএনপিকর্মীরা হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ সড়কে অবস্থান নিয়ে পিকেটিং করেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রতিরোধ করতে এলে ধাওয়া-পালটাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া- পালটাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। মিছিল থেকে বিএনপির পাঁচ নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

বরিশাল : বরিশালে অন্য দিনের তুলনায় কম সংখ্যক দূরপাল্লার বাস ও অভ্যন্তরীণ লঞ্চ চলাচল করেছে। দোকানপাট-অফিস আদালত সাধারণ দিনের মতো চলেছে। নগরীর মোড়ে মোড়ে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্কাবস্থানে ছিল। নগরীর মনিকা চৌধুরী জানান, অবরোধ থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকায় বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছিলাম। কিন্তু রাস্তায় নেমে দেখি অন্য সাধারণ দিনের মতোই লোকজন রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো অঘটন চোখে পড়েনি।

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) : সীতাকুণ্ড উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের পাক্কার মাথায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবরোধকারীরা ৮-১০টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম নগরের আকবরশাহ থানার পুলিশ ১০ জনকে আটক করেছে।

টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে মসজিদের মাইক থেকে পুলিশকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা। এ সময় বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকীকে পুলিশ আটক করতে গেলে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।

এছাড়া জামালপুর, যশোর, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা।

কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী ও সাধারণ সম্পাদক সোহরাব উদ্দিন এবং দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লাকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা তিনজনই কুষ্টিয়ার একাধিকবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ-সদস্য। তাদের সবাইকে নাশকতার মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকার পতন ঠেকাতে ও আন্দোলন দমন করতে মিথ্যা, বানোয়াট এবং সাজানো মামলায় বারবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ-সদস্যদের গ্রেফতার করছে পুলিশ। এছাড়া জেলা যুবদলের সহসভাপতি মেজবাউর রহমানকে জেলা বিএনপি কার্যালয় থেকে আটক করেছে পুলিশ।

এছাড়া বরিশালে ৯, সাতক্ষীরায় ২৪, মেহেরপুরে ১২ জন, ঝিনাইদহে ৪৫, পাবনায় একজন, ময়মনসিংহের ফুলপুরে একজন, নাটোরের লালপুরে ১৩, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জে ৩০, বরগুনার তালতলীতে তিনজন, সুনামগঞ্জে ১০, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে চার, পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায় তিন, সিলেটে দুই, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে সাত, লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে আট, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে সাত, বান্দরবানে ছয়, নওগাঁর নিয়ামতপুরে পাঁচ, নীলফামারীতে আট, চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় তিন, চাঁদপুরের কচুয়ায় পাঁচ এবং ঢাকার নবাবগঞ্জে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

আরও খবর: জাতীয়