সম্পাদকীয়

শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষিত করার দায়িত্ব কি সুধু শিক্ষকের?

  প্রতিনিধি ১৮ নভেম্বর ২০২৩ , ৪:৫৪:৫২ প্রিন্ট সংস্করণ

 

পুতুল

শিশুর পড়াশোনার বিষয়ে যেমন শিক্ষকের দ্বায় রয়েছে, তেমনি সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাবা-মা তথা পরিবারের ভূমিকা কোনো অংশেই কম নয়। বিদ্যালয় যদিও বিদ্যার্জনের প্ল্যাটফর্ম, তথাপি শিশুর মৌলিক শিক্ষাটা গড়ে ওঠে পরিবার থেকে। ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’ প্রচলিত এ বাক্যটি প্রতিটি বাবা-মায়েরই মনের কথা। প্রত্যেক বাবা-মাই চান তাদের সন্তান যেন হয় সুসন্তান, তারা যেন মানুষের মতো মানুষ হয়, তারা যেন সুখে শান্তিতে জীবন যাপন করতে পারে। সন্তানের চেয়ে বড় আপন বোধ হয় দুনিয়াতে আর কেউই নয়। অনেক ক্ষেত্রেই সে সন্তানদের বাবা-মার প্রতি প্রতিদান হয় কষ্টদায়ক, বেদনাদায়ক। আর এ জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আসলে মা-বাবারাই দায়ী। পড়াশোনা করলে মানুষ শিক্ষিত হতে পারে। কিন্তু সুশিক্ষিত হচ্ছে কিনা কিংবা প্রকৃত মানুষ হচ্ছে কিনা- এটা দেখার দায়িত্ব আগে বাবা-মায়ের, পরে শিক্ষক তথা অন্যদের। শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা বা ভিত্তিমূলক শিক্ষাটা গড়ে ওঠে পরিবার থেকেই। সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে, কী করছে এগুলো দেখার দায়িত্ব বাবা-মায়েরই। পারিবারিক শিক্ষা বলতে যে কথাটা বুঝানো হয়- তা যদি যথাযথ ভাবে সন্তানদের দেওয়া হয়, সে সন্তানদের বিপথে যাওয়ার বা বিগড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে।

নতুন প্রজন্ম যেন দিনদিন নৈতিকতা আর মূল্যবোধকে ভুলে যেতে বসেছে। তথ্যপ্রযুক্তি ও আকাশ সংস্কৃতির কল্যাণে বিনোদন এখন মানুষের দোরগোড়ায়। সেই বিনোদন কতটা সুস্থ কিংবা অসুস্থ- তা আমরা কেউই খতিয়ে দেখতে চাই না। সবাই খুশি অত্যাধুনিকতার দম্ভে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় তারা অত্যাধুনিক হচ্ছে- এটা ভালো কথা। কিন্তু আধুনিকতা মানে উগ্রতা নয়, আধুনিকতা মানে উশৃংখলতা নয়। বিগত কয়েক বছরে তথ্যপ্রযুক্তিতে দেশ এগিয়েছে বহুগুণ। আধুনিকতার ছদ্মবেশ ধারণ করতে গিয়ে ছেলে কিবা মেয়ে বাবা-মার সামনেই মোবাইল কিংবা টেলিভিশনে দেখছে আপত্তিকর কোনো নাটক কিংবা সিনেমা। ফলে মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটছে- হারাচ্ছে নতুন প্রজন্মের নম্রতা, ভদ্রতা ও শিষ্টাচার। সবার জন্য প্রযোজ্য না হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ কথা প্রযোজ্য। আর এ জন্য দায়ী মা-বাবার উদাসীনতা, শিক্ষকদের দায়হীন শিক্ষা, সমাজব্যবস্থা, সর্বোপরি শিক্ষাব্যবস্থা। আর সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে আধুনিক প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় অবদান মোবাইল ফোন। মোবাইলের ভালো ব্যবহার সর্বাধিক। কিন্তু এ প্রজন্মের অধিকাংশরাই একে ব্যবহার করছে সর্বাধিক নেতিবাচকভাবে। পারিবারিক শিক্ষার অভাব এখানে প্রকট রূপ ধারণ করেছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, নৈতিকতা কী? এ বিষয়ে আগে জানতে হবে আমাদের। নীতি সম্পর্কিত বোধই হচ্ছে নৈতিকতা। এটি এমন একটি মানবিক গুণাবলি- যা অন্য আরও অনেক গুণের সমন্বয়ে তৈরি হয়। মানুষ তার পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও ধর্মের ওপর ভিত্তি করে সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়মনীতি খুব সচেতন ভাবে মেনে চলে। সমাজ বা রাষ্ট্র আরোপিত এসব নিয়ম-নীতি ও আচারণবিধি মানুষের জীপন-যাপনকে প্রভাবিত করে। এই নিয়মগুলো যথাযথভাবে মেনে চলার প্রবণতা, মানসিকতা ও নীতির চর্চাই হলো নৈতিকতা।

বিদ্যালয় থেকে যখনই শাসনের ছড়ি নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে, তখন থেকেই হয়তো নৈতিকতা আর মূল্যবোধের অবক্ষয় প্রকট আকার ধারণ করতে শুরু করেছে। বাবা-মায়ের অবাধ্য সন্তান আর শিক্ষকদের অবাধ্য শিক্ষার্থী যেন একই কাতারে দাঁড়িয়ে। বড়দের মান্য করা আর ছোটদের স্নেহ করার শিক্ষা যেন আমরা ভুলে যেতে বসেছি। কিন্তু হাতে যখন অবাধে মোবাইল ফোন বা ইন্টারনেট চলে যাচ্ছে, অথবা ফেসবুক বা ইউটিউবের মাধ্যমে যা খুশি করতে পারছে- তখন তাদের মধ্যে শালীনতা আর মূল্যবোধের ঘাটতি থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক। আমাদের সন্তানদের দেখা যায় ফেসবুকে, মোবাইলে এতটাই আসক্ত যে তার সামনে দিয়ে শিক্ষক, মা-বাবা, বড় ভাই-বোন নাকি বয়োজ্যেষ্ঠ কোনো মুরব্বি যাচ্ছেন- তার কোনো পরোয়াই থাকে না। এর জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দায়ী বাবা-মা বা তাদের পারিবারিক শিক্ষা। এ থেকে বেরিয়ে আসতে আমাদের নৈতিকতা আর মূল্যবোধের শিক্ষা নিতে হবে।

পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সমন্বয় ঘটানোর মাধ্যমে সমাজে, সংসারে মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব। আর এ লক্ষ্যে, নৈতিক শিক্ষা প্রদান ও মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে। দেশের জন্য, সমাজের জন্য, পরিবারের জন্য আমাদের সন্তানদের গড়ে তুলতে হবে মানুষের মতো মানুষ করে, সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে দেশের, সমাজের তথা পরিবারের সম্পদরূপে। আমার কথা হচ্ছে এখনই সচেতন না হলে আপনার সন্তান আপনাকেই মূল্যয়ন করবে না। পাশাপাশি আপনার সন্তানের জন্যে আপনাকেও কাঠগড়ায় উঠতে হবে। যদি আপনার সন্তান ভালো হয় তাহলে আপনার সুনামের ভাগ আপনি পাবেন। একই সন্তান যদি আবার কুসন্তান হয় বদনামের ভাগও আপনাকে নিতে হবে। সুতরাং আপনার সন্তান ভালো অথবা মন্দ হবে কিনা সেটা আপনার উপর নির্ভর করবে। এখনই সচেতন হন মানুষের মত মানুষ বানিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করুন।
সর্বপরি একটা কথা বলতে চাই শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষিত করার দায়িত্ব কি সুধু শিক্ষককের? আপনার কি কোন দায় নেই? লেখক পতুল, স্টুডেন্ট বিএম কলেজ, সাতক্ষীরা শ্যামনগর সদর ইউনিয়নের চন্ডিপুর।

আরও খবর: সম্পাদকীয়