জাতীয়

যে সিদ্ধান্ত নিতে আরও সময় নেবে বিএনপি

  প্রতিনিধি ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ৪:৩১:২৮ প্রিন্ট সংস্করণ

নীলাকাশ টুডে

চার ধাপের উপজেলা নির্বাচন শুরু হবে আসছে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবার নির্বাচনে যাচ্ছে দলীয় প্রতীক ছাড়াই। এ অবস্থায় ভোটে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি বিএনপি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করা দলটির শীর্ষনেতৃত্ব এ বিষয়ে আরও সময় নিতে চায়। দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা অবশ্য লাভ-ক্ষতির হিসাব শুরু করে দিয়েছেন।

দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচন ইস্যুতে এখন পর্যন্ত দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম- জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা এখনো হয়নি। সময় হলে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জাতীয় সংসদ বা স্থানীয় সরকার অথবা স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনও সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয় না। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে জনগণের কোনো আগ্রহ নেই। এই নিয়ে আমাদের দলীয় ফোরামেও কোনো আলোচনা হয়নি।’ তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বলেন, উপজেলা নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে তারা দ্বিধায় আছেন। উপজেলা নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে বিএনপি অংশ নিলে জনগণের কাছে একটা বার্তা যাবে যে, বিএনপি আওয়ামী লীগ সরকারকে বৈধতা দিয়েছে। যারা দলীয় সমর্থন পাবেন না, তারা দায়িত্বপ্রাপ্ত

নেতাদের বিরুদ্ধে বাণিজ্যের অভিযোগ তুলবে। সরকারও বলবে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি ভুল করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ব্যাপারে দোলাচলে রয়েছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো ভোট সুষ্ঠু হয় না, তা প্রমাণিত। বিএনপির এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। দলের নীতিনির্ধারকরা পরবর্তী কোনো সিদ্ধান্ত নিলে নেবেন।’

তবে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, বিএনপি দলগত বা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়ে উপজেলা নির্বাচনে না গেলেও শেষ পর্যন্ত আগ্রহী নেতাকর্মীদের বেলায় শিথিলতা দেখাতে পারে। প্রার্থী হলে বহিষ্কার না করে দলের পদ ছাড়ার শর্র্ত দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সবুজ সঙ্কেত দিতে পারে।

নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়া না নেওয়া ইস্যুতে পক্ষে-বিপক্ষে মতামত রয়েছে। তবে তারা রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক লাভ-ক্ষতির হিসাব কষছেন।’ ওই নেতার মতে, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাঠ পর্যায়ে আওয়ামী লীগ এখন নানা ভাগে বিভক্ত। উপজেলা নির্বাচনে সেই বিভক্তি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে আরও ভয়ংকর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই শঙ্কা থেকে অংশ না নিয়ে আওয়ামী লীগকে ফাঁকা মাঠে ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে দলটির কোনো কোনো নেতা।’

জেলা বিএনপির এক শীর্ষনেতা বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে আওয়ামী লীগ তখন সতর্র্ক হয়ে যাবে। তখন রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে তারা তাদের নির্ধারিত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে যা যা করা দরকার, তাই করবে। তখন তারা নির্বাচন সুষ্ঠু করার ওপর জোর দেবে।’

বিএনপির কোনো কোনো নেতা নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরছেন। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন- দল আন্দোলনও করবে না, নির্বাচনেও যাবে না; তাহলে নেতাকর্মীদের ধরে রাখবে কীভাবে? এসব নেতা মনে করেন, উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিলে অন্তত নেতাকর্মীরা মাঠে সক্রিয় হবে।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ বলেন, ‘কিছু নির্বাচনপাগল লোক সবসময় থাকে; নির্বাচন দেখলেই তারা অংশগ্রহণ করতে চান। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে- এটা দেশের প্রত্যেকে বুঝে গেছেন। এ কারণে বিএনপির ৭ জানুয়ারির শান্তিপূর্ণ ভোট বর্জনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে জনগণ ভোটকেন্দ্রে যায়নি। আমার বিশ্বাস, উপজেলা নির্বাচনও দেশের জনগণ বর্জন করবে।

 

আরও খবর: জাতীয়