জাতীয়

যত আসনের নৌকা সরাবে আ’লীগ, স্বতন্ত্রের বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত

  প্রতিনিধি ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ , ৪:০২:১০ প্রিন্ট সংস্করণ

নীলাকাশ টুডে

গোপনে আসন সমঝোতার আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। গত শনিবার রাতেও রাজধানীর গুলশানে দু’দলের নেতারা বসেছিলেন। আজ সোমবারও বৈঠক হতে পারে। তবে কখন, কোথায় সভাটি হবে তা গোপন রাখা হয়েছে।

জাপা সূত্র বৈঠক-সংক্রান্ত তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছে, আসন সমঝোতা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ‘সম্মানজনক’ সংখ্যক আসন ছাড়বে আওয়ামী লীগ। জাপাকে ছেড়ে দেওয়া আসন থেকে নৌকা সরাতে রাজি হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দায়িত্ব নিতে চায় না শাসক দল। জয় নিশ্চতে জাপা চায়, তাদেরকে যেসব আসন ছাড়া হবে, সেখানে শুধু নৌকা নয়; আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও থাকতে পারবেন না।

দলটির সূত্র জানিয়েছে, গত বুধবারের বৈঠকে আওয়ামী লীগের কাছে ৬০টির বেশি আসনে ছাড় চেয়েছিল জাপা। আওয়ামী লীগ ১০-১২টির বেশি আসন ছাড়তে রাজি ছিল না। তবে শনিবারের বৈঠকে আগের চেয়ে নমনীয় ছিলেন আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিরা। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কমবেশি ৩০টি আসন ছাড়তে পারে। জাপার একজন কো-চেয়ারম্যান বলেছেন, আসন সংখ্যার কারণে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর থেকে দৃশ্যপটে নেই জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের। গণমাধ্যমে কথা বলছেন না। জাপা সূত্র জানিয়েছে, আগের দুই বছর সরকারের কড়া সমালোচনা করলেও গত আগস্টে ভারত সফরের পর থেকে অনেকটাই নমনীয় অবস্থান নিয়েছেন জি এম কাদের। মাসখানেক আগেও নির্বাচন ব্যবস্থার সমালোচনা করা জাপা চেয়ারম্যান বিএনপিবিহীন ভোটে যাচ্ছেন একই কারণে। তাই জি এম কাদেরের বিষয়ে আপত্তি থাকলেও ক্ষমতাসীনরা তাঁকে জাপার একক নেতা হিসেবে মেনে নিয়েছেন। তাতেই নির্বাচন থেকে ছিটকে গেছেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। এ সমীকরণের কারণে জাপাকে আগামী সংসদে গণ্য করার মতো বিরোধী দল বানাতে সরকারি দল ‘প্রয়োজনীয় সংখ্যক’ আসন ছাড়বে।

জি এম কাদেরের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত একজনসহ জাপার দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, আওয়ামী লীগ প্রথমে কিংস পার্টি হিসেবে পরিচিত দলগুলোকে আগামী সংসদে প্রধান বিরোধী দল বানাতে চেয়েছিল। তবে দলগুলো বিএনপি নেতাদের ভাগিয়ে নির্বাচনে আনতে না পারায় এ পরিকল্পনা সফল হয়নি। দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া যত সংখ্যক আওয়ামী লীগ নেতাই এমপি হোন না কেন, তাদের নিয়ে বিরোধী দল বানাবে না আওয়ামী লীগ। প্রতিবেশী দেশ এবং আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার জন্য জাতীয় পার্টিকে ফের প্রধান বিরোধী দল হতে দিতে হবে। এ কারণে হলেও জাপাকে সম্মানজনক আসন দিতে হবে। চলতি সংসদে সরাসরি নির্বাচিত জাপার ২৩ এমপি রয়েছেন। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে এর চেয়ে বেশি সংখ্যক আসনে ছাড় পেতে পারে বিকল্প বিরোধী দল না থাকায়।
জাপার হয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতার আলোচনা চালাচ্ছেন দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তাঁরা দু’জনই সরকারের ঘনিষ্ঠ

হিসেবে পরিচিত। জাপার অন্য জ্যেষ্ঠ নেতারা দৃশ্যপটে নেই। আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকের পর তাঁদেরকে আলোচনার অগ্রগতি জানানো হচ্ছে। আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মুজিবুল হক চুন্নুর হাতে দলের নিয়ন্ত্রণ থাকায় জাপার নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র। ১৪ দলের শরিকদের মতো নৌকা নয়; নিজস্ব প্রতীক লাঙ্গল নিয়ে নির্বাচন করবে জাপা।

১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে দিনক্ষণ জানিয়ে বৈঠক করছে আওয়ামী লীগ। তবে জাপার ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। ৬ ডিসেম্বর রাতের বৈঠকের পর আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতারা তা গণমাধ্যমে স্বীকার করেছিলেন। কিন্তু শনিবার রাতের বৈঠকের বিষয়ে কিছুই জানাননি।

জাপা সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের পক্ষে ছিলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। জাপার পক্ষে ছিলেন মুজিবুল হক চুন্নু।

আসন ভাগাভাগি হবে– আগের দিন এ ইঙ্গিত দিলে গতকাল ফের কথা বদল করেন জাপা মহাসচিব। আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়নি বলে দাবি করলেও ধোঁয়াশা রেখেছেন। বনানীতে দলের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, সংসদীয় পদ্ধতির সরকার যেখানে আছে, সেখানে আসন ভাগাভাগি হয়। অনেক দেশেই হয়। এবার হতেও পারে, আবার নাও হতে পারে।

গত তিন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট অথবা আসন সমঝোতা করে অংশ নিয়েছে জাপা। এবার একই কৌশল থাকবে– ইঙ্গিত দিয়ে জাপার কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, অতীতে একসঙ্গে পথ চলেছি। চাইলেই তো অতীত মুছে ফেলা যায় না। পরস্পরের প্রতি আস্থা ও ভালোবাসা রয়েছে। সম্মানজনক কিছু হবে বলে আশা করি।

বিএনপির বর্জনে দশম সংসদ নির্বাচনে জোট না হলেও আসন সমঝোতা ছিল আওয়ামী লীগ ও জাপার। এবারও বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় জাপা-আওয়ামী লীগের ‘আসনের অঙ্ক’ কী হবে, তা এখনও চূড়ান্ত নয়। জাপা সূত্র জানিয়েছিল, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ‘অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ’ করতে আওয়ামী লীগ চায় বিএনপিবিহীন ভোটযুদ্ধ যেন একতরফা না হয়। তাই ক্ষমতাসীনরা চেয়েছিল, নৌকা ও লাঙ্গলের প্রার্থীর মধ্যে প্রতিযোগিতা হোক। কিছু আসনে লাঙ্গলকে জেতানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। পরাজয়ের ঝুঁকি থাকায় ক্ষমতাসীন দলের এই কৌশলে রাজি হয়নি জাপা। লাঙ্গল নিয়ে নৌকার বিরুদ্ধে লড়তে রাজি নয়। জাপার এই অবস্থানের কারণে নৌকা সরিয়ে দিতে পারে আওয়ামী লীগ।

শনিবার রাতের বৈঠকের কথা স্বীকার করলেও আসন ভাগাভাগির কথা হয়নি দাবি করে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ভোটাররা যেন একটি ভালো নির্বাচনে কেন্দ্রে আসার সুযোগ পান, তেমন পরিবেশ যেন তৈরি হয়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এ আলোচনা হবে। একটি অর্থবহ নির্বাচন করতে গেলে সময়ে সময়ে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তারাও করে, আমরাও করি। যত বেশি ভোটার কেন্দ্রে; ততই জাপার লাভ।

 

আরও খবর: জাতীয়