জাতীয়

যখন তখন লোডশেডিং, নিয়ম মানছে না বিদ্যুৎ অফিস!

  প্রতিনিধি ১৯ জুলাই ২০২২ , ৬:৩৪:১৯ প্রিন্ট সংস্করণ

নীলাকাশ টুডেঃ বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় দেশজুড়ে ধারাবাহিকভাবে লোডশেডিং শুরু করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এ ক্ষেত্রে বিতরণ সংস্থাগুলো একেকটি এলাকায় সারা দিনে এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং করছে। রাজধানীতে সময় মেনে লোডশেডিং করলেও ঢাকার বাইরে যখন তখন বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া  করছে। কোনো কোনো এলাকায় দিনে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না। আজ বুধবার রাজধানীর কোন এলাকায় কখন লোডশেডিং থাকবে, তার সূচি প্রকাশ করেছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ডিপিডিসি’র ওয়েবসাইটে এলাকাবভিত্তিক সম্ভাব্য লোডশেডিংয়ের শিডিউলটি প্রকাশ করা হয়েছে। ডিপিডিসি রাজধানীকে ভাগ করেছে মোট ৩৬টি এলাকায়। এসব এলাকায় কোন উপকেন্দ্রের অধীন এলাকাগুলোতে কখন লোডশেডিং হবে, তার তালিকা দেয়া হয়েছে। এদিকে, হঠাৎ করেই লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় আপৎকালীন বিকল্প হিসেবে আইপিএস ও জেনারেটরের দিকে ঝুঁকছেন শহরের সচ্ছল মানুষদের অনেকে। কিনছেন চার্জার ফ্যান ও লাইট। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই পণ্যের বিক্রি কিছুটা বেড়েছে।

অনেকে কেনার জন্য খোঁজখবর নিচ্ছেন। তবে জেনারেটরের চেয়ে আইপিএসের প্রতি আগ্রহটা বেশি দেখা যাচ্ছে। এর আগে দেশে বিদ্যুৎ সংকট পরিস্থিতি মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণে সোমবার উচ্চ পর্যায়ে এক বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, প্রাথমিক ভাবে প্রতিটি এলাকায় দিনে এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং দেয়া হবে। তাতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে লোডশেডিং দুই ঘণ্টা করা হতে পারে। রাত ৮টার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ না করলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন প্রতিমন্ত্রী। এ ঘোষণার পর মঙ্গলবার থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে এলাকাভিত্তিক এক ঘণ্টার লোডশেডিং শুরু হয়। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) গতকাল লোডশেডিং শুরু করেছে সকাল ১০টা থেকে।

একই সময় ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডও (ডেসকো) লোডশেডিং শুরু করে। ডিপিডিসি’র প্রধান প্রকৌশলী মো. কামরুল আজম গণমাধ্যমকে বলেন, সকাল ১০টা থেকে লোডশেডিং শুরু হয়েছে। এটা রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে অঞ্চলভেদে। প্রতিদিন এক অঞ্চলে একই সময়ে লোডশেডিং করা হবে না বলে জানান কামরুল আজম। তিনি বলেন, আজ যেখানে সকাল ১০টায় লোডশেডিং করা হলো, কাল হয়তো সেখানে ভিন্ন সময় হবে। এখন আপাতত এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং করা হবে। অন্যদিকে রংপুরে এলাকাভেদে লোডশেডিংয়ের যে সময়সূচি করা হয়েছে, তা মানা হচ্ছে না। এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের পর বিদ্যুৎ এলেও আবার আধঘণ্টা পর বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। এমন অভিযোগ জেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের। নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) কার্যালয় সূত্র জানায়, রংপুর জেলায় প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা ১৫০ থেকে ১৫৫ মেগাওয়াট। সেখানে চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে প্রায় ৭৫ মেগাওয়াট। চাহিদার প্রায় অর্ধেক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ কম।

এ কারণে বিভাগীয় জেলায় মঙ্গলবার সকাল থেকে লোডশেডিং শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে নেসকোর রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী শাহাদত হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, রংপুর বিভাগের আট জেলায় দিন-রাতে বিদ্যুতের চাহিদা ৯০০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে ৪৫০ মেগাওয়াট। চাহিদার বিপরীতে অর্ধেক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে এলাকাভেদে লোডশেডিংয়ের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তবে নানা কারণে সেটিও রক্ষা করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। বিষয়টি সমন্বয়ের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী জানিয়েছেন, আমাদের ধারণা, এক থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি হবে। এতে দিনে এক থেকে দেড় ঘণ্টা এবং কোনো কোনো জায়গায় দুই ঘণ্টাও লোডশেডিং হতে পারে। কিন্তু দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এবং পৃথিবীর এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় কখন লোডশেডিং হবে তা এখনো জানা যায়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বুধবার সময়সূচি জানা যাবে। মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. আজহারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, লোডশেডিং শিডিউল তৈরি করা হয়েছে। এখনো আপলোড করা হয়নি। বুধবারের মধ্যে হয়ে যাবে। তখন জানতে পারবো কখন কোথায় লোডশেডিং হবে। কতটুকু লোডশেডিং করতে হবে সে বিষয়টি আমরা কনফার্ম ছিলাম না, যার জন্য আপলোড করা সম্ভব হয়নি। ওজোপাডিকোর আওতাধীন এলাকার মধ্যে রয়েছে- খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, নড়াইল, ঝিনাইদহ, মাগুরা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা, ঢাকা বিভাগের ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও গোপালগঞ্জ এবং বরিশাল বিভাগের বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ভোলা জেলা। সূচি না থাকায় এসব জেলায় আগের মতোই যখন তখন লোডশেডিং হচ্ছে বলে গ্রাহকরা জানিয়েছেন।

আরও খবর: জাতীয়