জাতীয়

বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণে যে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার

  প্রতিনিধি ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ২:৫৫:০৫ প্রিন্ট সংস্করণ

নীলাকাশ টুডে

প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহে এখনো লোকসানে আছে সরকার। দফায় দফায় দাম বাড়িয়েও সেই লোকসান সামাল দিতে পারছে না, যেতে পারছে না ব্রেক ইভেন অর্থাৎ ‘না লাভ না লোকসান’ পয়েন্টে। ফলে আগামী তিন বছরের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে দাম সমন্বয় করে ব্রেক ইভেন পয়েন্টে যেতে চায় সরকার। যে কোনো দিন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন হতে পারে। বিদ্যমান বিদ্যুতের দাম সাব বা গ্রাহক শ্রেণিভেদে প্রতি ইউনিট ৩০ থেকে ৭০ পয়সা পর্যন্ত সমন্বয় করা হবে। সাধারণ গ্রাহকদের কাছে এটা দাম বৃদ্ধি হিসেবে বিবেচিত হলেও বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতেই দাম সমন্বয় করা হচ্ছে। সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহে ব্রেক ইভেন পয়েন্টে যেতে পারেনি। তাই আগামী তিন বছরের মধ্যে যাতে ব্রেক ইভেন পয়েন্টে যাওয়া যায় সেই পরিকল্পনা করেছে। বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রতি বছর দাম সমন্বয় করা হলেও আন্তর্জাতিক নানা সংকটে লোকসান থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না সরকার।

এদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে জনজীবনে নাভিশ্বাস। দৈনন্দিন খরচের হিসাব মেলাতে পারছে না মানুষ। এ অবস্থায় বাড়ছে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম। বিদ্যুতে গ্রাহক শ্রেণি অনুযায়ী ইউনিটপ্রতি ৩০ থেকে ৭০ পয়সা পর্যন্ত বাড়তে পারে। অন্যদিকে গ্যাসের দামও বাড়বে। আগামী সপ্তাহে এ সংক্রান্ত সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। নতুন দাম ১ মার্চ থেকে কার্যকর হবে।

পুরো বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল সচিবালয়ের সাংবাদিকদের জানান, দেশের বাজারে ডলারের দাম বেড়েছে। ফলে আমাদের খরচ বেড়ে গেছে অনেকখানি। এ কারণে এখন আমাদের বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম সমন্বয় করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, এটা দাম বাড়ানো নয়, ডলার প্রাইসের কারণে যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, সে জায়গাটা সমন্বয় করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বিদ্যুতের জন্য কয়লা, গ্যাস বা জ্বালানি তেল আমদানি করতে ৮০ টাকা ডলার রেট ধরে বিবেচনা করা হলেও এখন ডলার সংকট। ডলার ১২০ টাকা পর্যন্ত উঠে গেছে। কার্ব মার্কেটে সেটা আরও বেশি। ফলে সরকারের রাজস্ব থেকে এত বিশাল পরিমাণ ঘাটতি মেটানো সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, এ ছাড়া ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আরও বেশি পরিমাণ গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারে চেষ্টা করছে সরকার। এখন নতুন ৫টি কূপ খনন করতে হবে। প্রায় এক বিলিয়ন ডলার লাগবে সেখানে। অর্থ সংস্থান কোত্থেকে হবে? ফলে গ্রাহকদের সমন্বিত মূল্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যবহার করতে হবে। বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম যেখানে ১০৯ টাকা, সেখানে ভারতে ১৩০ টাকা বলে তিনি জানান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার বিদ্যুৎ জ্বালানিতে ব্রেক ইভেন পয়েন্টে যেতে পারছে না। হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে।

মার্চে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদ্যুতের ক্ষেত্রে আমরা লাইফ লাইন গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ইউনিটপ্রতি ৩০ পয়সা এবং ৬০০ ইউনিটের ওপরে গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ইউনিটপ্রতি ৭০ পয়সা বাড়বে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ক্যাপটিভ পাওয়ারে যে গ্যাস দেওয়া হচ্ছে, সেখানেও দাম বাড়বে। তেল আনব, এলএনজি আনব- ডলার নেই। কয়লার বিল দেওয়া যাচ্ছে না।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, এটা দাম বৃদ্ধি নয়, সমন্বয় করা হচ্ছে। কারণ দেশের বাজারে মার্কিন ডলারের দাম বেড়েছে। ফলে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে। ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এই ঘাটতি মেটাতে এবং জ্বালানির দাম যেহেতু ডলারে পরিশোধ করতে হয়, তাই মূল্য সমন্বয় করতে হচ্ছে। এ ছাড়া সরকার পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দেওয়া ভর্তুকি কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি মার্চ মাস থেকে কার্যকর হবে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে দেশেও ওঠানামা করবে জ্বালানি তেলের দাম।

জানা গেছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। পাশাপাশি ঋণের শর্ত হিসেবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে ভর্তুকিমুক্ত করার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ রয়েছে। এ পটভূমিতেই বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে। সঙ্গে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় দাম সমন্বয় পদ্ধতি চালু হচ্ছে।

 

আরও খবর: জাতীয়