জাতীয়

নৌকা-স্বতন্ত্র লড়াইয়ে লেজেগোবরে আ’লীগ

  প্রতিনিধি ২২ ডিসেম্বর ২০২৩ , ৮:৫০:৫৯ প্রিন্ট সংস্করণ

সূত্র সমকাল

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচার শুরুর পরই সারাদেশে স্পষ্ট হচ্ছে আওয়ামী লীগের গৃহদাহ। ২৬৬ আসনে ক্ষমতাসীন মনোনীতরা লড়ছেন। তাদের সঙ্গে ২২১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ৩৮২ জন। এর মধ্যে শতাধিক আসনে নৌকার প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছেন দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। প্রভাবশালী এসব প্রার্থীর পক্ষে জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পদধারী নেতারা অবস্থান নেওয়ায় কোণঠাসা নৌকা। অনুসারীদের নিয়ে প্রচারে প্রতিপক্ষকে প্রতিদিনই হুমকি-ধমকি দেওয়ায় উত্তপ্ত ভোটের পরিবেশ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, অবমূল্যায়ন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর স্থানীয় প্রভাব এবং কারও বিরাগভাজন হতে না চাওয়ায় তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতা নৌকাকে সমর্থন প্রশ্নে নীরব রয়েছেন। নেতাকর্মী বিভক্ত হওয়ায় সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে বহিষ্কার কিংবা অব্যাহতি দিচ্ছে। দিন যত গড়াচ্ছে, সংঘাতের আশঙ্কা বাড়ছে। অবস্থা লেজেগোবরে। ভবিষ্যতে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ফেরাতে বেগ পেতে হবে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।

চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তত ১৬ আসনে নৌকার প্রধান প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন নৌকার বিরুদ্ধে গিয়ে চট্টগ্রাম-১১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমনকে সমর্থন দিচ্ছেন। ক্ষুব্ধ নৌকার প্রার্থী এম এ লতিফ বলেছেন, ‘নৌকা আমার হাতে তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীকে অবজ্ঞার দুঃসাহস তারা কোথায় পেলেন?’ তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী সুমন বলেন, ‘লতিফ উড়ে এসে জুড়ে বসা লোক।’ চট্টগ্রাম-১ আসনে নৌকার মাহবুব রহমান রুহেলের বিরুদ্ধে লড়ছেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক নির্বাহী সদস্য গিয়াস উদ্দিন। চট্টগ্রাম-২ আসনে উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী এইচ এম আবু তৈয়বের পক্ষে; উত্তর জেলার নেতারা নৌকা প্রার্থী খাদিজাতুল আনোয়ার সনির সঙ্গে। চট্টগ্রাম-৩ আসনে নৌকার মাহফুজুর রহমান মিতা এমপির সঙ্গে লড়ছেন ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী। মিতার পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলাউদ্দিন বেদনকে দেখা গেলেও স্বাচিপ সভাপতি ডা. জামালের হয়ে মাঠে আছেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম। চট্টগ্রাম-১২ আসনে আওয়ামী লীগের মোতাহেরুল ইসলামের সঙ্গে লড়ছেন বর্তমান এমপি সামশুল হক চৌধুরী। তাঁর পক্ষে আছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবু ছালে, দেবব্রত দাশ দেবু প্রমুখ। চট্টগ্রাম-১৪ আসনে নৌকার নজরুল ইসলামের সঙ্গে স্বতন্ত্র হয়েছেন দলেরই আবদুল জব্বার চৌধুরী। তাঁর পক্ষে দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান ও সহসভাপতি হাবিবুর রহমানকে দেখা গেছে। চট্টগ্রাম-১৫ আসনে নৌকা প্রার্থী আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামউদ্দীন নদভী এমপির সঙ্গে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেব। স্বতন্ত্র প্রার্থীর সঙ্গে দেখা গেছে দক্ষিণ জেলার দপ্তর সম্পাদক বিজয় কুমার বড়ুয়াসহ অনেককে। চট্টগ্রাম-১৬ আসনে নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে লড়ছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটন। একই দশা চট্টগ্রাম-৮ ও ১০ আসনে।

কুমিল্লা-২ আসনে বর্তমান এমপি সেলিমা আহমাদ মেরীর সঙ্গে স্বতন্ত্র হয়ে লড়ছেন হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ ও মেঘনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল আলম। কুমিল্লা-৪ আসনে এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের নৌকা ডোবাতে মরিয়া কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ। কুমিল্লা-৫ আসনে বর্তমান এমপি আবুল হাসেম খানের বিপক্ষে লড়ছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহসম্পাদক এহেতেশামুল হাসান ভূঁইয়া রুমি ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আবু জাহের। কুমিল্লা-৬ আসনে বর্তমান এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের সঙ্গে স্বতন্ত্র হয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমা। কুমিল্লা-৭ আসনে বর্তমান এমপি ডা. প্রাণ গোপাল দত্তকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ টিটু। এখন পর্যন্ত নৌকার পক্ষে বেশির ভাগ নেতাকে মাঠে দেখা যায়নি।

ময়মনসিংহের ১৩ আসনে বিভক্ত আ’লীগ
বিভাগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ময়মনসিংহ-৪ আসনে নৌকা প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত উর রহমান শান্তর বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা সহসভাপতি আমিনুল হক শামীম। তিনি বর্তমান সিটি মেয়র ইকরামুল হকের বড় ভাই। আমিনুল হকের পক্ষে মাঠে আছেন সদর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আশরাফ হোসাইনসহ অনেকে। তবে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এহতেশামুল আলমকে কারও পক্ষে দেখা যায়নি। ময়মনসিংহ-১ আসনে বর্তমান এমপি জুয়েল আরেংকে হারাতে মাঠে সদ্য পদত্যাগ করা হালুয়াঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক সায়েম। ময়মনসিংহ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের নিলুফার আনজুম পপির প্রতিদ্বন্দ্বী গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোমনাথ সাহা, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নাজনীন আলমসহ দলের একাধিক প্রার্থী। ময়মনসিংহ-৬ আসনে বর্তমান এমপি মোসলেম উদ্দিনের সঙ্গে লড়ছেন সদ্য পদত্যাগ করা ফুলবাড়িয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মালেক সরকার ও এমপিকন্যা সেলিমা বেগম সালমা। মালেকের পক্ষে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফাসহ অনেককে দেখা গেছে। ময়মনসিংহ-৭ আসনে আওয়ামী লীগের রুহুল আমীন মাদানীর বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এ বি এম আনিছুজ্জামান। তাঁর পক্ষে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইব্রাহিম খলিল নয়নসহ অনেকে। ময়মনসিংহ-৯ আসনে আওয়ামী লীগের মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালামের প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান এমপি আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহিন। নির্বাচন ঘিরে এরই মধ্যে উভয় প্রার্থীর লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ময়মনসিংহ-১১ আসনে বর্তমান এমপি কাজিম উদ্দিন আহমেদ ধনুর প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এম এ ওয়াহেদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা। ওয়াহেদের পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফরোজ খান আরিফসহ অনেকেই রয়েছেন।

শেরপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের আতিউর রহমান আতিকের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছানুয়ার হোসেন ছানু। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর রুমান, পৌর মেয়র গোলাম কিবরিয়া লিটন প্রমুখ। শেরপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের এ ডি এম শহিদুল ইসলামের বিপক্ষে লড়ছেন ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এস এম আবদুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইম। জামালপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মাহবুবুর রহমান হেলালের বিপক্ষে লড়ছেন বর্তমান এমপি ডা. মুরাদ হাসান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুর রশীদ। ডা. মুরাদের পক্ষে কাউকে দেখা না গেলেও আবদুর রশীদের পাশে তাঁর ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ হারুনুর রশীদ ও তাঁর অনুসারীরা। জামালপুর-২ আসনে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হকের সঙ্গে লড়ছেন ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জিয়াউল হক ও জেলা কমিটির উপদেষ্টা শাহজাহান আলী মণ্ডল। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে প্রতিমন্ত্রীর পক্ষে নামবেন না বলে জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জামাল আবদুন নাসের।

নেত্রকোনা-৩ আসনে বর্তমান এমপি অসীম কুমারের সঙ্গে লড়ছেন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ইফতেখার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু। তাঁর পক্ষে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর চৌধুরী। নেত্রকোনা-২ আসনে নৌকার প্রার্থী সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরুর পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিরুল ইসলাম। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী আরিফ খান জয়ের পক্ষে কাজ করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নূর খান মিটুসহ অনেকে।

বরিশালের পাঁচ আসনে বিপাকে নৌকা
কারামুক্তির পরদিনই ঝালকাঠি-১ আসনে নৌকার প্রার্থী হয়ে আলোচিত হন বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর। তবে এখন পর্যন্ত রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বড় অংশ তাঁর ধারেকাছে ঘেঁষছে না। তাদের অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা এম মনিরুজ্জামানের প্রচারে নেমেছেন। এতে নৌকা নিয়েও ওমরের জয় অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন বর্তমান এমপি বজলুর হক হারুন। প্রচার শুরুর পরই দু’পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানে রক্তাক্ত পিরোজপুর-১। গত শনিবার রাতে লালন ফকির (২৫) নামের একজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এ কে এম আউয়াল দাবি করেন, তাঁর কর্মী লালনকে নৌকা প্রার্থী বর্তমান এমপি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের সমর্থকরা হত্যা করেছে। নৌকা পেয়েও বরিশাল-২ আসনে অস্বস্তিতে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। এ আসনের সাবেক এমপি মনিরুল ইসলাম মনি ও শেরেবাংলার নাতি ফাইয়াজুল হক রাজু স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার নূরুল হুদার ভাগনে হওয়ায় ২০১৮ সালে রাজনৈতিক পরিচয় ছাড়াই পটুয়াখালী-৩ আসনে নৌকা পেয়ে এমপি হন এস এম শাহজাদা। তবে এবার নৌকার এ প্রার্থীর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) আবুল কালাম আজাদ। কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান তালুকদার এবং কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় পটুয়াখালী-৪ আসনে বিপাকে পড়েছেন নৌকা প্রার্থী মহিব্বুর রহমান।

বগুড়া-১ আসনে বর্তমান এমপি সাহাদারা মান্নানের বিপরীতে লড়ছেন আওয়ামী লীগের দুই নেতা– কেন্দ্রীয় উপকমিটির শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সদস্য কে এস এম মোস্তাফিজার রহমান এবং কর্মী শাহাজাদী আলম লিপি। মোস্তাফিজারের পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর আলম নান্নু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেনসহ অনেকে মাঠে নেমেছেন। লিপির পক্ষে আছেন সোনাতলা উপজেলার মধুপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি দবির উদ্দিন। বগুড়া-৬ আসনে এবারও নৌকাকে বিপাকে ফেলতে চলেছেন আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া আবদুল মান্নান আখন্দ।

ফরিদপুর-৪ আসনে নৌকার প্রার্থী আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহর সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান এমপি মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের। গত দুই নির্বাচনে কাজী জাফরউল্লাহকে হারিয়েছেন নিক্সন। নৌকার পক্ষে ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাইফুর রহমান মিরণ, সাধারণ সম্পাদক আকরামুজ্জামান রাজাসহ শীর্ষ নেতারা আছেন। যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নিক্সনের পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ফাইজুর রহমান, কাজী জাফরউল্লাহর রাজনৈতিক সচিব এনামুল হক অপু প্রমুখ।

মাদারীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এমপির বিরুদ্ধে লড়ছেন কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী এমপি তাহমিনা আক্তার। স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে দলের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান শাহিন, সাংগঠনিক সম্পাদক ওবায়দুর রহমানসহ অনেককে দেখা গেছে। মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে নৌকার মৃণাল কান্তি দাসের সঙ্গে লড়ছেন জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ফয়সাল বিপ্লব। তাঁর বাবা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি।

নরসিংদী-১ আসনে বর্তমান এমপি মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের সঙ্গে লড়ছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র মো. কামরুজ্জামান। জেলা সভাপতি জিএম তালেব হোসেন নৌকার পক্ষে থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীর পাশে রয়েছেন সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা কাজী মোহাম্মদ আলী। নরসিংদী-৩ আসনে আওয়ামী লীগের ফজলে রাব্বি খানকে বিপদে ফেলতে পারেন সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। নরসিংদী-৪ আসনে বর্তমান এমপি ও শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের সঙ্গে লড়ছেন জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সাইফুল ইসলাম খান বীরু। নরসিংদী-৫ আসনে বর্তমান এমপি রাজি উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে লড়ছেন রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী।

গাজীপুর-১ আসনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সঙ্গে লড়াই হবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাসেলের। তাঁর পক্ষে মাঠে আছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। গাজীপুর-২ আসনে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের সঙ্গে লড়াই হবে আওয়ামী লীগ নেতা আলিম উদ্দিনের। তাঁর সঙ্গে নির্বাচনের মাঠে আছেন জাহাঙ্গীর আলম। গাজীপুর-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী রুমানা আলীর সঙ্গে শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কেউ নেই। তাঁরা প্রকাশ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। গাজীপুর-৪ আসনে বর্তমান এমপি সিমিন হোসেন রিমির বিপক্ষে প্রার্থী হয়েছেন রিমির ফুফাতো ভাই আলম আহমেদ। গাজীপুর-৫ আসনে নৌকার প্রার্থী মেহের আফরোজ চুমকির সঙ্গে লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুজ্জামান। তাঁর পক্ষে মাঠে নেমেছেন সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।

খুলনার ৯ আসনে নৌকার পাশে নেই নেতারা
খুলনা-৬ আসনে নৌকার রশীদুজ্জামান মোড়লের পাশাপাশি স্বতন্ত্র হিসেবে লড়ছেন জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ জিএম মাহবুবুল আলম। কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ডা. ফজলুল হকসহ অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে। মাহবুবুল আলম বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্তে নেতাকর্মী আমার পক্ষে কাজ করছে।’ তবে রশীদুজ্জামান বলেন, ‘সবাই আমার সঙ্গে, দু’একজন বাইরে থাকলেও তেমন সমস্যা হচ্ছে না।’ যশোর-২ আসনে আওয়ামী লীগের ডা. তৌহিদুজ্জামান তুহিনের সঙ্গে লড়ছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক এমপি মনিরুল ইসলাম এবং চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এসএম হাবিবুর রহমান। ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মুকুল ও সাধারণ সম্পাদক মুসা মাহমুদ কাজ করছেন মনিরুলের পক্ষে। যশোর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের কাজী নাবিল আহমেদের পক্ষে এখনও মাঠে নামেননি জেলা সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, পৌর সভাপতি আসাদুজ্জামানসহ শীর্ষ নেতা অনেকে। স্বতন্ত্র প্রার্থী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহিত কুমার নাথের পক্ষে আছেন সাধারণ সম্পাদক শাহারুল ইসলাম। যশোর-৫ আসনে প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যের পক্ষে মাঠে নেই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেনসহ শীর্ষ নেতাদের বড় অংশ। যশোর-৬ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারের পক্ষে মাঠে নেই উপজেলার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা।

বাগেরহাট-৩ আসনে নৌকার হাবিবুন নাহারের সঙ্গে লড়ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও মোংলা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী। উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন ও একাধিক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কাজ করছেন ইদ্রিসের পক্ষে। কুষ্টিয়া-১ আসনে বর্তমান এমপি সরওয়ার জাহান বাদশাহ নৌকা পেলেও স্বস্তিতে নেই। কারণ এখানে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি রেজাউল হক চৌধুরী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আল মামুন এবং সাবেক এমপি আফাজ উদ্দিনের ছেলে নাজমুল হুদা পটল। কুষ্টিয়া-৪ আসনে বর্তমান এমপি সেলিম আলতাফ জর্জের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রউফকে সমর্থন দিচ্ছেন অনেক নেতা। কুষ্টিয়া-২ আসনে নৌকা নিয়ে লড়লেও বিপাকে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। দুই উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী কাজ করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিনের পক্ষে। এখন পর্যন্ত ইনুর পক্ষে ক্ষমতাসীন কর্মীদের মাঠে দেখা যায়নি।

রাজশাহীতে স্বতন্ত্ররা মরিয়া
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অনিল সরকার। কিন্তু তিনি নৌকার বিপক্ষে গিয়ে ভোট করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজশাহী-৪ আসনে বর্তমান এমপি এনামুল হকের পক্ষে। এখানে নৌকা পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য তাহেরপুরের পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ। অনিল সরকার ছাড়াও বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মতিউর রহমান টুকুসহ অনেককেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাঁচি প্রতীকে ভোট চাইছেন। রাজশাহী-৬ আসনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বিপক্ষে প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাবেক এমপি রাহেনুল হক রায়হান। তাঁর কাঁচি প্রতীকের পক্ষে ভোট করছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লায়েব উদ্দীন লাভলুসহ অনেকে। শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘কিছু মানুষ সারাজীবন আওয়ামী লীগ করলেও ভোটের সময় নৌকার বিরোধিতা করেন। তারা আবার নিজেদের ত্যাগী নেতা দাবি করেন।’ রাজশাহী-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুর রহমান বাদশা। এ আসনে ওয়ার্কার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা মহাজোটের হয়ে নৌকা নিয়ে লড়ছেন। তবে আওয়ামী লীগের কেউ নেই তাঁর সঙ্গে।

নাটোর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকারের পক্ষে মাঠে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজানসহ অনেকে। সৈয়দ মোর্তুজা আলী বাবলু বলেন, ‘প্রথমে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ছিলাম। স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না বলার পর আহাদ আলীর হয়ে কাজ করছি।’ নাটোর-১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুলের সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদের। তাঁর পক্ষে প্রকাশ্য মাঠে লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আফতাব হোসেন ঝুলফু।

লালমনিরহাট-১ আসনে নৌকার প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার হোসেনের বিরুদ্ধে লড়ছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা উপকমিটির সদস্য আতাউর রহমান প্রধান। আতাউরের পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সরওয়ার হায়াত খানসহ অনেকেই মাঠে আছেন। লালমনিরহাট-২ আসনে নৌকার প্রার্থী সমাজকল্যাণমন্ত্রী নূরুজ্জামান আহমেদের বিরুদ্ধে লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি সিরাজুল হক। এখানে মন্ত্রীর ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাহবুবুজ্জামান আহমেদ স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। রংপুর-৫ আসনে নৌকার প্রার্থী রাশেক রহমানের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র হিসেবে লড়ছেন আওয়ামী লীগের জাকির হোসেন সরকার। মিঠাপুকুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক নিরঞ্জন মোহন্ত, আওয়ামী লীগ নেতা ইলিয়াস মিয়াসহ দলের অনেকেই জাকিরের পক্ষে।

সিলেট বিভাগের আট আসনে নৌকার সঙ্গে নেই আ’লীগ নেতারা
সিলেট-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী হাবিবুর রহমানের বিপক্ষে লড়ছেন বিএমএ মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল। এ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েছের অনুসারীরা দুলালের পক্ষে। সিলেট-৫ আসনে নৌকার মাসুক উদ্দিন আহমদের বিপক্ষে লড়ছেন ড. আহমদ আল কবির। তাঁর সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের একটি অংশ থাকলেও এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে আসেননি। সুনামগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের রনজিত চন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছেন বর্তমান এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও যুবলীগ নেতা সেলিম আহমদ। রতনের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল করিম শামীম ছাড়াও তিনটি উপজেলার শীর্ষ নেতারা রয়েছেন। সুনামগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের বিপক্ষে লড়ছেন বর্তমান এমপি ড. জয়া সেনগুপ্তা। জয়ার সঙ্গে তাঁর প্রয়াত স্বামী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের অনুসারীদের দেখা গেছে। সুনামগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মুহিবুর রহমান মানিকের বিরুদ্ধে দেড় যুগ ধরে দলের একটি অংশের অবস্থান। স্বতন্ত্র শামিম আহমদ চৌধুরীর সঙ্গে এবার তারা মাঠে। উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ওলিউর রহমান চৌধুরী বকুল, উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আজমল হোসেন সজল ছাড়াও বেশ কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান শামিমের পক্ষে। মৌলভীবাজার-২ আসনে নৌকার শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের বিপক্ষে লড়ছেন স্বতন্ত্র ও কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের পদত্যাগী চেয়ারম্যান শফি আহমদ সলমান। হবিগঞ্জ-৪ আসনে বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীর বিরুদ্ধে লড়ছেন ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন এবং হবিগঞ্জ-২ আসনে নৌকার ময়েজ উদ্দিন রুয়েলের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান এমপি আব্দুল মজিদ খান। মজিদের সঙ্গে জেলা নেতা তজম্মুল হক চৌধুরীসহ অনেককেই দেখা যাচ্ছে।

আরও খবর: জাতীয়