রাজনীতি

নিজেদের পাতা ফাঁদে বিপাকে আওয়ামী লীগ

  প্রতিনিধি ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ , ৩:২১:৪৩ প্রিন্ট সংস্করণ

নীলাকাশ টুডে

আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রতীক নৌকা নিয়ে ২৬৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কিন্তু দলটি দলীয় মনোনয়ন দিলেও স্বতন্ত্র বা ডামি প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দেয়। এতে নিজেদের পাতা ফাঁদে বিপাকে পড়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। সারা দেশে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে একের পর এক ঘটছে সংঘর্ষের ঘটনা। গত ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে এই সহিংসতা বেড়েই চলছে। এখন যেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র বা ডামি প্রার্থীরা গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যে ৪ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত অর্ধশতাধিক। এই সংঘর্ষ বা সহিংসতাকে দুঃখজনক ঘটনা বলেও মনে করছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।

তারা বলছেন, আমরা নৌকা বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছ থেকে এমন ঘটনা আশা করিনি। কারণ নৌকার প্রার্থীরাও আওয়ামী লীগের নেতা। আর স্বতন্ত্র প্রার্থীর অধিকাংশই আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা। তবে যারাই এই সহিংসতায় জড়াচ্ছেন বা উসকানি দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নেবে। প্রার্থিতা বাতিলের বিষয়টি নির্বাচন কমিশন দেখবে। যদিও ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন বলে দিয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বা সংঘর্ষের অভিযোগ আসবে, তাদের বিষয়ে তদন্ত করে প্রার্থিতা বাতিল করাও হতে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর ভোটে প্রচারের শুরু থেকে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, মারধর ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। বেশিরভাগ জায়গায় নৌকার সমর্থকরাই হামলা করছেন। বেশ কয়েকটি জায়গায় স্বতন্ত্র প্রার্থীও শক্তিশালী। ফলে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা রূপ নিচ্ছে হত্যা-সংঘর্ষে। যদিও আওয়ামী লীগ চায়, প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্য দিয়ে তারা বিজয়ী হোক। গত মঙ্গলবার রাতে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চরাঞ্চলে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনি ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষের মারামারিতে রফিকুল ইসলাম নামে একজন নিহত হন। গত শনিবার মাদারীপুরের কালকিনিতে এসকান্দার খাঁ (৬৫) নামে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এক কর্মীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত এসকান্দার মাদারীপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা সিদ্দিকীর কর্মী ও উপজেলার লক্ষ্মীপুর এলাকার ভাটাবালী গ্রামের আয়ুব আলী খাঁর ছেলে। সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পৌর এলাকায় নৌকার প্রার্থী এমপি মমিন মণ্ডলের সমর্থক শ্রমিক লীগ নেতা মোতালেব সরকারের বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণে আহত ফজলুল হক গত শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। এর আগে গত ১১ ডিসেম্বর পিরোজপুর সদরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মিসভা শেষে বাড়ি ফেরার পথে লালন ফকিরকে ১০-১৫ জন মিলে কুপিয়ে আহত করে। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তিনি পিরোজপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে এম এ আউয়ালের সমর্থক ছিলেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনে কোনো সংঘর্ষ-মারামারি দেখতে চাই না। দলের কেউ সংঘাত করলে তার রেহাই নেই, তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি যেহেতু অংশ নেয়নি। তাই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতেই আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র বা ডামি প্রার্থী বিষয়ে সুযোগ দিয়েছিল। কারণ আওয়ামী লীগ চায়, দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। কিন্তু এখন বিষয়টি গলার কাঁটা হয়ে দেখা দিয়েছে। তাবে যারাই সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগামী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী, দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের কাছে চিঠি দেওয়া হবে। যারা সহিংসতার সঙ্গে জড়িত থাকবেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) যৌক্তিক কোনো কারণে কারও প্রার্থিতা বাতিল করলে আওয়ামী লীগের কিছু বলার নেই।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আমরা চেয়েছিলাম নির্বাচন হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। কারণ দলীয় প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী দুজনই আওয়ামী লীগের। ইতিমধ্যে জেনেছি তিনজন মারা গেছেন। অনেকে আহত হয়েছেন। এ ঘটনাকে কোনোভাবেই আমরা মেনে নিতে পারছি না। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যেটি বলেছেন, তিনি যথার্থই বলেছেন। যারা সহিংসতায় জাড়িয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করছে। অভিযোগ সত্য হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিজেরা নিজেরা সহিংসতা করে যদি কারও প্রার্থিতা বাতিল হয়, তা নিয়ে দলের করার কিছু নেই।

তবে যেহেতু নির্বাচন চলছে, তাই আমরা তাদের প্রার্থিতা বাতিল করতে পারছি না। কিন্তু নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, নির্বাচনের পর দল কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না, সেটা নির্বাচনের পর দেখা যাবে। গত শনিবার নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আনিছুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, সহিংসতার ঘটনায় ইসি প্রার্থিতা বাতিলের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে ইসি। তথ্য পাওয়ার পর কঠোর সিদ্ধান্ত হতে পারে।

এ ছাড়া গতকাল রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, কয়েকটি এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রার্থিতা বাতিলের মতো কঠোর সিদ্ধান্তও আসতে পারে।

 

আরও খবর: রাজনীতি