জাতীয়

ঢাকা মেডিকেলসহ তিন হাসপাতালে ১১৮ কোটি টাকার বেশি যন্ত্রপাতি নষ্ট!

  ঢাকা অফিসঃ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ৬:১২:৫৫ প্রিন্ট সংস্করণ

 

দেশের তিনটি প্রধান সরকারি হাসপাতালে ২৩৮টি যন্ত্রপাতি নষ্ট পড়ে আছে। এর মধ্যে অনেক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া অচল হয়ে পড়ে আছে চারটি অ্যাম্বুলেন্স। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে হাসপাতালগুলোর দুরবস্থার এই চিত্র পাওয়া গেছে।

তিনটি হাসপাতালের মধ্যে আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল। হাসপাতাল ও যন্ত্র সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাবে হাসপাতাল তিনটিতে নষ্ট হওয়া যন্ত্রপাতির মূল্য অন্তত ১০০ কোটি টাকা।

 

তবে ওই তালিকার বাইরে তিনটি হাসপাতালে আরও অনেক যন্ত্রপাতি আছে। কিছু যন্ত্র নষ্ট থাকার তথ্যও রয়েছে। যেমন তালিকায় দেখাচ্ছে ঢাকা মেডিকেলের একটি এমআরআই যন্ত্র চালু আছে, বাস্তবে একটিও চালু নেই। গত সোমবার ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে জানা যায়, এমআরআই যন্ত্র সব নষ্ট। অন্যদিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনটি ডায়ালাইসিস যন্ত্র ও একটি আইসিইউ ভেন্টিলেটর যন্ত্র নষ্ট। কিন্তু তালিকায় এসব যন্ত্রের কোনো উল্লেখ নেই। এই ধরনের একটি সংবাদ আজ দেশের প্রথম সারির দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলোয় প্রকাশ করা হয়েছে। নীলাকাশ টুডে এর পাঠকের জন্য সেই সংবাদ গুরুত্বপূর্ণ অংশ তুলে ধরা হয়েছে। সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতির একটি বড় জায়গা চিকিৎসা যন্ত্রপাতি কেনা ও ব্যবহার। অনেক সময় প্রয়োজন না থাকলেও যন্ত্র কেনা হয়। আবার যন্ত্র নষ্ট হলে নানা অজুহাতে ঠিক সময়ে সেগুলো মেরামত করা হয় না।

অচল পড়ে থাকা যন্ত্রপাতির ব্যাপারে বক্তব্য নেওয়ার জন্য পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। তবে তাদের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

তালিকায় যেসব যন্ত্রপাতির নাম পাওয়া গেছে, তার মধ্যে আছে এক্স–রে যন্ত্র, ইসিজি যন্ত্র, আলট্রাসনোগ্রাম যন্ত্র, ওটি টেবিল, ওটি লাইট (সিলিং), ওটি লাইট (পোর্টেবেল), ডায়াথার্মি যন্ত্র, সাকার যন্ত্র, অ্যানেসথেসিয়া যন্ত্র, অটোক্লেভ যন্ত্র, ডেন্টাল যন্ত্র, অক্সিজেন সিলিন্ডার, অক্সিজেন কনসেনট্রেশন, নেবুলাইজার যন্ত্র, এনজিওগ্রাম যন্ত্র, এমআরআই যন্ত্র, সিটি স্ক্যান যন্ত্র ও অক্সিজেন জেনারেটর। এ ছাড়া রয়েছে অ্যাম্বুলেন্স।

সবচেয়ে বেশি যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। দেশের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ১৪৯টি যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে আছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, এর অধিকাংশ আর মেরামত করার অবস্থায় নেই।

সেই তুলনায় যন্ত্রপাতি কম নষ্ট দেখা যাচ্ছে মিটফোর্ড হাসপাতালে। এই হাসপাতালে নষ্ট যন্ত্র আছে ৩৮টি। এর মধ্যে ৩টি যন্ত্র মেরামতের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নষ্ট যন্ত্র আছে ৫১টি। এর মধ্যে ৩টিকে আর চেষ্টা করেও ব্যবহার উপযোগী করা যাবে না।

রোগীর সেবায় ঢাকা মেডিকেলে অ্যাম্বুলেন্স আছে ১২টি। এর মধ্যে অচল দুটি। অচল একটি অ্যাম্বুলেন্স মেরামতের অনুপযোগী। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চারটি অ্যাম্বুলেন্সের একটি নষ্ট এবং সেটি আর চালানো যাবে না। তবে মিটফোর্ড হাসপাতালের চারটির মধ্যে একটি অ্যাম্বুলেন্স অচল থাকলেও তা সচল করা সম্ভব।

যন্ত্র নষ্ট বা অচল থাকার ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, ‘কিছু যন্ত্র আছে বহু বছর আগে কেনা। তার জীবনই (যত দিন ব্যবহার করার কথা) হয়তো শেষ, অর্থাৎ তা আর ব্যবহারযোগ্য অবস্থায় নেই, ব্যবহার করা উচিত না। কিন্তু ব্যবহারের অনুপযোগী ঘোষণা করার প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল ও দীর্ঘ। এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয় না বলে অচল থাকা যন্ত্রের তালিকা বড় দেখায়।’

অবশ্য মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রশীদ–উন–নবী বলেছেন, ‘যন্ত্রপাতির ব্যাপারে আমি খুবই সতর্ক। রোগীদের সেবার কথা চিন্তা করে যন্ত্র অচল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা মেরামত করি। আমার হাসপাতালে অচল যন্ত্র কম।’

 

যন্ত্রপাতিগুলোর বাজারমূল্য নিয়ে যন্ত্র সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও একাধিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সবচেয়ে কম দাম অক্সিজেন কনসেন্ট্রেশন যন্ত্রের। এর দাম এক লাখ টাকা। সবচেয়ে বেশি দাম এআরআই যন্ত্রের। এর দাম ধরা হয়েছে ১৭ কোটি টাকা। অবশ্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের যন্ত্রটি কেনা হয়েছিল ১৯ কোটি টাকায়।

তালিকা অনুযায়ী রক্ষণশীল হিসাবে দেখা যাচ্ছে, মোট ১১৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকার যন্ত্র নষ্ট হয়ে আছে। অবশ্য এই হিসাবের মধ্যে নষ্ট চারটি অ্যাম্বুলেন্সের টাকা যোগ করা হয়নি। এগুলোর দাম জানা যায়নি। একাধিক সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তারা বলেছেন, একটি অ্যাম্বুলেন্সের দাম ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা।

এদিকে সাধারণ মানুষের একটি ধারণা আছে, কোথাও চিকিৎসা না জুটলেও ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা পাওয়া যাবে।

বিপুলসংখ্যক রোগী এই তিনটি হাসপাতালে আশা নিয়ে এলেও যন্ত্রপাতি নষ্ট থাকায় অনেক সময় তারা প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

ঢাকা মেডিকেলের মতো দেশের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানে এখন কোনো এমআরআই পরীক্ষা হচ্ছে না। আধুনিক চিকিৎসার জন্য যেকোনো বড় হাসপাতালে আজকাল এমআরআই (ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং) যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। চুম্বক শক্তি ও কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত শব্দতরঙ্গ ব্যবহার করে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ও টিস্যুর খুঁটিনাটি তথ্য–সংবলিত প্রতিচ্ছবি তৈরি করে এমআরআই যন্ত্র।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, ‘এটা বলতে কষ্ট লাগে যে অনেক রোগীকে অন্য হাসপাতালে যেতে হয়। অনেককে হয়তো এই একটি পরীক্ষা করানোর জন্য অ্যাম্বুলেন্সে করে অন্য হাসপাতালে পাঠাতে হয়।’

আরও খবর: জাতীয়