জাতীয়

চূড়ান্ত প্রস্তুতিতে দুই দল

  প্রতিনিধি ৯ নভেম্বর ২০২৩ , ৩:০৮:৪৭ প্রিন্ট সংস্করণ

নীলাকাশ টুডে

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনীতিতে চলছে নানা সমীকরণ। কৌশলে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। পুরোদমে শুরু করেছে নির্বাচনের প্রস্তুতি। পাশাপাশি আন্দোলন মোকাবিলায় করণীয় বিষয়ে নেতাকর্মীদের দেওয়া হচ্ছে নানা নির্দেশনাও। আর সরকার পতনের একদফার চূড়ান্ত আন্দোলনে রয়েছে বিএনপি। যে কোনো মূল্যে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ঠেকাতে চায়। এজন্য দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে মাঠে রয়েছে দলটি।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের কৌশল ও প্রস্তুতির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায়। আজ সন্ধ্যায় গণভবনে অনুষ্ঠেয় এ সভায় ১০টি সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-নির্বাচন পরিচালনা কমিটি এবং বিভিন্ন উপকমিটি গঠন। যার মধ্য দিয়ে দলকে পুরোপুরি নির্বাচনমুখী করতে চায় ক্ষমতাসীনরা। এছাড়া সাংগঠনিক অবস্থা, বিশেষ করে তৃণমূলের পরিস্থিতি তুলে ধরে সাংগঠনিক প্রতিবেদন দাাখিল করবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। সারা দেশের কোন সাংগঠনিক জেলায় কী সমস্যা তা উপস্থাপন করে সমাধানের নির্দেশনা চাইবেন তারা। পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট এজেন্ডার বাইরে (বিবিধ) দলীয় প্রার্থী বাছাই এবং মনোনয়ন ফরম বিক্রির তারিখ নির্ধারণসহ বিভিন্ন বিষয়েও আলোচনা হবে। দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। আরও জানা গেছে, নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপিসহ বিরোধীদের অবস্থান ও তাদের কর্মকাণ্ডের বিষয়গুলো আজকের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় আলোচনায় আসবে। বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলায় নিজেদের করণীয় বিষয়েও নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশের ভেতর ও বাইরের বিভিন্ন মহলের তৎপরতা নিয়েও আলোচনা হতে পারে। আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হবে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণার বিষয়গুলো নিয়েও। নির্বাচনি প্রস্তুতির পাশাপাশি সামনের দিনের বিভিন্ন দিবসভিত্তিক কর্মসূচি চূড়ান্ত করবে আওয়ামী লীগ।

আজকের সভার যে ১০টি সুনির্দিষ্ট আলোচ্যসূচি রয়েছে, সেগুলো হলো-শোক প্রস্তাব, ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদীর মৃত্যুবার্ষিকী, ১৪ ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস, ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, ২৪ জানুয়ারি গণ-অভ্যুত্থান দিবস পালন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ও সাবকমিটি গঠন, সমসাময়িক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে আলোচনা, সাংগঠনিক প্রতিবেদন দাাখিল ও বিবিধ।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম  বলেন, এই কার্যনির্বাহী কমিটির সভা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ও বিভিন্ন উপকমিটি গঠন করা হবে। আমাদের নির্বাচনি ইশতেহার নিয়ে আলোচনা হবে। দলীয় মনোনয়ন ও মনোনয়ন ফরম বিক্রির বিষয়সহ নির্বাচনের অন্য প্রক্রিয়াগুলো নিয়েও আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হবে। নির্বাচনে বিজয়ে জনগণের ম্যান্ডেট আদায় ও এর কৌশল নিয়েও আলোচনা হবে। নির্বাচন সামনে রেখে আমরা কী কী বিষয় নিয়ে মানুষের কাছে যাব, সেই কৌশলও নির্ধারণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে আমাদের নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখবেন। সামনে আমাদের বিভিন্ন দিবস আছে, সেই দিবসভিত্তিক কর্মসূচিগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হবে। এছাড়া বিএনপি-জামায়াত যে ধ্বংসাত্মক ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, সে বিষয়গুলো নিয়েও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় আলোচনা হবে বলেও জানান দলটির এই নেতা। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হবে। সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। নির্বাচনের আগে আমাদের দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসূচি নিয়েও আলোচনা হবে। মূলত জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হবে।

একদফার চূড়ান্ত আন্দোলনকে আরও বেগবান করে কৌশলে সাফল্য পেতে চায় বিএনপি। এজন্য কর্মসূচি সফলে এবার নেতৃত্বে রাখা হয়েছে তৃণমূল (মাঠ পর্যায়ে) নেতাদের। ইতোমধ্যে তাদের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের কোনো নেতা গ্রেফতার হলেই পরবর্তী নেতাকে দেওয়া হচ্ছে দায়িত্ব। প্রতিদিন অন্তত অর্ধশতাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন হাইকমান্ড। নিষ্ক্রিয় নেতাদেরও সক্রিয় করা হচ্ছে। চলমান অবরোধ কর্মসূচিতে পর্যায়ক্রমে একেকটি সাংগঠনিক জেলাকে নামানো হচ্ছে মাঠে।

তফশিল ঘোষণার পর নেতাকর্মীদের ‘অলআউট’ নামার পরিকল্পনা রয়েছে। সারা দেশ থেকে ঢাকাকে পুরোপুরিভাবে বিচ্ছিন্ন করতে চায় দলটি। এজন্য জেলা-মহানগর এবং গুরুত্বপূর্ণ উপজেলায় অবরোধ আরও জোরদার করতে সংশ্লিষ্ট এলাকার নেতাদের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার আবারও একতরফা সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে চক্রান্ত শুরু করেছে। তবে জনগণ আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায়ে সংকল্পবদ্ধ। অচিরেই এই অবৈধ সরকারের পতন হবে। বিএনপির নেতৃত্বকে দুর্বল করা যাবে না। কারাগারের বাইরে থাকা বিএনপির সর্বশেষ ব্যক্তিটি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবে।

আরও খবর: জাতীয়