জাতীয়

‘ঘুম ভাঙল’ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের, অবৈধ হাসপাতাল বন্ধে নতুন সিদ্ধান্ত

  প্রতিনিধি ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ৩:১৭:১৪ প্রিন্ট সংস্করণ

নীলাকাশ টুডে

নানা আলোচনা-সমালোচনার মুখে ‘ঘুম ভাঙল’ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। আগামী রোববার থেকে জেলা-উপজেলায় অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধে অভিযানে নামছে অধিদপ্তর। এরই মধ্যে এ নির্দেশনা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে। একই দিন স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনা নিরসনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, মানহীন ও নিবন্ধনহীন একটি হাসপাতালও চলতে দেওয়া হবে না।

সম্প্রতি খতনা করাতে গিয়ে বাড়তি অ্যানেসথেশিয়া প্রয়োগে দুই শিশুর মৃত্যুসহ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় রোগী মারা যাওয়ার পটভূমিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হলো।
জানা গেছে, রাজধানীর ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলা ও গাফিলতিতে গেল ৭ জানুয়ারি শিশু আয়ান মারা গেলে প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে অনেকে। গত ১৫ জানুয়ারি আয়ানের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করে ৭ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে সারাদেশে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত বা অনুমোদনহীন কত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে– সে বিষয়েও একটি প্রতিবেদন চান হাইকোর্ট। গত ২৫ জানুয়ারি সেই প্রতিবেদন জমা দেয় স্বাস্থ্য বিভাগ। নতুন তালিকায় দেখা গেছে, ১ হাজার ২৮৫টি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার অবৈধভাবে চলছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকায় দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি ৪১৫টি অবৈধ প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিভাগে। এর পর রংপুরে ১১১, ময়মনসিংহে ২৫২, রাজশাহীতে ৫৫, চট্টগ্রামে ২৪০, বরিশালে ৪৮, খুলনায় ১৫৬ ও সিলেটে রয়েছে ৮টি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিষ্ক্রিয়তা এবং কর্মকর্তাদের তদারকির অভাবে অবৈধভাবে এসব হাসপাতাল চলছে। শুধু এসব হাসপাতাল বন্ধ করলেই যথেষ্ট হবে না, বছরজুড়ে তদারকি থাকতে হবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, অবৈধ হাসপাতাল বন্ধে অভিযানে যাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর– এটা ভালো খবর। তবে অভিযান যেন কিছুদিন পর বন্ধ  হয়ে না যায়। অবৈধ হাসপাতাল মালিকের রাজনৈতিক ক্ষমতা বা অর্থের যতই দাপট থাকুক না কেন, এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া উচিত নয়।

জরুরি ১০ নির্দেশনা
বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে শৃঙ্খলা ফেরাতে ১০ নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেগুলো হলো– বেসরকারি ক্লিনিক-হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিকের লাইসেন্সের কপি হাসপাতালের সামনে দৃশ্যমান রাখতে হবে; এক বছর পর নিবন্ধন নবায়নের জন্য একজন কর্মকর্তা বা কর্মচারী নির্ধারণ করে রাখতে হবে– তাঁর নাম, ছবি, মোবাইল নম্বর হাসপাতালের সামনে দৃশ্যমান করে রাখা; যে নামে হাসপাতালের নিবন্ধন রয়েছে, সেই নাম ছাড়া অন্য নামে নতুন করে ডায়াগনস্টিক ও হাসপাতাল খোলা যাবে না; ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে যে ক্যাটেগরিতে নিবন্ধন নেওয়া, শুধু সে ক্যাটেগরিতে নির্ধারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাবে; ক্যাটেগরি অনুযায়ী প্যাথলজি, মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি ও রেডিওলজি

বিশেষজ্ঞ জনবল নিতে হবে; নিবন্ধনের প্রকারভেদে
শয্যা সংখ্যা অনুযায়ী মানতে হবে সব শর্ত; হাসপাতালে সেবা দেওয়া সব চিকিৎসকের পেশাগত ডিগ্রির সনদ, বিএমডিসির হালনাগাদ নিবন্ধন ও নিয়োগপত্রের কপি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সংরক্ষণ করবে; অস্ত্রোপচার করবে শুধু রেজিস্টার্ড চিকিৎসক; নিবন্ধিত হাসপাতাল ছাড়া কোনো অবস্থাতেই চেম্বারে, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া যাবে না। সব হাসপাতালকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হবে; অস্ত্রোপচারের জন্য অবশ্যই অপারেশন থিয়েটারে যথাযথ যন্ত্রপাতি নিশ্চিত করতে হবে এবং জরুরি পরিস্থিতিতে রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার সব ব্যবস্থা রাখতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, আগামী রোববার থেকে অবৈধ হাসপাতাল বন্ধে অভিযান চালানো হবে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জরুরি ১০ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অভিযানে হাসপাতালে এগুলোর বাস্তবায়ন না থাকলেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। অনেক সময় হাসপাতালে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ ওঠে। তাই স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন ও শৃঙ্খলা ফেরাতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করা তালিকা থেকে অনেক অবৈধ হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলো বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিবন্ধনহীন হাসপাতাল চলতে দেওয়া হবে না।

 

আরও খবর: জাতীয়