রাজনীতি

কঠিন পরীক্ষায় বিএনপি

  ঢাকা প্রতিনিধিঃ ৩০ এপ্রিল ২০২৩ , ১:৩৮:৫৮ প্রিন্ট সংস্করণ

 

সরকারবিরোধী আন্দোলনে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি বিএনপি। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে টানা আন্দোলনে কোনো সাফল্য নেই। এবার সফল পরিসমাপ্তি হবে কিনা সেটাও বড় চ্যালেঞ্জ। আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলতে না পারলে ভয়াবহ চাপে পড়বে দল।

এ অবস্থায় ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙতে মরিয়া দলের শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যায়ের প্রতিটি নেতাকর্মী। তারা জয়ের বিকল্প ভাবছেন না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তারা বিজয় নিশ্চিত করতে চান। তবে এ আন্দোলন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই এগিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীরা।

 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সরকার হটানোর এবারের আন্দোলনই শেষ লড়াই। এবার আমাদের জীবন-মরণ লড়াই করতে হবে, হয় জীবন না হয় মরণ।

তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আসুন আমরা সেই লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলি। যা উত্তাল সমুদ্রের সুনামির মতো এই সরকারকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।’

জানা গেছে, দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে দলটি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে আন্দোলন করে শেষ মুহূর্তে ভোটে যান নেতারা। কিন্তু ওই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনে তা প্রত্যাহার করে ফের মাঠের আন্দোলনের প্রস্তুতি শুরু হয়।

বিগত কয়েক বছর ধরে দল গোছানোসহ সরকারবিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে অনড় অবস্থানে নেতারা। লক্ষ্য এবার একটাই এ সরকারের পতন। কিন্তু সরকার এমনিতেই ক্ষমতা ছেড়ে দেবে না। এ অবস্থায় দাবি আদায়ে রাজপথই দলটির একমাত্র জায়গা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি এবার ব্যর্থ হলে তাদের কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে। কিন্তু দল হিসাবে বিএনপি বিলীন হবে না। কারণ, অভ্যন্তরীণ ঐক্য এবং সারা দেশে অসংখ্য নেতাকর্মীর সমর্থনই দলটিকে টিকিয়ে রাখবে।

বিশিষ্ট আইনজীবী সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, এবারের আন্দোলনে সফল না হলে অবশ্যই বিএনপির জন্য সামনের দিনগুলো কঠিন হবে। কিন্তু দলটি খুব বেশি দুর্বল হয়ে যাবে না। কারণ, এক যুগের বেশি ক্ষমতার বাইরে থেকে যে দলটা টিকে আছে তারা আরও কয়েক বছরে খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আমি মনে করি না।

তিনি বলেন, আগামী দিনে পাঁচ সিটি নির্বাচন দলটির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব নির্বাচনে যদি হেভিওয়েট প্রার্থীদের ভোট থেকে বিরত রাখা যায় তবে অভ্যন্তরীণ শক্তির বহিঃপ্রকাশ হবে। আর যদি অনেকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করেন তাহলে দলের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে। অভ্যন্তরীণ ঐক্য এবং সারা দেশে বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থকই দলটির টিকে থাকার বড় শক্তি বলে মনে করেন এ আইনজীবী।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে গণতন্ত্র রক্ষার দায়িত্ব সব রাজনৈতিক দলের। বিএনপি বড় দল হিসাবে তারাও এই দায়িত্ব এড়িয়ে চলতে পারে না। কাজেই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে তারা যে আন্দোলন করছে তা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই শেষ করতে হবে। এর অন্যথা করা যাবে না।

তারা বলেন, দেশ পরিচালনার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলের। দলের শীর্ষ নেতৃত্বকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কিভাবে ক্ষমতায় আসবেন, দেশ পরিচালনা করবেন। নেতাকর্মীরা তাদের দিকে তাকিয়ে আছেন। নেতৃত্ব সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে ভুল করলে দলকে, জনগণকে এর মূল্য দিতে হবে। সরকারি এবং বিরোধী সব দল এসব দিক মাথায় রেখে নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দেবেন বলে তারা আশা করেন।

দলের নেতাকর্মীরা মনে করছেন, বিএনপির সামনে একটাই পথ, চলমান আন্দোলনের সফল পরিসমাপ্তি। অতীতের মতো এবারও ব্যর্থ হলে ভবিষ্যতে দলটির অস্তিত্ব থাকবে কিনা তা নিয়েই নানা প্রশ্ন রয়েছে। আওয়ামী লীগ বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করে ক্ষমতায় এলে নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের স্টিমরোলার আরও বাড়বে। পুরোনো মামলা সচলের পাশাপাশি নতুন করে আরও মামলা দেওয়া হবে। অনেক মামলায় নেতাকর্মীদের সাজাও হতে পারে। ভবিষ্যতের কথা ভেবে অনেকে দেশ ছেড়ে পালাবেন। আবার অনেকে রাজনীতি থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেবেন। এমন বাস্তবতা মাথায় নিয়েই এবার অলআউট মাঠে নামতে চায় দলটি। তৃণমূলসহ সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের এমন বার্তা দেওয়া হচ্ছে।

নেতাকর্মীদের মধ্যেও এ উদ্দীপনা কাজ করছে। নিজেদের প্রয়োজনেই সর্বোচ্চ ত্যাগ শিকারে তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু এ কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দলটির সামনে সময় খুব কম। এ অল্পসময়ে সবকিছু গুছিয়ে এনে একটা সফল আন্দোলনের কৌশল নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন দলটির হাইকমান্ড।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এ আন্দোলন শুধু বিএনপির টিকে থাকা নয়। আন্দোলন ব্যর্থ হলে স্বাধীন-সার্বভৌম জাতি হিসাবে আমরা টিকে থাকতে পারব কিনা, সেই প্রশ্নই বড় করে দেখা দেবে। তাই বিএনপির জন্য নয়, দেশের জন্য এ আন্দোলনে জয়ের বিকল্প নেই। সেই চিন্তা থেকে সাধারণ মানুষও এবারের আন্দোলনে রাজপথে নামবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। বিএনপি আন্দোলন করছে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে। কিন্তু বিষয়টি সংবিধানবহির্ভূত। তাদের দাবি অনুযায়ী নির্বাচন করতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। আওয়ামী লীগ সেটা কেন করবে। এ বিষয়েও বিএনপিকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

আরও খবর: রাজনীতি