সারাদেশ

একেই বলে লোভে পাপ, খোয়ালেন ৫ কোটি টাকা

  নীলাকাশ টুডে ৯ আগস্ট ২০২৩ , ৫:৩৬:৩৮ প্রিন্ট সংস্করণ

লোভ মানুষের চরম শত্রু, জীবনের বিনাশ সাধনই এর কাজ। তেমনিভাবে দ্বিগুণ লাভের প্রলোভনে পড়ে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা খুইয়েছেন চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মো. বোরহান। সম্প্রতি এমনই এক ঘটনার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দেশের প্রথম সারির একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মো. বোরহান প্রতারিত হয়েছেন চট্টগ্রামের এক সময়ের বহুল পরিচিত ব্যবসায়ী চাঁন মিয়া সওদাগরের নাতি সাইমুনের মাধ্যমে। সাইমুনের পুরো নাম শাহাদাত বিন আশরাফ। নিজেকে ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিলেও মূলত তিনি একজন প্রতারক। প্রতারণার ক্ষেত্রে দাদা চাঁন মিয়া সওদাগরের ইমেজকে কাজে লাগান তিনি। ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) তদন্তে বিষয়টি উঠে এসেছে।

প্রতারণার অভিযোগে এরই মধ্যে চট্টগ্রামের আদালতে সাইমুনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছেন সিআইডি প্রধান কার্যালয় ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম শাখার পুলিশ পরিদর্শক মনিরুজ্জামান।

সিআইডি সূত্র জানায়, এক বন্ধুর মাধ্যমে ৩৭ বছর বয়সী শাহাদাত বিন আশরাফ ওরফে সাইমুনের সঙ্গে পরিচয় হয় বোরহানের। ওই সময় সাইমুন নিজেকে চট্টগ্রামের বিখ্যাত ব্যবসায়ী চাঁন মিয়া সওদাগরের নাতি বলে পরিচয় দেন। পরিচয় থেকে তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে সখ্য। একপর্যায়ে সাইমুন নিজেকে চট্টগ্রামের বড় বড় ব্যবসায়ীদের পার্টনার ও খাতুনগঞ্জভিত্তিক আমদানি-রপ্তানিকারক হিসাবে নিজেকে উপস্থাপন করেন। ধীরে ধীরে বোরহানের বিশ্বস্ততা অর্জন করেন সাইমুন। বিশ্বস্ততার দাবি থেকে দ্বিগুণ লাভের প্রস্তাব দিয়ে বোরহানের কাছে পাঁচ কোটি টাকা দাবি করেন। সাইমুনকে বিশ্বাস করে ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৯ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত ১৬টি ব্যাংকের ৪১টি হিসাবের মাধ্যমে ওই টাকা প্রদান করেন বোরহান। এরপর থেকেই বোরহানের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় সাইমুন। শুধু বোরহানের সঙ্গেই নয়, আরও অনেকের সঙ্গেই এভাবে প্রতারণা করেছেন সাইমুন।

সিআইডি জানায়, সাইমুনের প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে বোরহান ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানায় একটি মামলা করেন। পাশাপাশি সাইমুনের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ এনে বিষয়টি নিয়ে তদন্তের জন্য সিআইডি প্রধানের কাছে অবেদন করেন। অনুসন্ধান শেষে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় সিআইডি বাদী হয়ে গত বছরের ৬ মার্চ একটি মামলা করেন। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ অনুযায়ী চান্দগাঁও থানার ওই মামলায় ১৭ জুলাই চট্টগ্রামের আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়।

চার্জশিট প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত, সাক্ষীদের দেওয়া বক্তব্য, বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাব বিবরণী, ভিকটিমের টাকা জমার ভাউচার ও পারিপার্শ্বিকতা পর্যালোচনায় ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এতে আরও বলা হয়, প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করে তা হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তর করেছেন সাইমুন। স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ তৈরি করেছেন। বোরহানের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া টাকা দিয়ে সাইমুন পাওনাদারদের দেনা পরিশোধ করেছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান প্রতিবেদককে জানান, তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। নিজেকে ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিলেও সাইমুন প্রকৃত অর্থে একজন মহাপ্রতারক। তার দাদা চাঁন মিয়া সওদাগর একজন নামকরা ব্যবসায়ী ছিলেন। সাইমুনের বাবার নাম মোহাম্মদ আশরাফ আলী। তার বাড়ি চট্টগ্রাম চান্দগাঁওয়ের শমশেরপাড়ায়।

আরও খবর: সারাদেশ