সারাদেশ

‘আমার প্রাণডা নিয়ে আমার মেয়ের প্রাণডা ফেরত দাও আল্লাহ…’

  প্রতিনিধি ৩১ মে ২০২২ , ২:১৪:৪৭ প্রিন্ট সংস্করণ

 

নীলাকাশ টুডেঃ যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামে গোসল করতে নেমে পুকুরের পানিতে তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ফুলের মত তিনটি তাজা প্রাণের অকাল প্রয়াণে বাকরুদ্ধ সবাই। সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছে আত্মীয় স্বজন-প্রতিবেশীরা। গ্রামজুড়ে চলছে শোকের মাতম।

এর মধ্যে এক শিশুর মা নিজের জীবন দিয়েও মেয়ের জীবন ফিরিয়ে দিতে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানিয়ে বিলাপ করতে থাকেন।

সোমবার দুপুরে বাঘারপাড়া উপজেলার বাসুয়াড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ শ্রীরামপুর গ্রামে পুকুরে গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে ৩ শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।

নিহতরা হলো, ওই এলাকার হারুন মোল্যার মেয়ে তমা (৮), কামরুল ইসলামের মেয়ে সুমাইয়া (৯) ও সাঈদ মোল্যার ছেলে হোসাইন (৮)। তারা একই পাড়ার বাসিন্দা।

নিহত সুমাইয়ার বাবা কামরুল বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, আমার মেয়েটা ছিল একেবারেই শান্ত প্রকৃতির, হাসি ছাড়া কথা বলত না, লেখাপড়ায় ছিল খুবই মনোযোগী, এমন লক্ষ্মী মেয়েকে হারিয়ে আমি কীভাবে বাঁচব বলেই বুক চাপড়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

সুমাইয়ার মা গুনজার বেগম বলেন, সুমাইয়া স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস থ্রিতে পড়ে। সকালে স্কুলে গিয়েছিল না খেয়ে। স্কুল থেকে ফিরেই বলে মা ভাত দাও। তাকে বলি গোসল করে আই। ভাত দিচ্ছি। পরে চাচাতো বোন তমার সাথে গোসল করতে যায়। গোসল করতে যেয়ে আর ফেরেনি তমা।

আহাজারি করতে করতে তিনি বলেন, দুই বছর আগে ক্যান্সারে হারিয়েছি মিঠুন নামে ১০ বছরের ছেলেকে। এর পর শান্তারেও হারালাম। এখন কাকে নিয়ে বাঁচবো আমরা। আকাশপানে দুইহাত তুলে সৃষ্টিকর্তার কাছে ফরিয়াদ জানান- ‘আমার প্রাণডা নিয়ে আমার মেয়ের প্রাণডা ফেরত দাও আল্লাহ……!

বাসুয়াড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান সরদার বলেন, দুপুরে ওই এলাকার চার শিশু পাশের পুকুরে গোসল করতে নামে। তাদের মধ্যে তিনজন পুকুরে ডুবে যায়। আরেক শিশু দৌঁড়ে বাড়ি ফিরে জানায়, অন্যরা পুকুরে ডুবে গেছে। তখন স্থানীয়রা পুকুরে নেমে শিশুদের উদ্ধার করে বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। মাগরিব বাদ বাসুয়াড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ শ্রীরামপুর ঈদগা মাঠে মাগরিব বাদ তিন শিশুর নামাজের জানাজা শেষে পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়েছে।

এদিকে মর্মান্তিক এই ঘটনায় নিহত তিন শিশুর পরিবারে সমবেদনা জানাতে ছুটে আসেন বাঘারপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ভিক্টোরিয়া পারভীন সাথী। তিনিও স্বজনদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেন।

তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, উপজেলা পরিষদ থেকে তিন শিশুর পরিবারকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা হবে।

বাঘারপাড়া থানার ওসি ফিরোজ উদ্দিন জানান, কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এলাকার এখন শোকের মাতম বইছে।

আরও খবর: সারাদেশ