সারাদেশ

আওয়ামী লীগ নেতারা কে কার, বোঝা ভার

  প্রতিনিধি ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩ , ৭:৪১:৫৭ প্রিন্ট সংস্করণ

নীলাকাশ টুডে 

নরসিংদীতে ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগ নেতারা কে কার পক্ষে, তা বোঝা এখন বেশ ভার। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের পদধারী নেতার অধিকাংশ প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে থাকলেও অনেকে গোপনে সমর্থন দিচ্ছেন দলের মনোনয়নবঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। সপ্তাহখানেক আগে আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর পর ঘটেছে পক্ষ বদলের ঘটনা। আগামী ৭ জানুয়ারির ভোট পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নরসিংদী-৩ ও ৪ আসন ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। সমকালে এই খবরটি আজকের পত্রিকায় ছাপা হয়েছে।

এই খবরে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, জেলার পাঁচটি আসনের চারটিতে ঈগল প্রতীকে আওয়ামী লীগ নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তবে বড় প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে নরসিংদী-৩ এবং ৪ আসনে। সরকারি একটি সংস্থার তথ্যানুযায়ী, এই দুই আসনে নৌকা পিছিয়ে রয়েছে। আওয়ামী লীগের বড় অংশের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সমর্থন পাচ্ছে ঈগল। এক স্বতন্ত্র প্রার্থী বলেন, ‘অনেক নেতা দিনে নৌকা আর রাতে ঈগল।’

বিএনপিহীন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে আওয়ামী লীগ এবার দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে বাধা দেয়নি। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে উৎসাহ দিয়েছে বলে জানা যায়। আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের লড়াইয়ের মাধ্যমে এটিকে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর কৌশল বলে মনে করা হচ্ছে। এ কৌশলের কারণে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতার অবস্থান স্পষ্ট নয়। দল থেকেও বলা হয়নি, কাকে সমর্থন করা যাবে আর কাকে করা যাবে না।

জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটিগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের অধিকাংশ নৌকার পক্ষে প্রচারে নেমেছেন। আবার তাদের অনেকে গোপনে ঈগলের পক্ষে রয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রের খবর।

বেলাব ও মনোহরদী উপজেলা নিয়ে গঠিত নরসিংদী-৪ আসনে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম খান বিরু। ঈগল প্রতীকের এই প্রার্থী মনোহরদী উপজেলার পাঁচবারের চেয়ারম্যান। এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন জেলা কমিটির সদস্য শিল্পপতি এ এইচ আসলাম সানি। তাঁর অনুসারীরা এখন নৌকা নাকি ঈগল– কোন দিকে তা স্পষ্ট নয়।

গতকাল সোমবার বেলাব বাজারে কথা হয় আসলাম সানির অনুসারী হিসেবে পরিচিত জেলা আওয়ামী লীগের এক সদস্যের সঙ্গে। তিনি প্রথমে জোরের সঙ্গে দাবি করেন, ‘আওয়ামী লীগের পদে রয়েছি। শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন, তাঁর পক্ষেই থাকব।’ পরে ভিড় কমতেই মুখ খোলেন এই নেতা। বলেন, ‘নৌকার প্রার্থী জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন। সে কারণে ঈগলের পক্ষে থাকব।’ তিনি জানান, দলীয় পদে থাকা অধিকাংশ নেতার একই অবস্থা।

বেলাব উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি ও সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম রয়েছেন নৌকার পক্ষে। যে কয়েকজন নেতা স্থানীয় রাজনীতিতে শিল্পমন্ত্রীর বিরোধী হিসেবে পরিচিত, তাদের একজন উপজেলা চেয়ারম্যান সমসের জামান ভূঁইয়া রিটন। তিনি নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে দলীয় পদ হারান এবং মামলায় পড়ে উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে প্রায় দুই বছর সাময়িক বরখাস্ত ছিলেন। তবে গত বছরের ডিসেম্বরে চেয়ারম্যান পদে ফিরে সমসের জামান রিটন শিল্পমন্ত্রীর পক্ষে ভিড়েছেন। গতকাল দুপুরে টেলিফোনে তিনি জানান, মন্ত্রীর বাসায় এবং নৌকার প্রচারে রয়েছেন। সমসের জামান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাঁকে মনোনয়ন দিয়েছেন, আওয়ামী লীগের সবাই তাঁর পক্ষে।’

তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষ্য, প্রকৃত অবস্থা ভিন্ন। ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও ক্লিপে শিল্পমন্ত্রীকে বলতে শোনা গেছে, ‘নমিনেশন দিতে আইসা দেখলাম লাঙ্গলের কামালের অবস্থা আমার…।’ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় নেতাদের পাশে না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে তাঁকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘আমার বাড়ির লোকগুলো আসলো না, আমি একা গেলাম বিয়া করতে (মনোনয়ন জমা দিতে)। বরযাত্রী তো নাই আমার।’

নির্বাচনের মৌসুমে মন্ত্রীর ছেলে মাঞ্জুরুল মজিদ মাহমুদ সাদির একটি কথিত কথোপকথন ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অভিযোগ করা হচ্ছে, ঘোড়াশাল সার কারখানা নির্মাণ প্রকল্পের এক ঠিকাদারের কাছে ঘুষ চেয়েছেন মন্ত্রীপুত্র। ঘুষ না দিলে ওই ব্যবসায়ীর নরসিংদীতে ঢোকা বন্ধ করে দেবেন বলে হুমকি দিয়েছেন তিনি। তবে এই প্রতিবেদকের পক্ষ থেকে ওই কথোপকথনের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

মনোহরদী ও বেলাব উপজেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতার ভাষ্য, মন্ত্রীপুত্রের কারণে অধিকাংশ নেতাকর্মী নৌকার বিরুদ্ধে। তাদের অভিযোগ, মাহমুদ সাদির নির্দেশে বিভিন্ন হামলা হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার দাবি, তাঁকে তিনটি গায়েবি মামলায় আসামি করা হয়েছিল।

‘চলো গড়ি বেলাব’ নামের একটি ফেসবুক পেজে ৪৯ হাজার অনুসারী রয়েছে। এই পেজের অ্যাডমিন তানভীর হাসান বলেন, ‘১৫ বছরের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ সৃষ্টি হয়েছে এবারের নির্বাচনে। টাকা দিয়ে কিছু নেতাকর্মীকে পক্ষে রাখা হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষ পরিবর্তন চায়।’ নৌকার সমর্থকরা বলছেন, এ অভিযোগের সত্যতা নেই।

সাইফুল ইসলাম খান বিরুর পক্ষে প্রকাশ্যে ভোটের প্রচারে নামা আমলাব ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. পরশ মোল্লা বলেন, ‘সব নেতাই রয়েছেন ঈগলের পক্ষে। দলীয় পদপদবির কারণে ওপেন হতে পারছেন না। দলের অবস্থান পরিষ্কার হলে সবাই প্রকাশ্যে মাঠে নেমে পড়বেন।’

আরও খবর: সারাদেশ