জাতীয়

সংঘর্ষে পুলিশের ৭ অস্ত্র লুট, তিনটি অস্ত্র কার হাতে

  প্রতিনিধি ২ নভেম্বর ২০২৩ , ২:৩৯:২৪ প্রিন্ট সংস্করণ

নীলাকাশ টুডে  

ঢাকায় মহাসমাবেশে আসা বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় পুলিশের অন্তত সাতটি অস্ত্র লুট হয়েছে। এর মধ্যে দুটি অস্ত্র পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। আগুনে পোড়ানো আরেকটি অস্ত্রের একটি খণ্ড পাওয়া গেছে। তবে এখনো দুটি পিস্তল ও একটি শটগানের হদিস মিলছে না। অস্ত্রগুলো কাদের হাতে রয়েছে-এখনো তার কূলকিনারা করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে অস্ত্রগুলোর অবৈধ ব্যবহারের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় লুট হওয়া অস্ত্রের ফুটেজ দেখে আসামিদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে পুলিশ। বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি কোনো জঙ্গিগোষ্ঠী অস্ত্র লুটে জড়িত কিনা-তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

ডিএমপি সূত্র জানিয়েছে, ২৮ অক্টোবর শনিবারের সমাবেশে সবচেয়ে বেশি পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন কাকরাইল ও নাইটেঙ্গেল এলাকায়। এর মধ্যে নাইটেঙ্গেল মোড় এলাকা থেকে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র খোয়া গেছে। চারটি শটগান হারিয়েছে এই এলাকা থেকে। এর মধ্যে কাকরাইল গ্যারেজ পট্টি থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় দুটি শটগান উদ্ধার হয়েছে। নাইটেঙ্গেল মোড় থেকে আরেকটি গ্যাসগান উদ্ধার হয়। অপর একটি চাইনিজ রাইফেল আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছিল হামলাকারীরা। সেটির ভাঙা লোহার একটি অংশ উদ্ধার হয়েছে। সাতটি অস্ত্রের মধ্যে এই চারটি উদ্ধার করতে পেরেছে পুলিশ।

ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (লজিস্টিকস্) মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেন, অনেকগুলো ঘটনায় অস্ত্রগুলো উদ্ধার হয়েছে। আহত পুলিশ সদস্যদের কাছে থাকা অস্ত্র পরে তার টিমের অন্য সদস্যরা উদ্ধার করতে পেরেছেন। দুটি গ্যাসগানও এভাবে পাওয়া গেছে।

উদ্ধার না হওয়া তিনটি অস্ত্রের বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, এর মধ্যে দুটি সেভেন পয়েন্ট সিক্স টু মডেলের পিস্তল রয়েছে। এর একটি রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের উত্তর গেটে এক পুলিশ সদস্যকে মারধর করে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। আরেকটি পিস্তল নাইটেঙ্গেল মোড় থেকে নেওয়া হয়। বিজয়নগরের বক্সকালভার্ট রোডের পশ্চিম প্রান্ত থেকে লুট হয় একটি শটগান।

যুগান্তরের হাতে আসা এ সংক্রান্ত একটি ফুটেজে দেখা যায়, মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়সংলগ্ন শহীদবাগ মোড় থেকে একটি দল ২৮ অক্টোবর পুলিশের একটি টিমকে ধাওয়া করে। হামলাকারীদের ছোড়া ইটপাটকেলের মুখে পুলিশের দলটি রাজারবারগ পুলিশ লাইন্সের উত্তর দিকসংলগ্ন মৌচাক অভিমুখের দিকে এগোতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর তারা পুলিশ লাইন্সের দুই নম্বর গেট (শহিদ কনস্টেবল মহিউদ্দীন গেট) দিয়ে ভেতরে ঢুকে যান। এ সময় একজন পুলিশ সদস্য ঢুকতে পারেনি না। তাকে ২০-৩০ জন হামলাকারী ঘিরে ফেলে। লাঠিসোঁটা নিয়ে চলে তার ওপর হামলা।

একপর্যায়ে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়লে কালো শার্ট পরা এক ব্যক্তি তার কোমর থেকে পিস্তলটি বের করে নিয়ে পালিয়ে যায়।

উদ্ধার না হওয়া শটগানটির বিষয়ে ডিএমপি সূত্র জানায়, বিজয়নগর পানির ট্যাংকির কাছে পুলিশের একটি পিকআপ পোড়ানো হয়। সেখানে ইটপাটকেলের মধ্যে এক পুলিশ সদস্য আহত হয়ে পড়েছিলেন। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ওই জায়গা থেকেই শটগানটি ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাহউদ্দীন মিয়া বলেন, দুটি পিস্তল এবং একটি শটগান এখনো মিসিং আছে। এগুলো উদ্ধারে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি সূত্র জানিয়েছে, অস্ত্র ছিনতাইয়ের ঘটনার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে চেহারাগুলো শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন তারা। প্রয়োজনে এগুলো সারা দেশের পুলিশের কাছে পাঠানো হবে। এর পাশাপাশি অস্ত্র ছিনতাইয়ে কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা আছে কিনা-সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পূর্বনির্ধারিত মহাসমাবেশ ছিল। এটি শুরুর আগেই কাকরাইল মোড়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় দলটির নেতাকর্মীদের। পরে শান্তিনগর, নয়াপল্টন, বিজয়নগর, ফকিরাপুল, আরামবাগ এবং দৈনিক বাংলা মোড়সহ আশপাশের এলাকায় তা ছড়িয়ে পড়ে। এসব এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সহিংসতার এই ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মামলা হয়।

আরও খবর: জাতীয়