রাজনীতি

হার্ডলাইনে গেল বিএনপি

  নীলাকাশ টুডে ২৯ জুলাই ২০২৩ , ২:২৮:৩০ প্রিন্ট সংস্করণ

 

 

সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে লাগাতার কর্মসূচি শুরু করল বিএনপি। আজ শনিবার রাজধানী ঢাকার সব প্রবেশমুখে অবস্থানের মধ্য দিয়ে আন্দোলনের নতুন পর্যায় শুরু করছে দলটি। গতকাল শুক্রবার ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে লক্ষ্যে পৌঁছার আগ পর্যন্ত রাজপথে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে তারা। এর মধ্য দিয়ে বিএনপি দৃশ্যত হার্ডলাইনে চলে গেল।

অন্যদিকে বিরোধীদের লাগাতার আন্দোলন ঘোষণার পরও নিজেদের অবস্থানে অনড় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বিএনপিকে কোনো রকম ছাড় দেওয়া হবে না বলে দলটির নেতারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। আজ ঢাকার প্রবেশমুখে শান্তি সমাবেশের ডাক দিলেও অনুমতি না মেলায় গতকাল রাতে সেই কর্মসূচি স্থগিত করে মহানগর আওয়ামী লীগ। তবে প্রতিটি থানা ওয়ার্ড কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা সতর্ক পাহারা দেবে।

এর আগে গতকাল রাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক জানান, আজ শনিবার বিএনপি, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ঢাকার সব প্রবেশমুখে সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তবে তাদের কেউ ডিএমপির কাছ থেকে এ-সংক্রান্ত কোনো অনুমতি নেয়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে কোনো দলকেই এ কমসূচি পালনের অনুমতি দেয়নি ডিএমপি।

আরও পড়ুনঃ ঢাকার প্রবেশ মুখে অবস্থান কর্মসূচির অনুমতি দেয়নি ডিএমপি

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কয়েক মাস ধরে দুপক্ষ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করলেও হঠাৎ করেই পরিস্থিতি বদলে যাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। কোনো রকম অঘটন ছাড়াই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শুক্রবারের বৃহৎ জনসমাবেশের সমাপ্তি সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তির কারণ হতে পারত। কিন্তু শান্তিপূর্ণ সেই সমাবেশ থেকেই রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা শুরু হলো।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুদলই হার্ডলাইনে আছে। এমন পরিস্থিতি তাদের আচরণকে প্রভাবিত করে। শুক্রবারের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের বড় কারণ যুক্তরাষ্ট্রের ১৪ কংগ্রেসম্যানের বক্তব্য। আগামী দিনে এরকম কী ঘটবে না ঘটবে, আমরা জানি না। বাস্তবতা কল্পনাকেও হার মানায়। যদি নিজেরা আলাপ-আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করতে পারি, তাহলে ভালো। তা না হলে নিয়তি এ দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।’

শুক্রবার নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত মহাসমাবেশ থেকে এক দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। আজ শনিবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীর চারটি প্রবেশমুখে পাঁচ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে দলটি। একই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী গণতন্ত্র মঞ্চসহ বাকি শরিকরাও।

এর মধ্য দিয়ে দাবি আদায়ে এক বছর ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসা বিএনপি একদফার শেষ ধাপের আন্দোলনে নামল। এখন ধারাবাহিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে চলমান আন্দোলনকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে নিয়ে যেতে চায় দলটি। আপাতত এক দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও এখন থেকে ধারাবাহিকভাবে রাজপথে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। শনিবারের অবস্থান শেষে পরদিনের জন্য নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। এভাবে প্রতিদিনই ঢাকায় কোনো না কোনো কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। মহাসমাবেশের বক্তৃতায় শীর্ষ নেতাদের প্রায় সবাই ‘লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত ঘরে না ফেরার’ জন্য দলের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন। কেউ কেউ সমবেতদের অঙ্গীকারও করিয়েছেন। এর মাধ্যমে সারা দেশ থেকে আসা নেতাকর্মীদের ঢাকায় অবস্থানের পরোক্ষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১০ আগস্ট পর্যন্ত টানা কর্মসূচি থাকতে পারে। অবস্থান কর্মসূচির পর ঢাকায় সমাবেশ, বিক্ষোভ, ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। এই সময়ের মধ্যে ঢাকায় একাধিক জায়গায় বড় সমাবেশ করা হতে পারে। আগামী ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের কারণে একদফার কর্মসূচি কয়েক দিনের জন্য স্থগিত রাখা হতে পারে। ওই সময়ের মধ্যেও ক্ষমতাসীনদের দিক থেকে ইতিবাচক কোনো উদ্যোগ দেখা না গেলে ২০ আগস্ট থেকে ফের লাগাতার কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে।

আরও পড়ুনঃ কর্মসূচির বিষয়ে যে ঘোষণা দিল ঢাকা মহানগর আ.লীগ

মহাসমাবেশ থেকে ‘অবস্থান কর্মসূচি’ ঘোষণা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আগামীতে পরপর কর্মসূচি আসবে। শান্তিপূর্ণভাবে এসব কর্মসূচি পালন করে বিজয় সুনিশ্চিত করা হবে।’

মহাসমাবেশে আগত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘ঢাকায় যারা এসেছেন তারা ঢাকায় থাকেন। এই সরকারকে বিদায় না করা পর্যন্ত কেউ ঘরে ফিরে যাব না।’

বিএনপির এমন ঘোষণায় পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়েছে আওয়ামী লীগ। শুক্রবারের সমাবেশে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপির উদ্দেশে বলেন, ‘রাস্তা বন্ধ করতে আসবেন না। রাস্তা বন্ধ করলে আপনাদের চলার রাস্তাও বন্ধ করে দেব। আগুন নিয়ে খেললে হাত পুড়িয়ে দেব। ভাঙচুর করতে এলে হাত ভেঙে দেব।’

ঢাকার বাইরে থেকে আসা বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে এসেছেন, শান্তিপূর্ণ ভাবে আবার চলে যান।’

আরও খবর: রাজনীতি