জাতীয়

স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পথ সহজ করল ইসি

  প্রতিনিধি ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ৩:৪১:২২ প্রিন্ট সংস্করণ

নীলাকাশ টুডে 

 

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পথ সহজ করল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আসন্ন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে ২৫০ জন ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর জমা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। শুধু জামানত হিসাবে মোটা অঙ্কের টাকা জমা দিতে হবে। এসব বিধান রেখে ‘উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধামালা’ সংশোধনে ইসি সচিবালয়ের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই বিধিমালায় অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা বাধ্যতামূলক করা, জাতীয় সংসদের আদলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বন্ধের ক্ষমতা ইসির হাতে রাখা, ভোটকেন্দ্রে প্রভাববিস্তার বা অনিয়ম হলে তা বন্ধে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য নির্দিষ্ট করে দেওয়াসহ বেশকিছু সংশোধনী অনুমোদন করা হয়। ওই সভায় উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালায়ও বড় ধরনের সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। নির্বাচনে রঙিন পোস্টার ও ব্যানার ব্যবহার, প্রতীক বরাদ্দের আগেই জনসংযোগের অনুমতি দেওয়া এবং পোস্টারে পলিথিনের আবয়ব ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নির্বাচনি প্রচারে মাইকের শব্দের মানমাত্রা ৬০ ডেসিবেল নির্ধারণ করা হয়েছে।

কমিশন সভা শেষে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম নির্বাচনি বিধিমালা এবং আচরণবিধিমালায় সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদনের কথা সাংবাদিকদের জানান। তিনি বলেন, অনুমোদিত সংশোধনী প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য যাবে। সেটি ভেটিং হয়ে নির্বাচন কমিশনে আসবে। পরে সেটি এসআরও আকারে জারি করা হবে। তিনি বলেন, আসন্ন উপজেলা নির্বাচনের আগেই এসব সংশোধনীর এসআরও জারি করা হবে।

৪ মে থেকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শুরু হতে যাচ্ছে। এবার ৪, ১১, ১৮ ও ২৫ মে-এ চার ধাপে সারা দেশের উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে। ইতোমধ্যে কোন ধাপে কোন উপজেলায় ভোট হবে, এর আংশিক তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী : জানা যায়, ২০১৬ সাল থেকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অথবা স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী হওয়ার বিধান রয়েছে নির্বাচন বিধিমালায়। ওই বিধিমালা অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হলে ২৫০ জন ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর জমার বিধান রয়েছে। এ বিধানের কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া কঠিন ছিল। এ স্বাক্ষর জমা দেওয়ার বিধানের কারণে অনেকেই প্রার্থী হতে পারতেন না। কয়েকদিন আগে সরকারি দল আওয়ামী লীগ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক করতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পথ উন্মুক্ত করে। চলমান কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়নি। আওয়ামী লীগের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বিধিমালা ও আচরণ বিধিমালায় সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দিল ইসি।

মঙ্গলবার ইসি অনুমোদিত প্রস্তাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকার ২৫০ জনের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর জমা দেওয়ার বিধান বাতিল করা হয়েছে। সমর্থনসূচক স্বাক্ষর জমা দেওয়ার ফলে গোপন ভোটের আগেই কাউকে প্রকাশ্যে সমর্থন দেওয়া হয়, যা সংবিধানবিরোধী-এমন কারণ দেখিয়ে এ বিধান বাতিল করা হচ্ছে। তবে ভুঁইফোঁড় প্রার্থী ঠেকাতে জামানতের বিধানে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। নির্বাচনে যে সংখ্যক ভোট পড়বে, তার ১৫ শতাংশ না পেলে ওই প্রার্থীর জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত হবে। বর্তমানে প্রদত্ত ভোটের ১২.৫ শতাংশের কম ভোট পেলে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। এছাড়া উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জামানতের পরিমাণ ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে এক লাখ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭৫ হাজার টাকা এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার প্রধান আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)-এর কিছু বিধান উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালায় যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। এর একটি হচ্ছে নির্বাচনে ফলাফল বাতিলে ইসির ক্ষমতা বাড়ানো। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বাতিলের ক্ষমতা আরপিওর ধারা ৯১-এর দফা (কক)-এ উল্লেখ রয়েছে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালার ৮৮ বিধিতে ওই বিধান যুক্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এর ফলে নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে বলপ্রয়োগ, কারসাজি, পক্ষপাতের অভিযোগ উঠলে ফলাফল স্থগিত রেখে তদন্তের নির্দেশ দেবে ইসি। তদন্তে তা প্রমাণিত হলে ওই ফলাফল বাতিল করে পুনরায় ভোটগ্রহণ করতে পারবে।

উপজেলা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের হুমকি, কাজে বাধা দেওয়া বা ভয় দেখালে তা ‘নির্বাচনি অপরাধ’ হিসাবে নির্বাচনবিধিতে নতুন করে সংযোজন হতে যাচ্ছে। নির্বাচন বিধিমালায় বিধি ৮০-এর দফা ‘ক’-তে এটি সংযোজন হবে। এ অপরাধে সর্বনিম্ন ছয় মাস ও সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান প্রস্তাব করা হয়েছে। ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ বিধান আরপিওর ৮৪ক দফায় সংযুক্ত করে ইসি। এখন তা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও প্রয়োগ করতে যাচ্ছে ইসি।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কাগজে মনোনয়নপত্র দাখিলের বিদ্যমান বিধান তুলে দিয়ে পুরোপুরি অনলাইনে দাখিলের বিধান যুক্তের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য নতুন সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার কেনে ইসি। ওই নির্বাচনে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমায় সাড়া পায়নি কমিশন। এবার উপজেলা নির্বাচনে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হচ্ছে।

এছাড়া নির্বাচন বিধিমালায় সমভোটের ক্ষেত্রে লটারির মাধ্যমে ফলাফল নির্ধারণ, চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের নির্বাচনি ব্যয় ২৫ লাখ টাকা এবং মহিলা সদস্যদের ১ লাখ ও মনোনয়নপত্রে তৃতীয় লিঙ্গ হিসাবে হিজড়াদের অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছে।

রঙিন পোস্টারের নির্বাচনে ফিরছে ইসি : মঙ্গলবার কমিশন সভায় উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালায়ও বড় ধরনের সংশোধনীর প্রস্তাব অনুমোদন করেছে ইসি। এতে নির্বাচনে সাদা-কালোর পাশাপাশি রঙিন পোস্টার-ব্যানার ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এই সংশোধনী কার্যকর হলে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে রঙিন পোস্টার-ব্যানার টানাতে পারবেন প্রার্থীরা। নির্বাচনে ব্যয় কমাতে সাদা-কালো পোস্টারের বিধান চালু করেছিল ড. শামসুল হুদা কমিশন।

এছাড়া ডিজিটাল মাধ্যমে নির্বাচনি প্রচারণা চালানোর সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। প্রতি ইউনিয়নে একটি এবং পৌরসভার প্রতি তিনটি ওয়ার্ডে একটির বেশি নির্বাচনি ক্যাম্প বা অফিস স্থাপন করা যাবে না। নির্বাচনি ক্যাম্প বা অফিসের আয়তন ৬০০ বর্গফুটের বেশি হতে পারবে না।

আচরণবিধিমালা সংশোধনীতে পরিবেশবান্ধব প্রচারণার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আচরণবিধিমালায় নির্বাচনি পোস্টারে পলিথিনের আবরণ ও প্লাস্টিক ব্যানারের ব্যবহার নিষিদ্ধের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে কমিশন। মাইক ব্যবহারের ক্ষেত্রে শব্দের মানমাত্রা ৬০ ডেসিবেলের নিচে রাখা এবং জনসভায় একই সঙ্গে সর্বোচ্চ চারটি মাইক্রোফোন ব্যবহারের বিধান যুক্ত করেছে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে ইসি আচরণবিধিমালায় এ সংশোধনী আনল। এছাড়া নির্বাচনের প্রচারের সময় বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রচারের সুযোগ নেই। সংশোধিত বিধিমালা অনুযায়ী, প্রতীক বরাদ্দের আগেও প্রার্থীরা জনসংযোগ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রার্থীর সঙ্গে সর্বোচ্চ ৫ জন সমর্থক থাকতে পারবে।

 

আরও খবর: জাতীয়