সারাদেশ

সুদখোরদের বিরুদ্ধে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান, ১০ জন আটক

  নীলাকাশ টুডেঃ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ৭:২১:৪৩ প্রিন্ট সংস্করণ

 

ঝিনাইদহের বিভিন্ন উপজেলায় ঋণের ভারে ‘আত্মহত্যা’ বৃদ্ধি পাওয়ায় সুদখোরদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। গত কয়েক দিনের অভিযানে ১০ সুদখোরকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে শৈলকুপার ৬, ঝিনাইদহ সদরের ৩ ও হরিণাকুণ্ডু থেকে একজনকে আটক করে পুলিশ।

জানা গেছে, এসব সুদ কারবারি ফাঁকা স্ট্যাম্প ও ব্যাংকের চেক বইয়ের পাতায় স্বাক্ষর নিয়ে চড়া সুদে অভাবী মানুষদের টাকা ধার দিয়ে আসছিলেন। অনেকের কাছেই এসব টাকা এক সময় গলার কাঁটা হয়ে উঠছে। আসল টাকা পড়েই থাকছে, সুদের টাকা পরিশোধ করতে বিক্রি করতে হচ্ছে ভিটামাটি। পাওনাদারের চাপের মুখে অনেকেই ‘আত্মহত্যার’ মতো সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এ অবস্থায় সুদ কারবারিদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান শুরু হওয়ায় ঋণগ্রস্তদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। অভিযান শুরু হওয়ায় অনেক সুদখোর ঢাকায় গা-ঢাকা দিয়েছেন।

পুলিশ ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, এসব কারবারি ১ লাখ টাকার বিপরীতে সুদ হিসেবে মাসে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করে আসছেন। এতে অনেকেই তাদের আসল টাকা দূরে থাক, জীবদ্দশায় সুদের টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। কারও বকেয়া বেশি হলে আসল ও সুদের যোগ টেনে নতুন স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেন সুদখোর মহাজনরা। একপর্যায়ে শুরু হয় মামলা-মোকদ্দমার ভোগান্তি। ওইসব সুদ কারবারি ব্যাংকের সাদা চেকও নিয়ে থাকে। ফলে সুদ কারবারিদের বিরুদ্ধে টাকা গ্রহীতাদের কিছু করার থাকে না। সুদখোরদের চাপে একসময় গ্রহীতারা বাপ-দাদার ভিটেমাটি ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়, নতুবা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

গত ৫ বছরে শৈলকুপার দহকুলা গ্রামের ফার্মেসি ব্যবসায়ী ইতাহার আলী, গাড়াগঞ্জের ব্যবসায়ী আরজু মিয়া, ফুলহরি গ্রামের বিদ্যুৎ চৌধুরী ও মঙ্গল কুণ্ডু, মালিথিয়া গ্রামের তন্ময় মণ্ডল ও চরমালিথিয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা বিষ্ণু মণ্ডল টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন বলে জানান তাদের পরিবারের সদস্যরা। জেলার অন্য উপজেলাতেও এসব ঘটনা ঘটছে। এ অবস্থায় পুলিশ জেলাব্যাপী সুদে কারবারিদের তালিকা তৈরির অভিযানে নেমেছে।

গত বৃহস্পতিবার শৈলকূপার বিভিন্ন গ্রামে অভিযান চালিয়ে চিহ্নিত ৬ সুদ কারবারিকে আটক করে পুলিশ। তারা হলেন—শৈলকূপার হরিহরা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম, ব্রাহিমপুর গ্রামের আমজাদ হোসেন মোল্লা, বারইপাড়া গ্রামের রহিম শেখ, শেখপারা গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান, ভাটই বাজারের পলাশ হোসেন ও চাঁদপুর গ্রামের পিয়ার আলী।

ওই রাতেই হরিণাকুণ্ডু উপজেলার কুলবাড়িয়া বাজারে অভিযান চালিয়ে সুদ কারবারি আলতাফ মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করা হয়। শহরের পবাহাটি থেকে রফিকুল ইসলাম বিশু, পাগলাকানাই কোরাপাড়ার মিজানুর রহমানের স্ত্রী স্বপ্না বেগম ও তার পুত্র ইমনকে গ্রেপ্তার করে ঝিনাইদহ থানা পুলিশ। ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি শেখ মোহম্মদ সোহেল রানা জানান, তাদের কাছ থেকে ঋণগ্রস্তের স্বাক্ষর করা সাদা স্ট্যাম্প ও চেক উদ্ধার করা হয়।

অভিযানের বিষয়ে ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশিকুর রহমান বলেন, সুদখোর মহাজনদের কবলে পড়ে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন, এমন সংবাদ তাকে ব্যথিত করেছে। এ জন্য সুদখোর মহাজনদের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান শুরু করেছেন। তিনি বলেন, গত দুই দিনে ১০ জন চিহ্নিত সুদ কারবারিকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলাও দেওয়া হয়েছে। যতদিন সুদখোর মহাজনদের এই অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ না হবে, ততদিন অভিযান অব্যাহত থাকবে।

আরও খবর: সারাদেশ