জাতীয়

সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্তে আলো নাকি অন্ধকার!

  প্রতিনিধি ১৩ অক্টোবর ২০২৩ , ২:২৩:০৫ প্রিন্ট সংস্করণ


নির্বাচনের দিনক্ষণ এগিয়ে এলেও রাজনীতিতে অনিশ্চয়তা কাটেনি। প্রধান দুই দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি এখনো নিজ নিজ অবস্থানে অনড়।

আওয়ামী লীগ সংবিধানের আওতায় নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানে বদ্ধপরিকর। অপরদিকে বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। ফলে সৃষ্ট অচলাবস্থার মধ্যে পর্দার আড়ালে কিছু কূটনৈতিক তৎপরতা লক্ষ করা যাচ্ছে।

যদিও এসব তৎপরতার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমঝোতার কোনো লক্ষণ আপাতত দেখা যাচ্ছে না। পর্যবেক্ষকরা শেষ মুহূর্তের দৃশ্যপটের অপেক্ষায় আছেন। সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্তে আলো নাকি অন্ধকার সেই দোলাচল রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যেও।

নির্বাচনের এখনো কিছু সময় বাকি আছে। সরাসরি মধ্যস্থতা না করলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে পৃথকভাবে বারবার আলোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছে মার্কিন প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দল। তারও আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলেভান।

দিল্লিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এসব আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে। অপরদিকে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী জি-২০ স্পিকারদের একটি বৈঠকে যোগ দিতে দিল্লি গেছেন। সেখানে তিনি ভারতের স্পিকার ও পার্লামেন্ট সদস্যদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সঙ্গে সরকারের আলোচনায় নির্বাচনের দিক গুরুত্ব লাভ করছে।

২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচন এবং ২০১৮ সালে নির্বাচনের সময় ভারত শেখ হাসিনার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। একতরফা নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সফর করেন ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং। তিনিও শেখ হাসিনার পক্ষে তৎপর ছিলেন। তবে এবার ভারতের কোনো কোনো মহল মনে করে, দিল্লির তৎপরতা আগের মতো দৃশ্যমান হওয়া উচিত নয়।

যদিও ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল জি-২০ সম্মেলনের আগে জ্যাক সুলেভানের সঙ্গে বাংলাদেশের নির্বাচনের প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করেন। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের স্বার্থে শেখ হাসিনার সরকারের ওপর কেন চাপ দেওয়া উচিত হবে না সেই ব্যাখ্যাও করেন দোভাল।

কূটনৈতিক পর্যায়ে বিভিন্ন আলোচনায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সমঝোতা নিয়ে এখন পর্যন্ত বরফ গলার মতো কোনো লক্ষণ পাওয়া না গেলেও সবাই অপেক্ষা করছেন শেষ মুহূর্তের জন্য। নভেম্বরের মাঝামাঝি তফশিল ঘোষণা হলে তার আগে কিংবা পরে দলগুলো কী অবস্থানে যায় সেটাও দেখার বিষয়।

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘ডায়ালগ করার সময় চলে গেছে। তারা বাস মিস করেছে। তারা নিঃশর্ত সংলাপ করতে চায় না। আমরাও শর্তযুক্ত সংলাপ করব না। তারা বলেছে, তারা ঢাকা অচল করবে। নির্বাচন হতে দেবে না। বিদেশিদের সহায়তায় ক্ষমতায় যাবে। আমাদের কথা সহজ। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করবে। উনাদের ছাড়া নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না এটা কে বলেছে। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাসে গত ২৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলেভান। বৈঠকটির খবর প্রথমে গোপন রাখা হয়েছিল। তবে একটি সূত্র জানায়, বৈঠকের খবর সংবলিত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য হোয়াইট হাউজে পাঠানো হলেও তা প্রকাশ না করার জন্য হোয়াইট হাউজের তরফে বলা হয়।

তারপর এক সপ্তাহ ঢাকা কিংবা ওয়াশিংটন কোনো পক্ষই তা প্রকাশ করেনি। বাইডেনের নির্দেশেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সুলেভান বৈঠক করেন। আফরিন আক্তারের সফরকালে নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এমন তৎপরতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সহায়ক হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেনদরবারে যুক্ত সরকারের একজন প্রতিনিধি বলেছেন, ‘নির্বাচনের এখনো কিছুটা সময় বাকি। ফলে দেখা যাক শেষ সময়ে কী হয়।’ ভারতের সঙ্গে যুক্ত সরকারি মহল থেকেও বলা হচ্ছে, শেষ মুহূর্তের আগে পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছুই বলা যায় না। রাজনীতির গতি-প্রকৃতি অনুধাবনে অপেক্ষা করতে হবে।

বিএনপি নেতারা আশা করছেন, দুর্গাপূজার পর রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে পারে। সরকার ও বিএনপি উভয়ে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে চিন্তা করতে পারে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থান কী সাধারণ মানুষ এটা স্পষ্ট জানে। তবে আওয়ামী লীগ সরকারে আছে। তারা মানুষের প্রত্যাশার বিষয়টা অনুধাবন করতে পারছে না।

বিদেশিদের কাছে আওয়ামী লীগ নেতারা বলে যে, বিএনপি ঠিকই নির্বাচনে আসবে। বিএনপি না এলে তারা কিছু নেতাকে নমিনেশন দিয়ে দেবে। বাস্তবতা হলো, বিএনপি কখনোই বলেনি যে, সুষ্ঠু নির্বাচনে যাবে না। তবে আওয়ামী লীগের সাজানো নির্বাচনে বিএনপি যাবে না। দিনের ভোট রাতে হলে সেই নির্বাচনেও যাবে না।’

বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য পশ্চিমা দেশগুলো চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। ভিসানীতি অনুযায়ী, আগামী নির্বাচনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কেউ বাধা দিলে তাকে এবং তার পরিবারের সদস্যদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের নির্বাচনের পরিবেশ যাচাইয়ের লক্ষ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নও প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষক মিশন পাঠিয়ে ছিল। মিশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না বলে জানিয়ে দেয় ইইউ।

আরও খবর: জাতীয়