সারাদেশ

সিসি ক্যামেরায় ধরা মহিলা লীগ সভাপতির টাকা চুরির দৃশ্য!

  সূত্র কালবেলা ২৪ জুলাই ২০২৩ , ৫:১৯:০৮ প্রিন্ট সংস্করণ

 

আওয়ামী লীগের প্রবীণ কর্মীর জমি বেদখলের অভিযোগের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার ব্যাংকের টাকা চুরির অভিযোগ উঠেছে জামালপুর জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি ফারহানা সোমার বিরুদ্ধে। সোমা ‍একইসঙ্গে জেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি ফারহানা সোমা গত ১৯ জুলাই দুপুর ১২টায় শহরের তমালতলায় অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান শাখায় যান। ১২ হাজার টাকা (প্রতিটি এক হাজার টাকার নোট) খুচরা করাতে যান তিনি। ব্যাংকের ক্যাশিয়ার ভুলবশত তার সামনে ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা রাখেন। এত টাকা তার সামনে রাখার বিষয়টি টের পেয়ে পুরো টাকা নিয়ে চুপচাপ ব্যাংক থেকে চলে আসেন সোমা।

ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, গত ১৯ জুলাই দুপুরের দিকে ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টারে গিয়ে ১ হাজার টাকার ১২টি নোট খুচরা চান ফারহানা সোমা। এ সময় তার সঙ্গে আরেকজন নারী ছিলেন। ব্যাংকের ক্যাশিয়ার ভুল করে তার সামনে ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা রাখলে সেটি নিয়ে চলে যান তিনি। দিনের কার্যক্রম শেষে ক্যাশে টাকার হিসাব গড়মিল হলে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মুহাম্মদ হারুনুর রশিদকে বিষয়টি জানান। এরপর তারা সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে ফারহানা সোমাকে শনাক্ত করেন। পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সোমাকে ফোন কল করেন। কিন্তু টাকা দিতে গড়িমসি শুরু করেন তিনি। সেই দিন রাতেই ব্যাংকে লোক মারফত ৮৮ হাজার টাকা ফেরত পাঠান ফারহানা সোমা। টাকাগুলোর অধিকাংশই ৫০ ও ২০ টাকার নোট ছিল।

আরও জানা গেছে, ১৯ জুলাই বিকেলে দলীয় একটি অনুষ্ঠান শেষে কর্মীরা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে অবস্থান করেন। এরপর ফারহানা সোমা একজন নেত্রীকে নিয়ে তার কাচারিপাড়ার বাসায় যান। সেখানে টাকার একটি ব্যাগ সেই নেত্রীকে দেন এবং কর্মীদের যাতায়াত ভাড়া দিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। সেই ব্যাগ নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এসে কর্মীদের টাকা বিতরণ করতে থাকেন নেত্রীরা। এরপর ৩২ হাজার টাকা দেওয়া শেষে ব্যাগে অবশিষ্ট ১ লাখ টাকা দেখে তারা অবাক হয়ে যান। তখনই তারা সেই টাকা চারজনে ভাগ করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এমন সময়ই ব্যাংক থেকে ফোন পান ফারহানা সোমা।

জানা গেছে, ব্যাংক থেকে ফোনকল পাওয়ার পর বিষয়টি জানাতে শহরের পাথালিয়ায় জেলা আওয়ামী লীগের একজন প্রথম সারির নেতার বাড়িতে যান ফারহানা সোমা। এরপর তিনি ৮৮ হাজার টাকা লোক মারফত ব্যাংকে পাঠিয়ে দেন।

অবশিষ্ট ৩২ হাজার টাকার জন্য ফারহানা সোমার সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেও সাড়া না পেয়ে বিষয়টি জেলা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের একজন নেতাকে জানান ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। সেই নেতার জামালপুরের বাড়িতে একটি বৈঠক হয়। পরে সেখান থেকে ব্যাংকে টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপরও অবশিষ্ট ৩২ হাজার টাকা দিতে গড়িমসি করেন ফারহানা সোমা। অবশেষে বিষয়টি জামালপুর শহরে ছড়িয়ে পড়ে। একইসঙ্গে সাংবাদিকরাও ফারহানা সোমার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করলে রোববার (২৩ জুলাই) সকালে ব্যাংকে গিয়ে টাকা দিয়ে আসেন তিনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। যিনি ব্যাংকে টাকা ভাংতি করতে গিয়েছিলেন তার উদ্দেশ্য অসৎ ছিল। তা না হলে ১২ হাজার টাকার বদলতে এতগুলো টাকা ভুল করে দেওয়া হয়েছে। তার উদ্দেশ্য ভালো হলে তিনি বাকি টাকা ফেরত দিতেন। তিনি সেটি করেননি। এই ক্ষেত্রে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ক্যাশিয়ারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। আর সেই নেত্রীর বিরুদ্ধে চুরির মামলা দিতে পারত, কিন্তু সেটি করা হয়নি।’

এসব বিষয়ে জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি ফারহানা সোমার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এসব মিথ্যা, আপনার কিছু জানার থাকলে ব্যাংকে গিয়ে খোঁজ নিন।’

জামালপুর অগ্রণী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মুহাম্মদ হারুনুর রশিদ বলেন, ‘সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে।’

আরও খবর: সারাদেশ