সারাদেশ

সাতক্ষীরার ঝড়ু’র মৃত্যুতে পত্রদূতের প্রতিবেদনে হইচই

  প্রতিনিধি ৫ ডিসেম্বর ২০২৩ , ৩:২৪:২৪ প্রিন্ট সংস্করণ

ডেস্ক রিপোর্ট

সাতক্ষীরার খলিলুল্লাহ ঝড়ুর মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে উপকূলীয় মানুষের বন্ধু হিসেবে শোকের বার্তা ছড়িয়ে পড়লেও সাতক্ষীরা স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক পত্রদূত পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে হইচই শুরু হয়েছে জেলা জুড়ে।

তার মৃত্যুতে শোক সংবাদ জানিয়ে অনেকেই ফেসবুকে লিখেছেন, সাতক্ষীরা জেলার একজন আলোচিত ব্যক্তিত্ব বিশিষ্ট সমাজসেবক উপকূলীয় বাসীর বন্ধু, সাতক্ষীরা জেলা জন সমিতি ঢাকা এর সভাপতি, সাবেক ছাত্রনেতা ও বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এম খলিলুল্লাহ ঝড়ু
তিনি গত আইলার সময় শ্যামনগরের বিভিন্ন ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষকে কয়েক মাস ধরে সুপেয় খাবার পানির ব্যবস্থা করেছিলেন।
এছাড়া তিনি নিজ অর্থায়নে ও পরিশ্রম করে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের সময় ভেড়ীবাঁধ নির্মাণ সহ বহু জন হিতকর কাজ করে শ্যামনগরবাসীকে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখে গেছেন। শ্যামনগর বাসী তার কাছে কৃতজ্ঞ।

 

অপর দিকে দৈনিক পত্রদূত পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে হইচই শুরু হয়েছে জেলা জুড়ে।

আজ মঙ্গলবার পত্রদূত পত্রিকার ওই খবরে উল্লেখ করা হয়, “সাতক্ষীরার গডফাদার হিসেবে পরিচিত খলিলুল্লাহ ঝড়ু মারা গেছে। সোমবার রাতে ঢাকা থেকে খুলনায় আসার সময় পথিমধ্যে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে গোপালগঞ্জ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

খলিলুল্লাহ ঝড়ু সাতক্ষীরা শহরের প্রাণ সায়রের মরহুম গোলাম খায়বার সরদারের ছেলে। তাদের ৮ ভাইয়ের প্রায় সকলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, খুন, ছিনতাই, ডাকাতিসহ অসংখ্য অপরাধমূলক কর্মকান্ডের অভিযোগ রয়েছে।
খলিলুল্লাহ ঝড়ু সাতক্ষীরার দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা স ম আলাউদ্দিন হত্যা মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামী। এই মামলায় তার অপর দুই ভাই সাইফুল্লাহ কিসলু (বর্তমানে মৃত) ও মোমিন উল্লাহ মোহন আসামী।

আশি ও নব্বই-এর দশকে সাতক্ষীরা জেলায় সংগঠিত অপরাধের একটা অংশে ঝড়ু পরিবারের কারো না কারো নাম আসতো। হতো মামলা মোকদ্দমা। সারা বছর ধরে ঝড়ুর আট ভাইয়ের কোন না কোন ভাইয়ের উপস্থিতি থাকতো সাতক্ষীরা কারাগারে।

ঝড়ুর এক ভাই সাতক্ষীরার মানুষের কাছে মুর্তিমান আতংক হিসেবে পরিচিত সাইফুল্লাহ কিসলু ছিল ইমদাদুল হক বুড়ো হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী। আর এক ভাই একরামুল্লাহ বাবু ২০১৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি গাড়ি ছিনতাই করে পালানোর সময় পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়। ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হয় ছোট ভাই ছোটনের। কথিত আছে তাকে ঠেলে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়। এভাবে বিভিন্ন ঘটনা অঘটনের মধ্য দিয়ে ৮ ভাইয়ের ৬ জনের পর ঝড়ুও মারা গেলেন।

পিতা গোলাম খায়বার সরদারও তার মৃত্যুর পূর্বে সংবাদ সম্মেলন করে তার পুত্রদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী তৎপরতার অভিযোগ আনেন। তার পিতার সেই সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যের শুরুটা ছিল “এই সমাজ, এই রাষ্ট্র, আমার সন্ত্রাসী পুত্রদের বিচার করবে কী না, তা আমি জানি না। রাষ্ট্র বিচার করুক আর না করুক আপনারা (সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকরা) সমাজের বিবেক। আপনারা আমার সন্ত্রাসী ছেলেদের কলঙ্কিত চরিত্র জাতির সামনে তুলে ধরুণ। সমাজ যেন তাদের ঘৃণা করে। সমাজের সহজ সরল মানুষ যেন তাদেরকে বয়কট করে। আর কোন পিতার ঔরসে যেন এমন দুর্র্ধষ সন্ত্রাসীর জন্ম না হয়। পিতা হিসেবে তাদের গ্রেপ্তার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক, সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে এ আমার প্রাণের দাবি।”

২০১৩ সালের ১০ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এভাবেই নিজের ঔরসজাত সন্ত্রাসী পুত্রদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছিলেন সাতক্ষীরা শহরের প্রাণ সায়ের এলাকার বাসিন্দা শতবর্ষী খায়বার সরদার (বর্তমানে মৃত)। ঐ সংবাদ সম্মেলনে তার সাথে উপস্থিত ছিলেন তার জামাই পটুয়াখালি শহরের বাসিন্দা মোয়াজ্জেম হোসেন ও নাতি ফিরোজ হোসেনসহ অনেকেই।”

এদিকে খলিলুল্লাহ ঝড়ু সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের কাছে একজন বিশিষ্ট সমাজ সেবক বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তার মৃত্যুতে এরই মধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের ফেসবুক আইডিতে শোক জানিয়ে পোস্ট করতে দেখা যায়।

আরও খবর: সারাদেশ