রাজনীতি

সাতক্ষীরায় ৪ টি আসনেই প্রার্থীদের ছড়াছড়ি

  প্রতিনিধি ২৬ অক্টোবর ২০২৩ , ৪:০৩:২৬ প্রিন্ট সংস্করণ

 সাতক্ষীরা অফিস

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সাতক্ষীরায় একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী নিয়ে বিড়ম্বনায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে নাশকতার মামলায় জর্জরিত বিএনপি। এদিকে, দল দুটির জোটগত অবস্থান কী হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। সরকারের শরিক দল হিসেবে দিন দিন অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছে জাতীয় পার্টি। এর মধ্যেও মাঠ গরম করতে শুরু করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী থাকলেও বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থিতা নিয়ে লড়াই নেই বললেই চলে সাতক্ষীরা-১ আসনে। জেলায় ওয়ার্কার্স পাটি আওয়ামী লীগের শরিক দল হিসেবে না থাকলেও তারা চ্যালেঞ্জ করবে এ আসনটিতে।

এদিকে, জেলার বিভিন্ন স্থানে সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের রকমারি ব্যানার ও পোস্টার লাগিয়ে ভোটারদের মধ্যে এরই মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময়, প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে, আওয়ামী লীগ বাদে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টিসহ অন্য দলগুলো এখনো তেমন তৎপরতা শুরু করেনি। এ জেলায় অনেক আগ থেকে শক্তিশালী রাজনৈতিক অবস্থান থাকলেও নির্বাচন কমিশনে জামায়াতের নিবন্ধন নেই। যদিও এরই মধ্যে দলটি সাতক্ষীরার চার আসনেই প্রার্থী দেয়ার কথা ঘোষণা করেছে।

সাতক্ষীরা জেলায় সংসদীয় আসন সংখ্যা ৪। তালা ও কলারোয়া পৌরসভাসহ উপজেলা নিয়ে সাতক্ষীরা-১ আসন গঠিত। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা ও পৌরসভাকে নিয়ে সাতক্ষীরা-২ আসন গঠিত। আশাশুনি, দেবহাটা উপজেলাসহ কালীগঞ্জ উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে সাতক্ষীরা- ৩ আসন গঠিত এবং কালিগজ্ঞ উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও শ্যামনগর উপজেলা নিয়ে সাতক্ষীরা-৪ আসন গঠিত। এই ৪টি আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ১৭ লাখ ৫১ হাজার ৩২৬ । এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮ লাখ ৮১ হাজার ৭৭ ও মহিলা ভোটার ৮ লাখ ৭০ হাজার ২৩৪ এবং হিজড়া ভোটার সংখ্যা ১৫।

বর্তমানে এ চারটি আসনে (সংসদীয় ১০৫, ১০৬, ১০৭ ও ১০৮) এখনই ব্যানার, পোস্টার, প্যানাসহ নানা ধরনের শুভেচ্ছা বার্তা সংবলিত প্রচার-প্রচারণা লক্ষ করা যাচ্ছে।

সাতক্ষীরা-১ আসন (তালা ও কলারোয়া)

এ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির বর্তমান এমপি মোস্তফা লুৎফুল্লাহ আবারও ১৪ দলীয় জোট থেকে মনোনয়ন চাইবেন। তবে, মহাজোট হলে এ আসনে মনোনয়ন পেতে পারেন জাতীয় পার্টির সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখ্ত। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মাঠে কাজ করছেন দলটির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তরুণ নেতা ও আঞ্চলিক যুদ্ধাপরাধ নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় আহবায়ক কামরুজ্জামান সোহাগ, সাবেক প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স.ম. আলাউদ্দীনের কন্যা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লায়লা পারভিন সেজুতি, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ কামাল শুভ্র, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সরদার মুজিব, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম, কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ স্বপন। এদের প্রত্যেকেই দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।

এ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনা সম্পাদক ও সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব নির্বাচন করবেন। তবে মামলার কারণে যদি তিনি সুযোগ না পান,সেক্ষেত্রে তার স্ত্রী নির্বাচন করতে পারেন। জামায়াতে ইসলামী থেকে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক ইজ্জত উল্লাহ এ আসন থেকে নির্বাচন করতে গত ঈদে শুভেচ্ছা পোস্টার লাগিয়েছেন। এ ছাড়া তালা উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান এস এম নজরুল ইসলাম, জাসদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শেখ ওবায়েদুস সুলতান বাবলুও দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সাতক্ষীরা সদর-২ আসন 

একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান এমপি মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা আ.হ.ম. তারেক উদ্দীন, সাবেক সচিব সাফি আহমেদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ভোরের পাতা পত্রিকার সম্পাদক এরতেজা হাসান জজ।

এছাড়া বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা বিএনপির সভাপতি রহমত উল্লাহ পলাশ, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুর রউফ ও চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম। অন্যদিকে, জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়নের জন্য চেষ্টা করছেন জেলা জাপার সভাপতি শেখ আজহার হোসেন। গণফোরাম থেকে জেলা সাধারণ সম্পাদক আলিনুর খান বাবুলও নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ আসন থেকে নির্বাচন করতে শুভেচ্ছা পোস্টার লাগিয়েছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মুহাদ্দিস আবদুল খালেক।

সাতক্ষীরা ৩ আসন 

আশাশুনি, দেবহাটা এবং কালীগঞ্জ উপজেলার চারটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসন। এখানে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক আ.ফ.ম রুহুল হক এমপি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ইউসুফ আবদুল্লাহ।

এ ছাড়া আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এ.বি.এম. মোস্তাকিম নির্বাচন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

বিএনপি থেকে মাঠে রয়েছেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য কালীগঞ্জ উপজেলার নলতা গ্রামের বাসিন্দা ডা. শহিদুল আলম। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির হয়ে কাজ করছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি স.ম. সালাউদ্দিন। এ আসনে জামায়াতে ইসলামী থেকে হাফেজ রবিউল বাশারও নির্বাচন করতে শুভেচ্ছা পোস্টার লাগিয়েছেন।

সাতক্ষীরা-৪ আসন

সুন্দরবন ঘেঁষা শ্যামনগর উপজেলা ও কালীগঞ্জ উপজেলার একাংশ নিয়ে ২০ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসন থেকে শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান এমপি এস এম জগলুল হায়দার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ ছাড়াও শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আতাউল হক দোলনসহ বেশ কিছু প্রার্থীরা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন জেলা বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ ইফতেখার আলী ও সাবেক এমপি কাজী আলাউদ্দীন।

এছাড়া জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন, দলটির কেন্দ্রীয় নেতা ছাত্তার মোড়ল, শাহাদাত হোসেন ও বহিষ্কৃত নেতা এইচ এম গোলাম রেজা। আর নিবন্ধন পাওয়ার আশায় জামায়াত ইসলামী থেকে এখানে একক প্রার্থী হিসেবে শুভেচ্ছা পোস্টার লাগিয়েছেন সাবেক এমপি গাজী নজরুল ইসলাম।

২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চার দলীয় জোটের পক্ষে জেলার তিনটি আসনে জামায়াত প্রার্থীরা বিজয়ী হন, মাত্র একটি আসন পান বিএনপি। অবশ্য নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত-বিএনপি কোনো আসনেই জিততে পারেনি।

আরও খবর: রাজনীতি