জাতীয়

সমালোচনার মুখে ভিন্ন ব্যাখ্যা ইসির

  প্রতিনিধি ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ , ১১:৩৩:৪৮ প্রিন্ট সংস্করণ

 

 

 

বিশেষ প্রতিনিধি

 

নির্বাচনী প্রচার ছাড়া সভা-সমাবেশ ও রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে সবাইকে বিরত রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেওয়া নির্দেশনার এবার ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ওই নির্দেশনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এবার ইসি জানাল– ভোট বর্জনকারী রাজনৈতিক দলগুলোর শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে তাদের কোনো আপত্তি নেই।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আপত্তি নেই। তবে ভোটারদের ভয়ভীতি বা হুমকি দেওয়ার মতো কোনো কর্মসূচি অনুমতি দেওয়া যাবে না।

এর আগে গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে এ বিষয়ে চিঠি পাঠায় ইসি। তাতে বলা হয়– নির্বাচনী কাজে বাধা হতে পারে বা ভোটাররা ভোট প্রদানে নিরুৎসাহিত হবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত এমন রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন থেকে বিরত রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়। ওই চিঠির আলোকে গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা শাখা থেকে পুলিশ মহাপরিদর্শকের কাছে একটি পত্র পাঠানো হয়। সেখানে পুলিশ প্রধানকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ইসির যে নির্দেশনা তা যথাযথ ভাবে প্রতিপালন করা হবে। নির্বাচন কালে কীভাবে দায়িত্ব পালন করতে হয় সে ব্যাপারে পুলিশের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আছে। পুলিশের সেই সক্ষমতাও আছে। নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর।

একাধিক জেলার পুলিশ সুপার ও রেঞ্জ ডিআইজিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইসির নির্দেশনার আলোকে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের অনুমতি দেওয়া যাবে না– এমন চিঠি তারা পেয়েছেন। তবে এখন নতুন নির্দেশনার আলোকে শান্তিপূর্ণ ভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচির নিশ্চয়তা পেলে অনুমতি দেওয়া যাবে– সে অনুযায়ী তারা কাজ করবেন।
এদিকে, ইসির এই নির্দেশনার পর দেশের রাজনৈতিক দল ও আইনজ্ঞদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। অনেকেই ইসির এমন চিঠি দেওয়ার এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, সভা-সমাবেশ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নাগরিকের সংবিধান স্বীকৃত অধিকার। ইসি এমন চিঠি দিয়ে তা বন্ধ করতে পারে না।

চিঠির ব্যাখ্যা জানতে গতকাল দিনভর সাংবাদিকরা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং ইসির মুখপাত্র জাহাংগীর আলমের দপ্তরে যান।  কিন্তু তারা কেউই কথা বলতে রাজি হননি। সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, সভা-সমাবেশের নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পাঠানো চিঠিতে কোনো রাজনৈতিক দলের অধিকার ক্ষুণ্ন হয়নি। তিনি  বলেন, শান্তিপূর্ণ কোনো কর্মসূচিতে ইসির বাধা নেই। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার অনুমতি নিয়ে তারা এ ধরনের কর্মসূচি পালন করতে পারবে।

তবে, সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বাধা সৃষ্টি করে। হুমকি-ধমকি দেয়, জ্বালাও-পোড়াও করে সেটা বন্ধ করতে বলা হয়েছে।

কমিশনার আরও বলেন, নির্বাচনী আইন ও আচরণবিধিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে কেউ যদি বাধা দেয় বা প্রতিহত করে সেটা অপরাধ। নির্বাচন করতে হলে একটি সুষ্ঠু পরিবেশ লাগে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ লাগে। এ রকম কোনো কর্মসূচি কোনো রাজনৈতিক দল যদি দিয়ে থাকে– এটা করা যাবে না। সেটার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি ছাড়া অন্য কোনো কর্মসূচিতে বাধা নেই উল্লেখ করে মো. আলমগীর বলেন, যে কোনো প্রোগ্রাম করতে গেলে সভা-সমাবেশ করতে হলে সরকারের অনুমতি নিতে হয়। সে ক্ষেত্রে সরকার যেখানে তাদের অনুমতি দেবে তারা সেটা করবে। সে বিষয়ে ইসির কোনো বক্তব্য নেই। নির্বাচনে বাধা সংক্রান্ত কোনো সভা-সমাবেশ আন্দোলন কর্মসূচি থাকলে সেটা যেন না করতে দেওয়া হয়।

কোনো রাজনৈতিক দলের নাম উল্লেখ করে ইসি চিঠি দেয়নি উল্লেখ করে এই কমিশনার বলেন, নির্বাচনের বিরোধী কোনো কাজ করলে, নির্বাচনবিরোধী কোনো আন্দোলন করে বা বাধা দেয়, হুমকি দেয়, ভয় দেখায় সে ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। আর কোনো দলের যেটা রাজনৈতিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি আছে, তা রাষ্ট্রের প্রচলিত নিয়ম  অনুযায়ী অনুমতি পেলে করবে।

তিনি বলেন, কোনো দল যদি বলে ভোটে আসবে না, শান্তিপূর্ণভাবে ভোটারদের ভোটে না আসতে অনুরোধ করে, সেটার ক্ষেত্রে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। সভা-সমাবেশ বন্ধে আমাদের কোনো নির্দেশনা নেই। নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করে এ রকম কোনো কাজে ভোট দিতে যাবেন না, গেলে আপনার খবর আছে– তাহলে তো অবশ্যই এটা আইনের মধ্যে পড়বে।

 

 

গতকাল এক অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, নির্বাচন কমিশনের পরিপত্রের উদ্দেশ্য একটাই– বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ন্ত্রণ করা, বিরোধী দলের আন্দোলন দমানোর অপচেষ্টা করা। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে আর তার বশংবদ নির্বাচন কমিশন তাতে শেষ পেরেক মারতে চাচ্ছে।

তিনি বলেন, এই নির্বাচন কমিশনের গঠনই অবৈধ। সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানকে আওয়ামী লীগের সহযোগী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। তাদের ভাবখানা দেখলে মনে হচ্ছে– তারা গোটা দেশের মালিক বনে গেছে। এখন তারা দেশের মানুষের সাংবিধানিক অধিকারেও হস্তক্ষেপ করতে শুরু করছে। তথাকথিত সাজানো একতরফা নির্বাচন করতে মরিয়া হয়ে তারা জনগণের রাজনৈতিক অধিকার সভা-সমাবেশ বন্ধ করার চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে।

 

আরও খবর: জাতীয়