সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ ২৩ এপ্রিল ২০২৩ , ১:০৫:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ
শারিরীক শক্তি নিঃশেষ হওয়ার দাবি করে মন্টু গাজী (৫৫)পায়ে হেঁটে আর এগিয়ে যেতে অপারগতা প্রকাশ করে। সহযোগীদের তিনি অনুরোধ করেন অন্যরা যেন সামনে অগ্রসর হয় এবং কোন নৌকার দেখা মিলতেই ফিরে এসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এসময় নিরাপদ একটি ঝাউ গাছের মধ্যে লতাপাতা দিয়ে তাকে ঢেকে রাখারও অনুরোধ জানান ভাত পানি ছাড়া তিন দিন কাটিয়ে দেয়া মন্টু।
পায়ে চলতে অক্ষম সহযোগীকে গুছিয়ে রেখে প্রায় ঘন্টাব্যাপী আশপাশের দু’টি খাল ঘুরে কোন নৌকার দেখা না পেয়ে সহযোগী ১৯ মৌয়াল ফিরে আসে আগের অবস্থানে। চিহ্নিত করে যাওয়া জায়গাতে পৌছে মন্টুর দেখা না মিললেও তারা আবিস্কার করে গাছের গায়ে রক্তের দাগ ও ধস্তাধস্তির স্পষ্ট সব চিহ্ন। বিষয়টি বুঝতে পেরে তিন দলে বিভক্ত হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাশর্বর্তী গহীন বনের মধ্যে তল্লাশি চালায় সহযোগীরা। তবে একাকী ফেলে যাওয়া সহযোগীর হদিস না মেলায় বাধ্য হয়ে তারা টানা দু’দিন পায়ে হেঁটে শনিবার সকালে লোকালয়ে ফিরেছে।
জানা যায় মন্টু গাজি শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের চকবারা গ্রামের বাসিন্দা। এক ছেলে ও এক মেয়ের পিতা মন্টু ১৯ সহযোগীর সাথে বনবিভাগের পাশ নিয়ে গত ১ এপ্রিল সুন্দরবনে মধু কাটতে যায়।
নিখোঁজ মৌয়ালের সহযোগী একই গ্রামের নজরুল ইসলাম জানায় মধুর খোঁজে তারা ভারতীয় সুন্দরবনের পাশে চলে যায়। এক পর্যায়ে গত ১৬ এপ্রিল সেখানকার বনরক্ষীদের ধাওয়ার মুখে তারা ব্যবহৃত দুটি নৌকাসহ মধু সংগ্রহের সরঞ্জামাদী ফেলে পালিয়ে যায়। নৌকা হারিয়ে ভেলায় ভেসে তিনদিন পর ১৯ এপ্রিল বুধবার সকালে তারা সুন্দরবনের তালপট্রি এলাকায় পৌছে। এসময় পায়ে হেঁটে লোকালয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরুর কয়েক ঘন্টা পর বিকালে দিকে মন্টু অসুস্থ হয়ে পড়ে।
মন্টুর অপর সহযোগী ডুমুরিয়া গ্রামের রুহুল আমিন মালি জানায় নৌকা হারানোর পর থেকে ভাত পানি না খেয়ে তারা সবাই কমবেশী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তবে পিপাসা মেটাতে নদীর তীব্র লবনাক্ত পানি খাওয়ায় মন্টু তুলনসামুলক বেশী অসুস্থ হয়ে যায়। পরবর্তীতে দীর্ঘপথ হাঁটার পর একপর্যায়ে ‘শরীরে কুলাচ্ছে না’-জানিয়ে মন্টু তাকে নিরাপদে রেখে সামনে যেয়ে কোন জেলে নৌকা খোঁজার অনুরোধ করে। দুপুর থেকে পিছু নেয়া বাঘ মন্টুর পাশ থেকে তাদের সুরে যাওয়ার সময়কে কাজে লাগায় বলে তিনি দাবি করেন।
নৌকার মাছি এমদাদুল মিস্ত্রি জানায় দুই নদীতে কোন নৌকা না পেয়ে আবারও মন্টুকে নিতে ফিরে যায় তারা। তবে ঝাউ গাছে জড়িয়ে রাখা লতাপাতা সরিয়ে মন্টুকে বাঘে নিয়ে গেছে বুঝতে পেরে দীর্ঘ সময় খোঁজার পর শনিবার সকালে তারা বাড়িতে ফিরেছে। সহযোগীর মৃতদেহ উদ্ধারে তারা বনবিভাগের শরনাপন্ন হলেও দুর্গম এবং বেশী সময় অতিকান্ত হওয়ার অজুহাতে বনকর্মীরা আগ্রহ দেখাচ্ছে না বলেও তার অভিযোগ।
পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক ইকবাল হোসাইন চৌধুরী জানান, সুন্দরবনে মধু কাটতে যাওয়া এক মৌয়ালকে বাঘে নিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে তার সহযোগীরা। ঘটনাটি সুদুর তালপট্রি এলাকায় হওয়ার পাশাপাশি তিনদিন আগের। বাঘে নিয়ে থাকলে এত সময় পর তার খোঁজ পাওয়া দুস্কর।