সারাদেশ

শ্যামনগরে জলে কুমির ডাঙায় বাঘ উভয় সংকটে মধু আহরণে বনের উদ্দেশ্যে নৌকা ভাসালো মৌয়ালরা

  শ্যামনগর অফিসঃ ২ এপ্রিল ২০২৩ , ১০:৪০:৫৬ প্রিন্ট সংস্করণ

 

 

নৌকার সাজনী আর গোজগাজের কাজ আগেই শেষ করিছি, বিএলসিসহ মধু কাটার পাশ (অনুমতি) হাতে পাইছি দু’দিন আগে। বন খুলে দেয়ায় আজ ১ এপ্রিল বনের উদ্দেশ্যে নৌকা ভাসাইছি। আট সহযোগী মৌয়ালের সাথে মধু আহরণে যাত্রা শুরুর প্রাক্কালে ষাটোর্ধ্ব বয়সী নুর ইসলাম এসব কথা বলেন। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ডুমুরিয়া গ্রামের এ বৃদ্ধের দাবি আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় চলতি মৌসুমে তুলনামুলক বেশী মধু পাওয়ার আশা করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে বাঘের উপদ্রব বৃদ্ধিতে কিছুটা বিচলিত হলেও দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় ‘ভাগ্যের উপর ভরসা’ রাখছেন বলেও জানান তিনি।

সুন্দরবন সংলগ্ন গাবুরার আবু মুছা জানান, চুলা ও চাল তৈরীসহ ইতিমধ্যে নদীতে নৌকা চালিয়ে তারা নিজেদের প্রস্তুতি যাচাই করেছেন। চাক কাটার অস্ত্রপাতি আর মোম, মধু সংরক্ষনের হাড়ি-পাতিল ও ড্রাম নিয়ে রওনা হয়েছেন তারা। ‘ভাগ্য সহায় হলে’ পনের দিনের মধ্যে প্রথম কোটার মধু নিয়ে লোকালয়ে ফেরার আশার বানী শুনিয়ে তিনি বলেন, মধু মৌসুমে অন্তত অভয়ারণ্যে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা উচিত। সারা বছর ঐসব অংশে কোন বনজীবী ঢুকতে না পারায় সেখানে প্রচুর মধু থাকে। সংগ্রহের সুযোগ না মেলায় যাবতীয় মধু নষ্ট হয় বলেও তিনি দাবি করেন। সম্প্রতি বাঘের আক্রমণে কয়েকজন আহত হওয়ার খবর ছড়ালেও প্রায় কুড়ি বছর বয়স থেকে বনে যাতায়াতের অভিজ্ঞতায় সাহস রেখে বনে ঢুকছেন বলে জানায় ঐ মৌয়াল।

শুধুমাত্র নুর ইসলাম ও আবু মুছা নয়। বরং দাতিনাখালীর জহুরুল ও মরাগাং গ্রামের এশার আলীসহ উপজেলার বিভিন্ন অংশের শতাধিক মৌয়াল মধু মৌসুমের প্রথম দিন সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে। খোলপেটুয়া, আড়পাঙ্গাশিয়া, চুনকুড়ি ও মালঞ্চসহ বিভিন্ন নদী হয়ে তারা নিজ নিজ দলের সাথে ঢুকে পড়েছে সুন্দরবনে। এসব মৌয়ালরা জানায় বাঘ, সাপ ও ভল্লুকের ভয়ডর উপেক্ষা করে পরবর্তী তিন মাস সমগ্র সুন্দরবন পায়ে হেঁটে হেঁটে মধু সংগ্রহ করবেন তারা। রওনা দেয়ার আগে রীতি মেনে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদী সম্পন্ন ছাড়াও কাটুনি বাউলে আর আড়িয়ালাসহ তাড়ু ধরার দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছে নিজেদের মধ্যে। বৃষ্টির হাত থেকে মধু ও নিজেদের রক্ষায় বিশেষ প্রস্তুতি রয়েছে বলেও জানায় তারা।
দাতিনাখালীর মোঃ আজিবর রহমান জানান মধুর চাক কাটার জন্য গাছে চড়তে পারদর্শী জহুরুলকে তাদের দলের কাটুনি বাউলে নির্বাচন করেছেন। এছাড়া সফেদ আলীকে আড়িয়ালা হিসেবে মনোনীত করার পাশাপাশি দলের সবাই তাড়ু ধরা ও ছাটা কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই ভাবে অপরাপর মৌয়াল দলের সদস্যরাও কাটুনি বাউলে ও আড়িয়ালা নির্ধারণসহ যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে বনে প্রবেশের দাবি করেন। পরিস্থিতি অনুকুলে থাকলে চলতি মৌসুমে দলের সদস্য সংখ্যা অনুপাতে প্রতিটি দল ৩৫ থেকে ৬০ মণ পর্যন্ত মধু সংগ্রহ করবে বলেও দাবি করেন।

যদিও মৌয়ালদের অনেকের অভিযোগ কিছু অসাধু ব্যক্তি মধু সংগ্রহের কথা বলে সুন্দরবনে যেয়ে চিনি জ্বালিয়ে সংগৃহীত মধুর সাথে মিশিয়ে পরিমানে বেশী মধু নিয়ে লোকালয়ে ফিরে আসে। মৌসুমজুড়ে বনবিভাগ সতর্কভাবে ঐসব ভেজাল মধু কারবারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালালে ভোক্তারা সুন্দরবনের খাঁটি মধু সংগ্রহের সুযোগ পাবে।

আরও খবর: সারাদেশ