রাজনীতি

যে দুই প্রস্তুতি নিয়ে সামনে এগোচ্ছে জামায়াত

  নীলাকাশ টুডেঃ ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ৩:০৪:৫৪ প্রিন্ট সংস্করণ

 

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বড় দুদল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এখন পালটাপালটি অবস্থানে। ক্ষমতাসীন দল নির্বাচন মুখী হলেও বিএনপির মনোযোগ আন্দোলনে। তবে জামায়াতে ইসলামী ভিন্ন ‘কৌশলে’ এগোচ্ছে। সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ দশ দফা দাবি ও জনসম্পৃক্ত নানা ইস্যুতে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে শক্তি দেখাতে চাইছে। একই সঙ্গে নির্বাচনেরও প্রস্তুতি রয়েছে। যেসব আসনে সাংগঠনিক শক্তি বেশি, সেসব আসনে তারা প্রার্থীও ঠিক করেছে। তবে আপাতত দাবি আদায়ে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনেই থাকতে চায়। এজন্য তারা নানা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকবে।

দলটির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের এখন টানাপোড়েন সম্পর্ক। এ কারণে বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলোর যে যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচি চলছে, সেখানে জামায়াত নেই। যদিও শুরুর দিকে দুটি কর্মসূচিতে দলটির অংশগ্রহণ ছিল। এখন ভিন্ন দিনে তারা কর্মসূচি পালন করছে। রোববারও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও দলের আমিরসহ সব নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিভাগীয় শহরে জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি ছিল।

 

জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আমরা আমাদের মতো করেই সংগ্রামে যাব। নিঃসন্দেহে সময়ের ব্যবধানে এই আন্দোলন আরও গতি পাবে। আমি মনে করি জামায়াতে ইসলামীর ১২ থেকে ১৫ শতাংশ ভোট রয়েছে।

এখন বিষয়টি জোটবদ্ধ হলে এক ধরনের হিসাব, যুগপৎ হলে এক ধরনের হিসাব হবে। আমাদের এখন লক্ষ্য হচ্ছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে সফল করা। নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে সরকারকে বাধ্য করা। আমরা সে লক্ষ্যেই এগোচ্ছি। সামনে আন্দোলন আরও জোরদার হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতে ইসলামীর একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, জামায়াতের সব সময়ই নির্বাচনের প্রস্তুতি থাকে। পরবর্তী ১০ বছরে প্রার্থী কারা হবেন তা ঠিক করে ফেলা হয়েছে। দলের এ, বি ও সি ক্যাটাগরির এলাকা আছে। এ ও বি ক্যাটাগরি এলাকার প্রার্থী আগেই ঠিক করা হয়েছে। সি ক্যাটাগরির প্রার্থী এখন ঠিক করা হচ্ছে। সেটা নির্বাচনকে সামনে রেখে করা হচ্ছে বিষয়টি তা নয়। এটা দলের একটি প্রক্রিয়ার অংশ। জামায়াতের দুটি বিভাগ রয়েছে-অভ্যন্তরীণ নির্বাচন বিভাগ ও স্থানীয় জাতীয় নির্বাচন বিভাগ। এর দায়িত্বও আলাদা। তারা এসব কাজ করে থাকে।

জানা গেছে, যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম দুই কর্মসূচির পর হঠাৎ জামায়াতের এ অনুপস্থিতি বিএনপির নেতৃত্বের ওপর ‘ক্ষোভ’ বা ‘অভিমান’ থেকে। কারণ সরকার বিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের যাত্রা বা কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপি অন্য সব দলের সঙ্গে আলোচনা-পরামর্শ করলেও জামায়াতের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। এরপরও অনেকটা গায়ে পড়ে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে ২৪ ও ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিলে অংশ নেয় জামায়াত। এর মধ্যে ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিল করতে গিয়ে মালিবাগে পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল ও লাঠিপেটার শিকার হন নেতাকর্মীরা। এতে অনেকে আহত হন, অনেককে গ্রেফতারও করা হয়। কিন্তু এ ঘটনায় বিএনপি কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

 

জামায়াতের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানান, বিএনপি যেভাবে একলা চলছে, সেখানেও নেতিবাচক দিক আছে। একটি হলো জামায়াতের মতো ভোটের ও মাঠের শক্তিশালী দলকে আন্দোলনে একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধ করতে পারছে না। দুই, মানুষ হতাশ হচ্ছে। যখন মানুষ হতাশ হয়, তখন তাদের রাস্তায় আনা কঠিন হবে। এজন্য মাঠের আন্দোলনে ক্ষেত্রে এটা কিছুটা দুর্বলতা।

জামায়াতের এক সিনিয়র নেতা জানান, এখন বিএনপি চাচ্ছে কী, টার্গেট কী তা ফাইনাল করতে হবে। বিএনপি যদি মনে করে তারা নিরপেক্ষ সরকার আদায়ে সফল হবে, তাহলে তাদের রাস্তা হচ্ছে তিনটি। একটি হলো বিএনপি একাই জোরদার আন্দোলন করবে। সেক্ষেত্রে অচল করে দেওয়ার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে হবে। যাতে আওয়ামী লীগ দাবি আদায়ে বাধ্য হয়। দ্বিতীয় হলো, আন্দোলন চালালে, এক পর্যায়ে বিদেশিরা চাপ সৃষ্টি করে পরিবর্তনের মূল ভূমিকা পালন করবে। তৃতীয় হলো যত বিরোধী রাজনৈতিক দলের শক্তি আছে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে একটা চূড়ান্ত আন্দোলনের আবহ তৈরি করা। এই আন্দোলনের সফলতা বাস্তবিক ভাবেই নির্ভর করছে বিএনপির ওপরই। কারণ জামায়াত এখন ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা করে না। তাই একক ভাবে সরকার পতনের ওই আন্দোলনে জামায়াত যাবে না। বিএনপি যদি তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকে, জামায়াত একটা বড় সহযোগী শক্তি হতে পারবে-তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

জামায়াতের একাধিক নেতা জানান, আওয়ামী লীগের ১৪ বছরে বড় দল হিসাবে বিএনপি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের অনেক নেতাকর্মী গুম-খুনের শিকার হয়েছে। লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জামায়াতও কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। ১৪ বছরে জামায়াতের বিরুদ্ধে ১৬ হাজার মামলা দেওয়া হয়েছে, আসামি প্রায় ১৬ লাখ নেতাকর্মী। ৪৯৬ জন খুন হয়েছে। সুতরাং জামায়াতও সরকারের পদত্যাগ চায়। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। এজন্য মাঠে আছে, সামনেও থাকবে।

আরও খবর: রাজনীতি