জাতীয়

যেমন কাটছে বিএনপির তিন শীর্ষ নেতার বন্দি জীবন

  প্রতিনিধি ৯ ডিসেম্বর ২০২৩ , ৪:৪৩:১০ প্রিন্ট সংস্করণ

 

 

২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের পর থেকেই এক প্রকার নেতৃত্বের সংকটে ভুগছে বিএনপি। সেদিনের সমাবেশে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষের ঘটনায় আটক হয়েছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ দলের শীর্ষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী। শীর্ষ অন্য নেতাদের মধ্যে যারা আটক হননি, তাদের অধিকাংশই আত্মগোপনে।

 

মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর মতো নেতাদের অভাব বেশ ভালোমতোই অনুধাবন করতে পারছেন দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। বিএনপির এ শীর্ষ তিন নেতাকেই রাখা হয়েছে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে। কারাগারে তাদের দিনযাপন সম্পর্কে জানতে কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল বণিক বার্তা। যদিও এ বিষয়ে কারো কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে তাদের পরিবারের সদস্য ও আইনজীবীরা জানিয়েছেন, বিএনপির এ তিন শীর্ষ নেতাই কারাগারে রাজবন্দি হিসেবে ডিভিশন পেয়েছেন। সেখানে এখন মূলত বই ও সংবাদপত্র পড়া, লেখালেখি ও সহবন্দিদের সঙ্গে আলাপচারিতায় দিন পার করছেন তারা।

বিএনপির এ শীর্ষ তিন নেতার মধ্যে সবার আগে আটক হয়েছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের দিন প্রধান বিচারপতির বাসভবনের ফটক ভেঙে ইটপাটকেল নিক্ষেপের অভিযোগে করা এক মামলায় ২৯ অক্টোবর তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের (সিএমএম) আদালতে তার জামিনের আবেদন করা হয়। জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এর পর থেকে একাধিকবার আবেদন করেও জামিন পাননি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি অবস্থায় মির্জা ফখরুলের দিন কেমন কাটছে জানতে চাইলে তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌তিনি একজন শিক্ষক মানুষ। বই পড়তে ভালোবাসেন। তাই জেল বন্দিত্বের দিনগুলো পড়াশোনা আর লেখালেখি করে কাটাচ্ছেন তিনি। উনি মূলত রাজনীতি নিয়ে পড়তে পছন্দ করেন। এর পাশাপাশি ভ্রমণ কাহিনীও পড়ছেন। দিনের কিছু সময় তিনি করিডোরে হাঁটা-চলাফেরা করেন। অতীতে কারাগারে যখন ছিলেন, তখন এতটা কড়াকড়ি ছিল না। সে সময়গুলোয় জেলের খোলা মাঠে ঘুরে বেড়াতেন। এখন তা পারছেন না।’ ‘‌আমার স্বপ্ন আমার দেশ’ শিরোনামে একটি বই আছে মির্জা ফখরুলের। জেলের এ সময়গুলোয়ও তিনি লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন রাহাত আরা বেগম।

তিনি বলেন, ‘‌আমি আর আমার ছোট মেয়ে মাঝে মাঝে কারাগারে দেখা করে আসি। দেখা করার সময়েও এখন পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগে সপ্তাহে একদিন গিয়ে ১ ঘণ্টা কথা বলার সময় পেতাম। এখন ১৫ দিন পরপর যেতে হয়;৷তাছাড়া কথা বলার সময় কমিয়ে আধা ঘণ্টায় আনা হয়েছে।’

মির্জা ফখরুলের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে তার স্ত্রী বলেন, ‘তিনি শারীরিকভাবে ভীষণ অসুস্থ। সার্বক্ষণিক ডাক্তারের পর্যবেক্ষণে ছিলেন। তার হার্টে তিনটা স্টেন্ট পরানো আছে। ফিজিওথেরাপি নিতে হয়। উনার আইবিএস (ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম) আছে। দীর্ঘদিন ধরে উনি এ সমস্যায় ভুগছেন। এটি এখন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এর পাশাপাশি তিনি আরো কিছু শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। কিছুদিন আগে তিনি পড়ে গিয়ে ব্যথা পান। এখন লাঠিতে ভর করে চলাফেরা করেন। শারীরিকভাবে ভীষণ অসুস্থ থাকায় উনাকে নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা জামিনের আবেদন করছি কিন্তু কবে ছাড়া পাবেন কিছুই বুঝতে পারছি না।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আটক হয়েছিলেন পুলিশ কনস্টেবল হত্যা মামলায়। গত ২ নভেম্বর রাতে রাজধানীর গুলশানের একটি বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে নেয়া হয় ছয়দিনের রিমান্ডে। বর্তমানে আদালতের নির্দেশে ডিভিশন ও জেল কোড অনুযায়ী অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন বিএনপির এ বর্ষীয়ান নেতা।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর জেলবন্দিত্বের সময় নিয়ে তার একমাত্র ছেলে ইসরাফিল খসরু বণিক বার্তাকে জানান, ‘‌এখন পর্যন্ত বাবার সঙ্গে আমরা দুবার দেখা করার সুযোগ পেয়েছি। শেষবার যখন দেখা করতে গেলাম সে সময় ফরিদ জাকারিয়ার পাঁচটি বই দিয়ে এসেছি। বই পড়া উনার শখ। জেলের এ সময়গুলোয় তিনি বই পড়ছেন। সমসাময়িক, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতি নিয়ে পড়তে পছন্দ করেন তিনি। ফরিদ জাকারিয়ার লেখার পাশাপাশি তিনি আনান্দ গিরিধারাসের বই পড়েন। এছাড়া প্রতিদিনের খবরের পত্রিকাগুলো পড়েন। এভাবেই জেলের বন্দি সময়গুলো কাটাচ্ছেন। আমরা যখন দেখা করতে যাই তখন বাবার পছন্দে খাবারগুলো সঙ্গে নিয়ে যাই। তবে অন্য সময় জেলের খাবারই খেয়ে থাকেন।’

তিনি বলেন, ‘‌বাবা অ্যাজমার (হাঁপানি) রোগী। সেই সঙ্গে উনার স্লিপ অ্যাপনিয়া ও প্রেসারের সমস্যা আছে। সেজন্যই আমার পরিবার উদ্বিগ্ন। ডিভিশনের সঙ্গে উনার চিকিৎসার কথাও অর্ডারে বলা আছে। উনি যাতে দ্রুতই ছাড়া পান, আমরা সেই চেষ্টা চালাচ্ছি।’

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বিএনপির জেলবন্দি এক নেতার পরিবারের সদস্য জানান, ‘‌আমীর খসরু ও মির্জা ফখরুলসহ আরো কয়েকজন নেতা সকাল থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এভাবেই থাকেন। তারা দুজনেই একই ফ্লোরে আছেন। দিনের বেলায় দেখা করেন, কথা বলেন। বিকালে তাদের লকআপে ফিরে যেতে হয়। এ জেলের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় বিএনপির প্রচুর নেতাকর্মী আটক আছেন।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে মোট মামলা ১০২টি। এর মধ্যে পুরনো মামলা ৯৮টি ও নতুন মামলা চারটি। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে রয়েছে নয়টি মামলা। মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে পুরনো ও নতুন মিলিয়ে মোট মামলা ৫২টি।

মির্জা আব্বাসও ২৮ অক্টোবরের ঘটনায়ই গ্রেফতার হয়েছিলেন। কারাগারের জীবনযাপন নিয়ে জানতে কথা হয় মির্জা আব্বাসের আইনজীবী আমিনুল ইসলামের সঙ্গে। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘‌মামলাগুলো নিয়ে কাজ করতে গিয়ে উনার অবস্থা জানতে চেয়েছি। সে সময় তিনি বলেছিলেন, দিনের অধিকাংশ সময় নামাজ পড়েন। বিভিন্ন রাজনৈতিক বই পড়েন। এছাড়া ওখানে আটক অন্য নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে সময় কাটাচ্ছেন। ডিভিশন পাওয়ায় থাকা ও খাবারের বিষয়গুলো ইতিবাচক বলেই আমার মনে হয়। ’

মির্জা আব্বাসের জামিন প্রসঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, ‘‌রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্যই মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে মামলাগুলো করা হয়েছে। আদালতে মামলাগুলো মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকায় কবে জামিন পেতে পারেন তা নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না।’

সূত্র বনিক বার্তা

আরও খবর: জাতীয়