সারাদেশ

যখন-তখন গুলি ছোড়ে মোশাবাহিনী!

  প্রতিনিধি ১ জুন ২০২২ , ৩:৫৫:০৩ প্রিন্ট সংস্করণ

 

নীলাকাশ টুডেঃ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হত্যা, ডাকাতি, ধর্ষণ, চাঁদাবাজিসহ ৩৪ মামলার আসামি ও মোশাবাহিনীর প্রধান মোশারফের রয়েছে তিন সশস্ত্র দেহরক্ষী। তারা যখন-তখন আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ও গুলি ছুড়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করছে। স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ এক নেতার আশীর্বাদে মোশা এখন আরও বেপরোয়া।

দেশের নতুন মেগাসিটি পূর্বাচলে গড়ে তুলেছেন অপরাধের সাম্রাজ্য। গত শুক্রবার মোশা বাহিনীর নেতৃত্বে রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়। এ ঘটনার পর মোশারফ এখন আটক রয়েছেন। এদিকে একজন তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীর সশস্ত্র তিনজন দেহরক্ষী নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে। তার গানম্যান রাখার অনুমোদন কীভাবে হলো এ প্রশ্ন এলাকাবাসীর মুখে মুখে।

জানা যায়, উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওড়া গ্রামের মোশারফ হোসেন মোশা ১৯৯৬ সালে তার বড় ভাই শাহ আলমকে নৃশংসভাবে হত্যার মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু করে। গত ২৬ বছরে তিনি হয়ে ওঠেন ভয়ংকর ও দুর্ধর্ষ। তার বিরুদ্ধে নারীদের তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগও রয়েছে। তার অত্যাচারে নাওড়া গ্রামের ২শ সংখ্যালঘু পরিবার এলাকা ছেড়ে ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

জমি দখল আর পূর্বাচলের বিভিন্ন আবাসন প্রতিষ্ঠানের কাছে নিয়মিত চাঁদাবাজি করে মোশা গড়ে তুলেছেন ভয়ংকর এক কিলার বাহিনী। নানা অপরাধের কারণে ২৭ বার জেল খেটেছেন মোশারফ। তার নামে রাজধানীর খিলক্ষেত, মোহাম্মদপুর, ভাটারা, বাড্ডা, রামপুরা, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ, আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জে রয়েছে ৩৪টি মামলা। সূত্র মতে, ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার হাত রয়েছে তার কাঁধে। এ কারণে যা খুশি করে বেড়াচ্ছেন তিনি। গত শুক্রবার দেশের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠী রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান ও রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা রফিকুল ইসলাম কুলখানিতে যোগ দিতে গেলে ফিল্মি স্টাইলে তার ওপর হামলা চালায় মোশাবাহিনীর লোকজন। এ সময় তার ৩ দেহরক্ষীসহ সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের অক্টোবর মাসে রাজধানীর একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অফিসে বসে রফিকুল ইসলামকে হত্যার ছক আঁকেন। এরপর কয়েক দফা রফিকুল ইসলামকে হত্যার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয় মোশার। গত শুক্রবার হামলার সময় সময়মতো পুলিশ ও র‌্যাব ঘটনাস্থলে আসায় এ দফাও মিশন ব্যর্থ হয় তার।

রোববার রাতে রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে মোশারফকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তাকে গ্রেফতারের পর থেকেই এলাকার লোকজন মুখ খুলতে শুরু করেছেন। এর মধ্যে সশস্ত্র তিনজন দেহরক্ষী রাখার ঘটনা সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে। জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার এক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানান, রাষ্ট্রের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি অথবা ব্যবসায়ীর বাস্তবিক নিরাপত্তার অভাব হলে ১৮৭৮ সালের আর্মস অ্যাক্ট এবং ১৯২৪ সালের আর্মস রুলস অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে শর্ট ব্যারেল অথবা লং ব্যারেল অস্ত্রের আবেদন করে রাখতে পারেন। তবে গানম্যান নিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অধিক ঝুঁকির আশঙ্কা থাকলেই কেবল দেওয়া যেতে পারে।

সেক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই রাষ্ট্রের অতীব গুরুত্বপূর্ণ অথবা শিল্পপতি কিংবা সিআইপি পদমর্যাদার হতে হবে। তদুপরি গুলিবর্ষণের সঠিক কারণ, গুলির হিসাব থানায় এবং জেলা প্রশাসককে লিখিত ভাবে জানাতে হবে। তবে মোশারফের তিন দেহরক্ষী যখন-তখন গুলিবর্ষণ করে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করলেও সে হিসাব এখন পর্যন্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কারও কাছে জানাননি তারা। তাছাড়া জেলা প্রশাসক কিংবা থানা পুলিশও জানে না তার গানম্যান পোষার বিষয়ে।

মোশারফ কোনো ব্যবসায়ী কিংবা রাজনৈতিক ব্যক্তি নন। নন জনপ্রতিনিধি কিংবা দলীয় পদধারী। এরপরও ৩ জন সশস্ত্র গানম্যান নিয়ে চলাচলের কারণে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন এলাকার মানুষ। রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ এএফএম সায়েদ জানান, মোশারফের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা চলমান আছে। সে কোন উপায়ে গানম্যান পেয়েছে সেটা আমরা জানি না। তিনি থানা পুলিশকে সশস্ত্র গানম্যান নিয়োগের ব্যাপারে অবহিত করেননি।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ মঞ্জুরুল হাফিজ জানান, রূপগঞ্জে কে কীভাবে কতজন গানম্যান নিয়োগ দিয়েছেন তা তিনি সঠিকভাবে জানেন না। তবে লিখিতভাবে এ ব্যাপারে তার কাছে তথ্য চাওয়া হলে তিনি নথিপত্র বের করে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাবেন। আলাদাভাবে সন্ত্রাসী মোশারফ অনুমতি নিয়ে গানম্যান নিয়োগ দিয়েছেন কিনা সে ব্যাপারেও অবগত নন তিনি।

আরও খবর: সারাদেশ