সারাদেশ

ভেঙে ফেলা হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়ি!

  প্রতিনিধি ৪ ডিসেম্বর ২০২২ , ৫:১৩:৫২ প্রিন্ট সংস্করণ

 

নীলাকাশ টুডেঃ প্রায় তিন শ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত প্রাচীন চন্দ্রদ্বীপের রাজধানী বাকলার সবচেয়ে আধুনিক শহরটি গড়ে উঠেছিল বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠির জমিদার বাড়ি ঘিরে। ১৩ জন প্রতাপশালী জমিদারের বাড়ি ছিল একই এলাকায়। ফলে কলসকাঠিকে বলা হয় জমিদার নগর। তুলনা করা হয় পানাম নগরের সঙ্গে। কালের পরিক্রমায় ১১ জন জমিদারের বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। টিকে ছিল দুটি। এরমধ্যে জমিদার বিশ্বেশ্বর রায় চৌধুরীর ভবনটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। গত চার দিন ধরে ভাঙা হচ্ছে শত শত বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এই স্থাপনা।

স্থানীয়রা বলছেন, একটি মহল চক্রান্ত করে এই আত্মঘাতী কাজটি করছেন। জমিদারদের শাসনের স্মারক ভেঙে ফেলার মধ্য দিয়ে ইতিহাস মুছে ফেলা হচ্ছে। তারা স্থাপনা টিকিয়ে রাখতে জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তবে স্থাপনা অপসারণকারীরা বলছেন, ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ভবনগুলো ভাঙা হচ্ছে। পূর্বপুরুষের এসব স্থাপনা সংস্কারে কোটি টাকার প্রয়োজন হলেও তাদের সামর্থ্য না থাকায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

 

সরেজমিনে রোববার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে জমিদার বাড়িতে দেখা গেছে মূল ভবনের একাংশ ভাঙার কাজ চলছে। এছাড়া বেশ কয়েকজন শ্রমিক জমিদার বাড়ির গাছ কাটছেন। দোতলায় স্তুপকৃত ভবনের ইট আর সুরকি।

শ্রমিকরা জানিয়েছেন, ১ ডিসেম্বর থেকে ভবন ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। মূলত জমিদারদের স্থাপনা ভেঙে সেখানে নতুন করে ভবন নির্মাণ করা হবে।

প্রিতম মুখার্জীর মামা পরিচয় দিয়ে প্রতিবেদককে মুঠোফোনে কাজী জাহাঙ্গীর নামে একজন বলেন, আমার বন্ধু গৌতম মুখার্জী ২০১৪ সালে দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পরে ওই পরিবারটির দেখভাল করি। ওই সম্পত্তি নিয়ে রাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের মামলা চলছিল। জমিদারদের ভবন ভেঙে ফেলা হচ্ছে, কারণ সন্ধ্যার পরে সেখানে অসামাজিক কাজ হয়, মাদকের আড্ডা বসে।

এসময় তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, জমিদার বাড়ি ভাঙার বিপক্ষে কোনো সংবাদ হলে মামলা করা হবে।

কলসকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফয়সাল ওয়াহিদ মুন্না বলেন, এই কুচক্রী মহলটি ভুয়া ওয়ারিশ তৈরি করে জমিদার বাড়িটি ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে। এছাড়া জমিদার বাড়িসহ ৩৯৬ একর জমি তাদের বলে দাবি করছেন। এরমধ্যে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ও তাদের বলে দাবি করছেন। ওই জমিদার বাড়ির মধ্যে সরকারি স্কুল ও শহীদ মিনার রয়েছে। ১৯৭১ সালে কলসকাঠির ৩৫০ জনকে একদিনে গুলি করে পাকিস্তানি বাহিনী হত্যা করেছিল। তাদের স্মরণে যে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছিল সেটিকেও এই মহলটি আটকে রেখেছে।

তিনি আরও বলেন, আমি জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করব, এই কুচক্রী মহলকে প্রতিহত করে আমাদের পুরোনো ঐতিহ্যগুলো সংরক্ষণ করা হোক। অন্যথায় পরের প্রজন্ম ইতিহাসের কোনো নির্দশনের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবে না।

বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজল চন্দ্র শীল বলেন, জমিদার বাড়ি ভাঙার বিষয়টি জেনেছি। যারা ভাঙছেন তাদেরকে সোমবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে আমার কার্যালয়ে ডেকেছি। তাদের কি কাগজপত্র রয়েছে তা দেখব। এরপর ওই স্থাপনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আরও খবর: সারাদেশ