সারাদেশ

বেপরোয়া কিশোর গ্যাং, ছাত্রকে তুলে নিয়ে নির্যাতন

  প্রতিনিধি ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৫:৪৩:৫৩ প্রিন্ট সংস্করণ

নীলাকাশ টুডেঃ রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং সন্ত্রাসীরা। এক স্কুলছাত্রকে তুলে নিয়ে রোমহর্ষক নির্যাতন করেছে তারা। স্কুলছাত্র সামিউল আলমের (১৪) হাতে পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়েছে সন্ত্রাসীরা।

নির্যাতনের শিকার সামিউলকে প্রথমে গোদাগাড়ী ৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। সামিউল বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩১নং ওয়ার্ডের ৪৯নং বেডে চিকিৎসাধীন।

সামিউল গোদাগাড়ী পৌর এলাকার গড়ের মাঠ এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে। গত বুধবার রাতে সামিউলের মা হালিমা বেগম নির্যাতনকারী কিশোর গ্যাংয়ের ৭ জনের বিরুদ্ধে গোদাগাড়ী থানায় একটি এজাহার দিয়েছেন। সামিউল চলতি বছরে গোদাগাড়ী সরকারি স্কুল থেকে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার্থী বলে জানা গেছে। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর তার পরীক্ষা শুরুর কথা রয়েছে।

সামিউলের মা তার অভিযোগে বলেছেন, লস্করহাটি এলাকার কিশোর গ্যাং সন্ত্রাসীদের লিডার মেহেদী হাসান পলাশের সঙ্গে সামিউলের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া চাচাতো বোনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। সম্প্রতি সামিউল তাদের একসঙ্গে ঘুরতে দেখে। সামিউল বিষয়টি পরিবারকে জানায় এবং তার চাচাতো বোনকে সন্ত্রাসী লিডার মেহেদী পলাশের সঙ্গে মেলামেশা করতে বারণ করে।

সামিউলের চাচাতো বোন বিষয়টি মেহেদী পলাশকে জানিয়ে দেয়। এতে সামিউলের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে কিশোর গ্যাং নেতা মেহেদী পলাশ। সে তার সহযোগী কিশোর গ্যাং সদস্যদের জানিয়ে সামিউলকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করে। ঘটনার একদিন আগে মেহেদী পলাশের নেতৃত্বে কিশোর গ্যাংয়ের কয়েকজন সন্ত্রাসী সামিউলকে রাস্তায় পেয়ে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল।

অভিযোগ মতে, গত বুধবার সকাল ৯টার দিকে স্কুল ছাত্র সামিউল তার নানার বাড়ি থেকে বাড়িতে ফিরছিল একটি অটোতে করে। হলের মোড় এলাকায় পৌঁছালে কিশোর গ্যাং সন্ত্রাসী আব্দুল আওয়াল (২৩) তাকে অটো থেকে নামিয়ে মোটরসাইকেলে তুলে নেন। প্রথমে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় গোদাগাড়ী জেনারেল হাসপাতালের সামনের একটি হোটেলে। সেখানে তারা স্কুলছাত্র সামিউলকে লাথি কিল-ঘুসিতে একদফা বেধড়ক মারপিট করেন। এ সময় সামিউল বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার দিলেও সশস্ত্র কিশোর গ্যাংয়ের ভয়ে কেউ এগিয়ে আসার সাহস পায়নি।

এদিকে একদফা মারপিটের পর সামিউলকে একটি অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয় পাশের লস্করহাটি এলাকার নির্জন মাঠের ভেতরে বন্ধ একটি ইটভাটায়।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ চিকিৎসাধীন সামিউলের অভিযোগ- প্রথমে কিশোর গ্যাং সন্ত্রাসীদের একজন মেহেদী পলাশের বাড়ি থেকে ফেনসিডিল আনে। তারা ছয় জনে ভাগাভাগি করে ফেনসিডিল সেবন করে। এরপর তার ওপর শুরু করে নৃশংস কায়দায় নির্যাতন। লোহার রড ও শক্ত লাঠি দিয়ে তাকে বেদম পেটানো হয়। এ সময় সামিউল বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার দিলে সন্ত্রাসী আওয়াল তার গলায় ক্ষুর ধরে চুপ থাকতে বলে। চিৎকার করলে ক্ষুর দিয়ে গলায় পোঁচ দেবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। একপর্যায়ে তার হাতে পায়ে ও শরীরে বিভিন্ন জায়গায় জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা দিতে শুরু করে। এ সময় সামিউল অচেতন হয়ে পড়লে কিশোর গ্যাং সন্ত্রাসীরা মোটরসাইকেলে দ্রুত চলে যায়।

স্কুলছাত্র সামিউলের চাচা আব্দুল হামিদ জানান, এলাকার মানুষের কাছ থেকে খবর পেয়ে আমরা দ্রুত পরিত্যক্ত ইটভাটায় যাই। সেখানে অচেতন অবস্থায় সামিউলকে উদ্ধার করে গোদাগাড়ী ৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করি।

 

 

এদিকে পুলিশ, এলাকাবাসী ও সামিউলের পরিবারের সদস্যরা জানান, সামিউলের ওপর ভয়াবহ নির্যাতনকারীরা হলো- লস্করহাটি গ্রামের আনসার আলীর ছেলে মাদক ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান পলাশ ( ২৩), পৌর এলাকার মহিষালবাড়ি আলীপুর গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে আওয়াল (২২), গড়ের মাঠের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী আব্দুল মালেকের ছেলে জাহিদ হোসেন (১৭), মাদারপুর গ্রামের র্যা বের ক্রসফায়ারে নিহত মতিউর রহমান মতির ছেলে শাহরিয়ার হোসেন জয়সহ (১৮) অজ্ঞাত আরও পাঁচজন।

এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, গোদাগাড়ী পৌর এলাকাতেই রয়েছে সক্রিয় ৫টি কিশোর গ্যাং সন্ত্রাসী গ্রুপ। তার মধ্যে মেহেদী হাসান পলাশ ও আব্দুল আওয়ালের নেতৃত্বাধীন কিশোর গ্যাঙে রয়েছে ১২ থেকে ১৪ জন সন্ত্রাসী। এর মধ্যে মেহেদী হাসান পলাশ, আওয়াল, জাহিদ হোসেন এবং শাহরিয়ার হাসান জয় এলাকাতে দাপটের সঙ্গে মাদক ব্যবসা করে। তাদের মধ্যে জাহিদ হোসেনের বাবা আব্দুল মালেক এলাকার বড়মাপের মাদক ব্যবসায়ী।

অন্যদিকে শাহরিয়ার জয়ের বাবা মতিউর রহমান মতি ২০১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি র্যা বের ক্রসফায়ারে নিহত হয়। তবে বর্তমানে তার মা মুক্তি খাতুন ফুলটাইম হেরোইন ও ফেনসিডিল বিক্রির কারবার চালায়। এই গ্যাংয়ের প্রত্যেকের কাছে দামি ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল রয়েছে। তারা প্রত্যেকেই দলগতভাবে নিয়মিত ফেনসিডিল ও ইয়াবা সেবন করে।

এদিকে অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের রহস্যজনক নীরবতার কারণে গোদাগাড়ীর কিশোর গ্যাংগুলো সম্প্রতি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এসব কিশোর গ্যাং সন্ত্রাসীরা এলাকাতে হেরোইন পাচারের কাজেও লিপ্ত এবং তারা মাঝে মাঝে অন্যের মাদকের চালান ছিনতাই করে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগে জানা গেছে। তারা ছিনতাই ও চাঁদাবাজিও করে থাকে। তবে সীমান্ত এলাকা থেকে মাদকের চালান এনে বিভিন্ন স্থানে পাচারের কাজও তারা করছে। গোদাগাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামরুল ইসলাম জানান, সামিউলের মা হালিমা বেগম বুধবার রাতে থানায় একটি এজাহার দিয়েছেন। ঘটনাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এসআই জামালকে। এজাহারকারীকে থানায় ডাকা হয়েছে মামলা রেকর্ডের জন্য। কিন্তু কেউ না আসায় বুধবার দুপুর পর্যন্ত মামলা হয়নি। এ ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি বলে জানিয়েছেন ওসি।

আরও খবর: সারাদেশ