জাতীয়

বাংলাদেশে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীর সংখ্যা বাড়ল

  প্রতিনিধি ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ৪:১০:১৮ প্রিন্ট সংস্করণ

কক্সবাজার প্রতিনিধি

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে এখন পর্যন্ত মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ৯৫ জন সদস্য অস্ত্রসহ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তাদেরকে নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ।

সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছ
তিনি জানান, এ ব্যাপারে পরবর্তী কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের তুমব্রু এলাকায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলিতে দুই বাংলাদেশি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহতদের মধ্যে পবিন্দ্র ধর নামে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

 

এর আগে শনিবার থেকে চলা গোলাগুলি গতকাল রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছিল; যা বাংলাদেশের নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু, ঘুমধুম, টেকনাফ ও উখিয়ার সীমান্ত লাগোয়া এলাকা থেকে স্পষ্ট শোনা যায়। এমন পরিস্থিতিতে ঘুমধুম, তুমব্রু, কোনারপাড়া, ভাজাবনিয়া ও বাইশফাঁড়ি এলাকার শত শত পরিবার যে যেদিকে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে। স্থানীয় প্রশাসন তাদের নিরাপদে থাকতে বলেছে। সীমান্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষে টিকতে না পেরে সোমবার সকাল পর্যন্ত দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) অন্তত ৯৫ সদস্য সীমান্ত পার হয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ক্যাম্পে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের মধ্যে গতকাল রোববার ৬৮ জন বিজিবির বিওপিতে আশ্রয় নেন। তাদের অনেকের হাতেই অস্ত্র ছিল। তারা ক্লান্ত এবং অনেকেই আহত অবস্থায় ছিলেন।

পরিস্থিতি বিবেচনায় মিয়ানমারের সঙ্গে থাকা গোটা সীমান্ত এলাকায় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি। কক্সবাজার ও বান্দরবান পুলিশকেও সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল বলেছেন, সীমান্তে বিজিবির শক্তি বৃদ্ধি করা হয়েছে। কোস্টগার্ড, পুলিশকে সতর্ক করা হয়েছে।

বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার কথা জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দেরি হতে পারে। সীমান্ত দিয়ে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। তবে সরকারি বাহিনীর কেউ আত্মরক্ষার্থে আশ্রয় চাইলে কিছু করার থাকে না।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ লড়াইয়ের রেশ বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা পর্যন্ত এসে গেছে। সীমান্ত থেকে প্রায় সময় গোলাগুলির আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধ নয়, যুদ্ধটা তাদের (মিয়ানমার) অভ্যন্তরীণ।

গতকাল সচিবালয়ে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, গোলাগুলির আওয়াজ যখন বাংলাদেশে চলে আসে, তখন স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের (সীমান্ত এলাকার) নাগরিকদের মধ্যে ভয়ভীতি ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ বিষয়ে চীনের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। সাংবাদিকরা জানতে চান আপনি সহযোগিতা চেয়েছেন, তারা (চীনের রাষ্ট্রদূত) কী বলেছেন? জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা ইতিবাচক জবাব দিয়েছেন।

এদিকে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, সীমান্তের বিষয় নিয়ে বিজিবি কাজ করছে। আমরা বিজিবির সঙ্গে কাজ করছি। বিজিবি আমাদের কাছ থেকে যে সহযোগিতা চাইবে, আইনানুগভাবে আমরা সেই সহযোগিতা দেব।

স্থানীয়রা জানান, গত কয়েকদিন ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দেশটির সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ চলছে। এতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছে। এসব গোলাগুলি ও বিস্ফোরণে ঘুমধুমের সীমান্ত এলাকায় এখন উত্তেজনা বিরাজ করছে।

জিরো লাইনে গুলির খোসা ও মর্টার শেল পড়ে আছে উল্লেখ করে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, আমার ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী তুমব্রু, বাইশফাঁড়ি, ভাজাবুনিয়া সীমান্ত পয়েন্টের বাসিন্দারা এখন চরম আতঙ্কে রয়েছেন।

তিনি জানান, মর্টার শেলের অংশ একটি বসতবাড়ির উপরে পড়ার ঘটনায় দুটি গ্রামের বাসিন্দারা চলে গেছেন। চলমান পরিস্থিতির কারণে অনেক কৃষক তাদের ফসলি জমিতে যেতে ভয় পাচ্ছেন। উৎপাদিত ফসল জমি থেকে কাটতে না পারায় তা পচে যাচ্ছে।

 

আরও খবর: জাতীয়