জাতীয়

পুলিশ-বিএনপি ও আ”লীগের মধ্যে সংঘর্ষ, কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ, নিহত ১, আহত ৩০০

  ডেস্ক রিপোর্টঃ ১৯ জুলাই ২০২৩ , ২:৪৮:৪২ প্রিন্ট সংস্করণ

সরকারের পদত্যাগে বিএনপির একদফা আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি পদযাত্রা ঘিরে উত্তপ্ত রাজপথ। মঙ্গলবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচিতে হামলা, বাধা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। লক্ষ্মীপুরে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন যুবদলের এক কর্মী। এছাড়া জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হাসান মাহমুদ ইব্রাহিমসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। রাজধানীর মিরপুরে, লক্ষ্মীপুর, বগুড়া, খাগড়াছড়ি, ফেনী, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, জয়পুরহাট, পিরোজপুরসহ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিকসহ তিন শতাধিক আহত হয়েছে। এসব এলাকায় দফায় দফায় ধাওয়া-পালটাধাওয়া, ইটপাটকেল ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটে। অতীতের মতো এবার হামলা ও ধাওয়ার পর রাজপথ ছেড়ে যাননি বিএনপি নেতাকর্মীরা। অনেক স্থানে আওয়ামী লীগ এমনকি পুলিশের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়েছে। এসব বাধা ও হামলার জন্য পুলিশ ও আওয়ামী লীগকে পদযাত্রায় পুলিশি বাধা ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর অভিযোগ করেছে বিএনপি।

পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর মিরপুর বাঙলা কলেজের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের ধাওয়া-পালটাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ১০ জন আহত হয়। বগুড়ায় বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ৫০ জন গুলিবিদ্ধসহ ২০০ আহত হয়েছে। খাগড়াছড়িতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে উভয়পক্ষের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে। কিশোরগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী ও দুই সাংবাদিক আহত হয়েছেন। ফেনীতে পুলিশ-বিএনপি-আওয়ামী লীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষে বিএনপির অর্ধশত নেতাকর্মী ও ১০ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। জয়পুরহাটে ত্রিমুখী সংঘর্ষে ৪৫ জন আহত হয়েছে। এদিকে পদযাত্রা ঘিরে রাজবাড়ীতে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে কয়েকজন আহত হয়েছে। নীলাকাশ টুডে’র প্রতিবেদক, বিভিন্ন ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে জানা গেছে এসব খবর।

বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি উপলক্ষ্যে ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে সকাল থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী রাজধানীর গাবতলীতে জড়ো হয়। পুরো এলাকা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পদযাত্রা মিরপুর বাঙলা কলেজের গেটের সামনে পৌঁছলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। বাঙলা কলেজ ক্যাম্পাসে আগে থেকে অবস্থান করা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পদযাত্রা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। প্রতিরোধের মুখে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কলেজের ভেতরে ঢুকে পড়ে। এরপর বিএনপির নেতাকর্মীরা কলেজের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। একটি মোটরসাইকেল ও একটি বাইসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। সংঘর্ষের শুরুতে পুলিশের তৎপরতা খুব একটা চোখে পড়েনি। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করলে পদযাত্রা আবার শুরু হয়। সংঘর্ষের সময় চারপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হুড়োহুড়িতে ফুটপাতের অনেক টং দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়।

এদিন এইচএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিতে এসে অনেক শিক্ষার্থী উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। সংঘর্ষ চলাকালে ভয়ে তারা ছোটাছুটি করেন। সংঘর্ষ সম্পর্কে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার জসিম উদ্দীন মোল্লা বলেন, বিএনপির পদযাত্রা কলেজের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা ঢিল ছুড়লে একটু উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তবে কিছুক্ষণ পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। দারুস সালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আমিনুর বাশার জানান, দুই পক্ষের উসকানিতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।

ধাওয়া পালটা-ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপি ও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে পরস্পরকে দোষারোপ করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়-বিনা উসকানিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির পদযাত্রায় হামলা চালিয়েছে। অপরদিকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা জানান, ক্যাম্পাসে অবস্থান করছিলেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে তারা কিছু পদক্ষেপ নেন। পদযাত্রা থেকে বাঙলা কলেজে অতর্কিত হামলা চালানো হয়েছে। ক্যাম্পাসকে রক্ষা করতে তারা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।

দারুস সালাম থানা বিএনপির আহ্বায়ক এসএ সিদ্দিক সাজু জানান, সংঘর্ষে বিএনপির বহু নেতাকর্মী আহত হয়েছে। হামলায় দারুস সালাম থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফা কামাল বেপারি, সদস্য সোহেল বেপারি, সদস্য লিটন ভূঁইয়া ও মিরপুর থানা ছাত্রদল কর্মী মো. মিরাজের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ সংঘর্ষের জন্য তিনি ছাত্রলীগকে দায়ী করেন। এদিকে বিএনপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই রাজধানীর মিরপুরের গাবতলীতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। গাবতলী থেকে শ্যামলী পর্যন্ত শত শত বাস ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। অনেক যাত্রী তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

লক্ষ্মীপুর : শহরের ঝুমুর সিনেমা হল ও রামগতি সড়কের আধুনিক হাসপাতালের সামনে পদযাত্রা কর্মসূচি ঘিরে আওয়ামী লীগ, পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষকালে কৃষক দলের কর্মী সজীব হোসেন (৩২) নিহত হয়েছে। এছাড়া জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হাসান মাহমুদ ইব্রাহিমসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সোহেল রানাসহ উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে।

জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাছিবুর রহমান বলেন, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাদের লোকজনের ওপর বিভিন্ন পয়েন্টে হামলা করেছে। এতে বহু নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এ সময় কৃষক দলের এক কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে আওয়ামী লীগের লোকজন। এছাড়া পুলিশের ছররা গুলিতে ৩০ থেকে ৪০ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে তিনি দাবি করেন।

লক্ষ্মীপুর সদর থানার ওসি মোসলেহ উদ্দিন বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের গোডাউন রোড পর্যন্ত পদযাত্রা করার কথা ছিল। পদযাত্রা নিয়ে রামগতি সড়কে যেতে চাইলে তাদের বাধা দেওয়া হয়। এ সময় পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এতে তিনিসহ ২০ থেকে ২৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।

বগুড়া : পদযাত্রা শহরের বনানী মোড় ও মাটিডালি বিমান মোড় থেকে শুরুর পরিকল্পনা ছিল। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনার নেতৃত্বে বনানী মোড়ে এবং জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশার নেতৃত্বে মাটিডালি বিমান মোড়ে নেতাকর্মীরা জড়ো হন। এরপর ইয়াকুবিয়া স্কুল ও থানা রোড হয়ে তারা নবাববাড়ী সড়কে দলীয় কার্যালয়ের সামনে যেতে থাকেন। সাতমাথা এলাকায় আওয়ামী লীগ উন্নয়ন সমাবেশের আয়োজন করায় পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের সাতমাথার দিকে যেতে বাধা দেয়। দুপুর ১২টার দিকে হেনার নেতৃত্বাধীন পদযাত্রা ইয়াকুবিয়া স্কুল মোড়ে পৌঁছে। এ সময় পেছনে থাকা নেতাকর্মীরা সাতমাথার দিকে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশের সঙ্গে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পালটাধাওয়া শুরু হয়। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। নারুলি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর তরিকুল ইসলামকে রাস্তায় ফেলে বেদম মারধর করে রক্তাক্ত করে। জবাবে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এরপর পুলিশ রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষকালে বিএনপির নেতাকর্মীরা বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের একটি বাসে ঢিল ছোড়েন। এতে জানালার কাঁচ ভেঙে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী জুমিয়া জুবায়ের (৮) মাথায় গুরুতর আঘাত পায়। তার মাথায় আটটি সেলাই দিতে হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। পুলিশের টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে ৩৩ জনকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ শ্বাসকষ্টে ভুগছে বলে জানা গেছে।

সদর ফাঁড়ি এলাকায় অবস্থানরত পুলিশ সদস্যদের ওপর বিএনপির নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল ও ককটেল হামলা করেন। হামলা চালিয়ে সদর পুলিশ ফাঁড়ি ভাংচুর করা হয়। এ সময় ধাওয়া-পালটাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে বিএনপির নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। শহরের ফতেহআলী বাজার এলাকাতেও পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পালটাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, বিনা উসকানিতে বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর পরিকল্পিত হামলা করেছে। নিষেধ করা সত্ত্বেও তারা সাতমাথায় আসতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। তখন পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে। অন্তত ১৫টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ডিবির এসআই আশিকুর রহমান ইটের আঘাতে গুরুতর আহত হন। এ ছাড়া ডিবির তিন নারী সদস্যসহ ১০ জন আহত হয়েছে। সদর পুলিশ ফাঁড়ি ভাঙচুর এবং একজন ইন্সপেক্টরকে মাটিতে ফেলে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে।

বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শফিক আমিন কাজল জানান, টিয়ারশেল বা অন্য কিছুর ধোঁয়ার ঝাঁঝে শ্বাসকষ্ট ও চোখ জ্বালাপোড়া নিয়ে বগুড়া ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৭ জন ছাত্রী ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে দুই ঘণ্টা ও অপর ২২ জনকে চার ঘণ্টা অবজারভেশনে রেখে অভিভাবকদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সবার অবস্থা ভালো।

খাগড়াছড়িঃ শহরের শাপলা চত্বর এলাকায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে শুরু করে ভাঙা ব্রিজ এলাকা পর্যন্ত সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে উভয়পক্ষ বাঁশ-লাঠি ও লোহার রড ব্যবহার করে। বিএনপি নেতাকর্মীরা সংঘবদ্ধ হয়ে আওয়ামী লীগের অফিসে হামলা চালালে জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক নূরুল আজমসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। পৌরসভা ভবনের জানালার কাচ, সিসিটিভিসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়। এ সময় ১০টি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। আতঙ্কে যানবাহন চলাচল ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এ ঘটনায় শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভুঁইয়া জানান, আমাদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। দলের নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে জমায়েত হলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এতে বিএনপি নেতা হোসেন মো. বাবুসহ ৫০ জনের বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছে। তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, বিএনপি আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে হামলা করেছে। হামলায় আমাদের ৫০-এর বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছে। সংঘর্ষ থামানোর জন্য পুলিশের সহায়তা চাইলে পুলিশ নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে। প্রশাসনও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণে পৌরসভায় হামলার ঘটনা ঘটেছে।

কিশোরগঞ্জ : পদযাত্রা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জ শহরের রথখোলা সড়ক থেকে আখড়াবাজার মোড় সড়ক পথ পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে দুই গণমাধ্যম কর্মীসহ অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়। গুরুদয়াল সরকারি কলেজ মাঠ থেকে শুরু হয়ে পদযাত্রা রথখোলা এলাকা পার হওয়ার সময় পুলিশের বাধার সম্মুখীন হয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে বিএনপির নেতাকর্মীরাও ইটপাটকেল ছোড়েন। পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় রথখোলা সড়ক থেকে আখড়াবাজার পর্যন্ত এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষ চলাকালে ইটের আঘাতে চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের জেলা প্রতিনিধি আলম ফয়সাল ও মানবজমিনের স্টাফ রিপোর্টার আশরাফুল ইসলাম এবং বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন।

ফেনী : শহরের জিরো পয়েন্ট এলাকায় পদযাত্রা ঘিরে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। থেমে থেমে চলা সংঘর্ষে ১০ জন সাংবাদিক এবং বিএনপির অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশও আহত হয়েছে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার ও সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলালের নেতৃত্বে প্রায় ২০ হাজার নেতাকর্মী শহরের ট্রাংক রোডের দাউদপুর ব্রিজসংলগ্ন স্থান থেকে পদযাত্রা শুরু করেন। ইসলামপুর রোড ও জিরো পয়েন্টে পৌঁছালে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পালটাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের ওপর বিএনপির নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। সংবাদ সংগ্রহের সময় মোহনা টিভির প্রতিনিধি তোফায়েল আহম্মদ নিলন, আকাশ, তানজিলা, মুস্তাফিজসহ ১০ সংবাদকর্মী আহত হন।

পুলিশ সুপার জাকির হাসান বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। যমুনা ব্যাংক শাখা, সাউস ইস্ট ব্যাংক শাখাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। পুলিশ নিরাপত্তার জন্য ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ সময় আমাদের কয়েকজন সদস্য আহত হন।

রাজবাড়ী : শহরের আজাদী ময়দান এলাকায় পদযাত্রা ঘিরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আবুল হোসেন গাজীসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন। বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে বড়পুল থেকে রাজবাড়ী বাজার পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে জেলা বিএনপি কার্যালয় থেকে বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট লিয়াকত আলী বাবু, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট কামরুল হাসান ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। পদযাত্রাটি প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

জয়পুরহাট : জয়পুরহাটে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে ধাওয়া, পালটাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় উভয় দলের নেতাকর্মী ও পুলিশসহ ৪৫ জন আহত হয়েছেন। উভয় দলকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারশেল ও শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছোড়ে। ১০-১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। জেলা হাসপাতালে কয়েকজনকে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত ছাত্রলীগ কর্মী ইফাতকে বগুড়ার শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। অপর দিকে ২৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে বিএনপি দাবি করে।

আরও খবর: জাতীয়