সারাদেশ

পশুর হাটে অতিরিক্ত টোল আদায়, ২০ হাজার টাকা জরিমানা

  রংপুর প্রতিনিধি ২৮ জুন ২০২৩ , ৬:১৮:১০ প্রিন্ট সংস্করণ

 

রংপুরে শেষ মুহূর্তে কোরবানির পশুর হাটগুলোতে সরকারি নিয়ম না মেনে অতিরিক্ত হাসিল (টোল) আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো হাটে রশিদ দেওয়া হলেও হাসিলের টাকা উল্লেখ করছেন না ইজারাদার নিয়োজিত রশিদ লেখকরা।

হাটে আসা লোকজনের অভিযোগ, প্রশাসনের তৎপরতা না থাকার সুযোগ নিয়ে সরকারি নিয়ম ভেঙে হাসিলের নামে সাধারণ ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে।

 

বুধবার (২৮ জুন) দুপুর থেকে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে রংপুর নগরীর ঐতিহ্যবাহী লালবাগ হাট ঘুরে দেখা গেছে হাসিলের নামে ক্রেতা-বিক্রেতাদের পকেট কাটার ফাঁদ। লালবাগ হাট নামে হলেও এবার এই হাট বসেছে পার্শ্ববর্তী কারমাইকেল কলেজের ইন্টারমিডিয়েট (উচ্চমাধ্যমিক) ভবনের সামনে। সেখানে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে কোরবানির গরু-ছাগল বিকিকিনি করতে দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

বৃষ্টিতেই অনেক মিনিট্রাক, ভটভটি, থ্রি-হুইলার ঢুকছে অস্থায়ী এই হাটের ভেতর। ভারি যানবাহন চলাচলে কারমাইকেল কলেজের মাঠ এবং রাস্তার বেহালদশা হলেও শেষ মুহূর্তে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে সেখানে। হাটে পুলিশ প্রশাসনের বুথ থাকলেও তৎপরতা না থাকায় ইজারাদার নিয়োজিত লেখকরা হাসিলের সঙ্গে ঈদ বোনাসের কথা বলে নিচ্ছেন অতিরিক্ত টাকা। আবার হাসিলের রশিদ দেওয়া হলেও উল্লেখ করা হচ্ছে না আদায়কৃত টাকার পরিমাণ। এতে দেখা যায় হাটটিতে ইজারাদার সরকারি নিয়ম ভেঙে সাধারণ ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা অতিরিক্ত আদায় করছেন।

লালবাগ হাটে ছাগল কিনে বাড়ি ফিরছিলেন সুলতান তালুকদার। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বৃষ্টিতে ভিজে কোরবানির জন্য একটা ছাগল কিনলাম। হাটের মাঠ এবং রাস্তার বেহাল দশা। জানি না সরকারি কলেজের মাঠ এবং রাস্তা নষ্ট করে কীভাবে এ হাটের অনুমতি দেওয়া হলো। আর যারা হাট বসিয়েছে তারা ‘হাসিল’ এর জন্য যে টাকা আদায় করছে তা রশিদে উল্লেখ করছে না। আমি একটা ছাগল কিনে ক্রেতা হিসেবে দিলাম ৫০০ টাকা আর বিক্রেতার কাছ থেকে নিল ২০০ টাকা, কিন্তু রশিদে তা লেখা নেই। বৃষ্টি এবং ভিড়ে বিষয়টির প্রতিবাদ আদায়কারীর কানেই ঢুকলো না।

 

একই অভিযোগ নগরীর মুলাটোল এলাকা থেকে গরু কিনতে আসা খন্দকার মোস্তফা সরওয়ারের। তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে হাটের অবস্থা খুবই খারাপ। কিন্তু গরু-ছাগলের দাম অনেক চড়া। প্রায় ছয় ঘণ্টা পুরো হাট ঘুরে তারপর একটা গরু কিনতে পেরেছি। ইজারাদারের লোকেরা হাসিলের জন্য আমার কাছে ১ হাজার এবং বিক্রেতার কাছ থেকে ৫০০ টাকা নিয়েছে তারা। হাতে একটা রশিদ ধরিয়ে দিয়েছে কিন্তু টাকার অংক নেই।

রবিউল ইসলাম নামে একজন ছাগল বিক্রেতা বলেন, যার হাতে দড়ি তাকেই হাসিলের কাগজ সঙ্গে রাখতে হবে। আমি একটা ছাগল বিক্রি করতে এসে ২০০ টাকা দিলাম, কোনো প্রমাণ নেই। কার কাছে বিচার দিব, কে আমার কথা শুনবে। হাটে পুলিশ আছে, কিন্তু তাদের কোনো তৎপরতা নেই।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইজারাদার নিযুক্ত লেখকরা কোনো উত্তর দিতে রাজি হননি। তারা ইজারাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। কিন্তু হাটের কন্ট্রোল রুমে গিয়ে ইজারাদারকে পাওয়া যায়নি। সেখানে থাকা একজন নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, রশিদে হাসিলের অংক লেখা হয় না, এটাই তাদের নিয়ম।

এদিকে গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ি হাটে সরকারি নিয়ম না মেনে কোরবানির গরুর হাসিল (টোল) আদায় করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ইজারাদারকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

বেতগাড়ি হাটে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাটের ইজারাদাররা গরুর ক্রেতার কাছ থেকে ১ হাজার টাকা এবং বিক্রেতার কাছ থেকে ৫০০ টাকা হাসিল আদায় করছেন। হাটে টানানো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের নির্ধারিত টোলে দেখা যায়- শুধু ক্রেতার কাছ থেকে ৫০০ টাকা নেওয়ার কথা। কিন্তু ইজারাদার তা না মেনে অতিরিক্ত ১ হাজার টাকা আদায় করছেন। হাটটিতে প্রতি হাটে কমবেশি ২ হাজার করে গরু বিক্রি হয়। এতে করে ওই হাটে প্রতি হাটবারে ইজারাদার সরকারি নিয়ম ভেঙে সাধারণ ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা অতিরিক্ত আদায় করছেন।

ক্রেতা-বিক্রেতাদের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই হাটে গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ তামান্নার নির্দেশে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় হাটের ইজারাদারকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন তিনি।

এ ব্যাপারে গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ তামান্না জানান, গণমাধ্যমে খবর দেখে আমরা সেখানে অভিযান পরিচালনা করি। যেহেতু আমাদের লোকবল সংকট, সে কারণে ওই হাটে ভ্রাম্যমাণ আদালত ছিল না। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে সেখানে অতিরিক্ত হাসিল নেওয়ার প্রমাণ মেলে। পরে জরিমানা ও সতর্ক করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, নির্ধারিত টোলের বাইরে ক্রেতার কাছ থেকে বেশি এবং বিক্রেতার কাছ থেকে হাসিল নেওয়ার কোনো বিধান নেই। অনিয়ম পেলেই আমরা ব্যবস্থা নেবো। ইতোমধ্যেই আমরা হাট এলাকায় মাইকিং করেছি, এ বিষয়ে ইজারাদারদেরকেও সতর্ক করেছি।

আরও খবর: সারাদেশ