রাজনীতি

নির্বাচন নিয়ে আ.লীগ-জাপায় এক সিদ্ধান্তে

  প্রতিনিধি ৮ ডিসেম্বর ২০২৩ , ৪:৪৮:১৭ প্রিন্ট সংস্করণ

 

 

২০০৮ সাল থেকে টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগের বড় রাজনৈতিক মিত্র জাতীয় পার্টি। তবে আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যার যার অবস্থান থেকে অংশ নিচ্ছে দল দুটি। যদিও শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আসন সমঝোতা করেই জাতীয় পার্টি ভোটের মাঠে থাকবে বলে আলোচনা রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে গত বুধবার রাতে জাপার শীর্ষ দুই নেতার সঙ্গে আওয়ামী লীগের বৈঠক হয়েছে, যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে সৃষ্টি হয় নানা গুঞ্জন।

আলোচিত ওই বৈঠক নিয়ে দুপক্ষই গতকাল বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিয়েছে। জাতীয় পার্টি বলছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন বণ্টন প্রয়োজন নেই। আর আসন সমঝোতা নয়, অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে করণীয় সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সব মিলিয়ে বুধবারের বৈঠক নিয়ে দুই দল প্রায় অভিন্ন সুরে কথা বলেছে।

আসন ভাগাভাগির আলোচনা হয়নি, জানালেন ওবায়দুল কাদের: আসন ভাগাভাগি নয়, জাতীয় পার্টির সঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি দল হিসেবে অনেক কথাই বলতে পারে। রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেদের শক্তিমত্তা প্রদর্শন করতে তারা তো

চাইবেই। বাস্তবে কী হবে সেটি পরে দেখা যাবে। চাইতে তো কোনো দোষ নেই, আশা বড় থাকাই ভালো। আসন ভাগাভাগির বিষয়টা আমি জানি না। আসন ভাগাভাগি হয়েছে, এমন কোনো আলোচনাও হয়নি। আমরা রাজনৈতিক আলোচনা করেছি।

জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনা নিয়ে এত লুকোচুরি কেন? এ প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, লুকোচুরির বিষয় নয়। এটা নিয়ে এত ঢাকঢোল পেটানোর কী আছে? নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমন্বয় থাকা দরকার। কারণ, নির্বাচনবিরোধী শক্তিরা যে অপরাজনীতি করছে, সেটি মোকাবিলার জন্য আমাদের মধ্যে একটা সমন্বয় করা দরকার। কারণ, নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ করা, নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করা, নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করার অঙ্গীকার আমাদের রয়েছে। এজন্য আমরা আলাপ-আলোচনা করছি। এখানে লুকোচুরির কোনো ব্যাপার নয়। আমরা রাজনৈতিক বিষয়ে কথা বলেছি।

এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক ও উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান উপস্থিত ছিলেন।

আসন বণ্টন প্রয়োজন মনে করে না জাপা: রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে গতকাল (বুধবার) রাতে আমাদের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আসন বণ্টন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। আসন বণ্টনের খুব একটা প্রয়োজনও নেই।

জাপা মহাসচিব বলেন, নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে কীভাবে করা যায়, ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেন আসেন, ভোটাররা যেন ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সেসব বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনটা যেন সুষ্ঠু হয়, আওয়ামী লীগের ইতিবাচক একটা মনোভাব দেখা গেছে আলোচনায়।

তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে

উপ-নির্বাচন থেকে শুরু করে বিভিন্ন নির্বাচনে আমাদের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। এজন্য একটা দ্বিধা এখনো রয়ে গেছে।

মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, গতকালের বৈঠকে আমরা কোনো আসন বণ্টনের কথা বলিনি। আমরা মনে করি, ভোটাররা যদি ভোটকেন্দ্রে আসে, ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে তাহলে ’৯১ সালের মতো জাতীয় পার্টির একটা নীরব বিপ্লব হয়ে যেতে পারে। গতকালের বৈঠকে আমরা আওয়ামী লীগকে বলেছি, তারা যেন নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করে, যেন ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে ফিরে আসে। তারা আমাদের কথা দিয়েছেন, যে কোনো মূল্যে তারা নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করবেন। তাদের আশ্বাসে আমরা আশ্বস্ত হয়েছি এবং বিশ্বাস করেছি। তবে সামনের দিনগুলো আমরা পর্যবেক্ষণ করব।

নির্বাচন থেকে জাতীয় পার্টি সরে যাচ্ছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচন বর্জন করার ইতিহাস জাতীয় পার্টির কম। শুধু একটা নির্বাচন এখন পর্যন্ত বর্জন করেছে। তবে এমন নির্বাচন, যদি কোনোভাবে অংশগ্রহণ করা যাবে না, সেটা অন্য কথা। তবে আওয়ামী লীগের কথায় আমরা আশ্বস্ত।

 

আরও খবর: রাজনীতি